ইমাম হোসাইন (আঃ)-এর ছাপান্ন বছরের জীবনের প্রতি সংক্ষিপ্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে আমরা দেখতে পাই যে তাঁর সারাটা জীবন ধার্মিকতা, বন্দেগী ও মোহাম্মাদী রেসালত এবং আমাদের দৃষ্টি ও উপলব্ধির বহু উর্দ্ধের বিষয়ের প্রচারের মধ্যে অতিবাহিত হয়েছে। এখন তাঁর জীবনের বিভিন্ন অংশ থেকে অল্প কিছু আলোচনা আপনাদের সামনে পেশ করছি : তিনি অত্যন্ত মনোযোগের সাথে নামাজ আদায় করতেন ,আল্লাহর গভীর রাথে গোপন সংলাপে রত হতেন ,কোরআন তেলাওয়াত ,দোয়া ও ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করতেন। কখনো তিনি দিবা রাত্রিতে কয়েকশ রাকাত নামাজ আদায় করতেন। আকদুল ফারিদ, ৩য় খণ্ড ,পৃ. ১৪৩। এমন কি তাঁর জীবনের শেষ রাত্রিতেও তিনি দোয়া প্রার্থনা থেকে বিরত থাকেন নি। আমরা ইতিহাসে দেখতে পাই যে, তিনি কারবালাতে শত্রুদের কাছ থেকে সময় ও সুযোগ চেয়েছেন যেন তাঁর মহান প্রভুর সাথে একাকী প্রার্থনায় বসতে পারেন। তিনি বলেন : আল্লাহ ভাল জানেন যে, আমি নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, অত্যধিক দোয়া-মুনাজাত ও ইস্তিগফারকে কত ভালবাসি।( ইরশাদুল মুফিদ, পৃ. ২১৪।) তিনি অনেক বার পদব্রজে কা’ বা গৃহে ছুটে গেছেন এবং হজব্রত পালন করেছেন। সজাগ ও সর্বশক্তিমান। প্রভু আমার! আমি তোমার দিকে মুখ ফিরিয়েছি এবং তোমার প্রতিপালকত্বের সাক্ষ্য দিচ্ছি। আমি স্বীকার করছি যে তুমি আমার প্রতিপালক আর আমাকে তোমার কাছেই ফিরে যেতে হবে। আমার অস্তিত্বের পূর্বেই তুমি আমাকে নেয়ামত প্রদান করতে আরম্ভ করেছ। আমাকে তুমি মাটি থেকে সৃষ্টি করেছো…। অতঃপর আমাকে সুস্থ ও ত্রুটিহীন দেহে তোমার পক্ষ থেকে পূর্বনির্ধারিত হেদায়েতসহ পৃথিবীতে এনেছো। আমাকে শিশু অবস্থায় তুমি হেফাজত করেছো এবং বিভিন্ন খাদ্যের মধ্যে আমার জন্যে সুপেয় দুধের ব্যবস্থা করেছো। আমার লালন-পালনকারীদের অন্তরে তুমি আমার মহব্বত ঢেলে দিয়েছো এবং আমার প্রশিক্ষণের জন্যে তুমি সদয় মায়ের ব্যবস্থা করেছো। আমাকে তুমি জ্বিনের গোপন অনিষ্ট ও অত্যাচার থেকে রক্ষা করেছো আর অপূর্ণতা এবং ত্রুটি থেকে হেফাজতে রেখেছো। আর তাই তুমি সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী। হে মহিমাময় ,অতিশয় দয়ালু। কথা বলার দিন পর্যন্ত তুমি আমাকে তোমার পরিপূর্ণ নেয়ামত দানে ধন্য করেছো এবং আমার অস্তিত্ব পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত তুমি সর্বদা আমাকে লালন করেছো। ইলহামের (বাতেনী জ্ঞানের) মাধ্যমে আমাকে তোমার পরিচয় দান করে আমার প্রতি তোমার হুজ্জাত (দলিল) পরিপূর্ণ করেছো। তুমি তোমার আশ্চর্যজনক হেকমতের মাধ্যমে আমাকে বিস্মিত করেছো এবং আসমান ও যমীনে সৃষ্ট তোমার বিরল সৃষ্টির মাধ্যমে আমাকে জাগ্রত করেছো। তুমি আমাকে তোমার শোকর আদায় এবং তোমার স্মরণ করার জন্যে সজাগ করেছো। তোমার অনুসরণ ও ইবাদত আমার জন্যে ফরজ করেছো। তোমার নবী রাসূলগণের আনীত বিষয়সমূহ সম্পর্কে আমাকে জ্ঞান দান করেছো। তুমি যে কাজে সন্তুষ্ট হও সে কাজ আমার জন্যে সহজ করে দিয়েছো। তুমি এ সকল পর্যায়ে তোমার দয়া ও সাহায্য দ্বারা আমাকে ধন্য করেছো। ইলাহ্ (উপাস্য) আমার ,তুমি আমাকে বিভিন্ন প্রকার নেয়ামত না দিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে পারো নি। তোমার চিরস্থায়ী দয়া ও মহান দানের মাধ্যমে বিভিন্ন রকম খাবার ,পানীয় দ্রব্য ও পরিধেয় বস্ত্রের ব্যবস্থা করেছো। যখন তুমি তোমার সকল প্রকার অনুগ্রহ পরিপূর্ণভাবে দান করেছো আর বালা-মুসিবত দূর করেছো তখন আমার অজ্ঞতা এবং ঔদ্ধত্য তোমাকে তোমার নৈকট্যের দিকে আমাকে পরিচালিত করতে বাধা দেয়নি বরং যা তোমার নৈকট্য লাভের জন্যে প্রয়োজন তা দান করে সফলতার প্রান্তে পৌঁছে দিয়েছো। হে আমার রব! তোমার কয়টা অনুগ্রহ গণনা করবো এবং স্মরণ করবো ?তোমার কোন দানের জন্যে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করবো ?যখন তোমার দান কোন গণনাকারীই গণনা করে শেষ করতে পারবে না এবং সকল হিসেবী সে ব্যাপারে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জনে ব্যর্থ। তুমি আমার কাছ থেকে যে সকল বিপদ ও কষ্ট দূর করেছো তা আমার নিকট প্রকাশিত তোমার দেয়া নেয়ামত ও সুস্থতার চেয়েও অনেক গুণ বেশী। প্রভু আমার! আমি আমার ঈমানের সত্যতার সাক্ষী দিয়ে বলছি যদি ধরে নেয়া হয় আমি সকল সময় এবং সকল যুগে জীবিত থাকবো আর তোমার একটা নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের চেষ্টা করবো তারপরও তার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না। তুমি যদি আমাকে অনুগ্রহ কর তাহলেই শুধু সম্ভব ,কিন্তু সেক্ষেত্রে আবার ঐ অনুগ্রহের শোকর আদায় প্রয়োজন হয়ে পড়বে…। হে আমার প্রতিপালক! আমাকে এমন অবস্থা দান কর যে আমি যেন তোমাকে এমন ভয় করি যে মনে হয় আমি তোমাকে দেখছি। আমাকে পরহেজগারিতা ও তাকওয়া দানে সৌভাগ্যবান কর এবং পাপ ও গুনাহ্ এবং তোমার নির্দেশ অমান্য করার কারণে আমাকে হতভাগ্য করো না। হে আমার ইলাহ! তুমি আমার অস্তিত্বে অমুখাপেক্ষিতা, আমার অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস, আমার কাজে ও আমলে নিষ্ঠা ও একাগ্রতা ,নুর ও আলো আমার নয়নে, ধর্মের ক্ষেত্রে অর্ন্তদৃষ্টি ও সচেতনতা দাও এবং আমাকে আমার দেহের অঙ্গ-প্রতঙ্গ দ্বারা উপকৃত কর। হে আমার উপাস্য, আমি তোমার অনুগ্রহ ও মহামূল্যবান দানসমূহকে গণনা করতে চাইলেও গণনা করতে পারবো না। হে আমার প্রভ! তুমিই তো আমাকে দয়া করেছো। তুমিই তো অনুগ্রহ করেছো। তুমিই তো করুণা করেছো। তুমিই তো আমার সাথে সম্মানজনক ব্যবহার করেছো। তুমিই তো তোমার দান পরিপূর্ণতায় পৌছিয়েছো। তুমিই তো রুজি দান করেছো। তুমিই তো ভাল কাজের তৌফিক দিয়েছো। তুমিই তো আমাকে প্রচুর দান করেছো। তুমিই তো আমার প্রয়োজন মিটিয়েছো। তুমিই তো আমাকে পুঁজি দান করেছো। তুমিই তো আমাকে আশ্রয় দিয়েছো। তুমিই তো আমার দুশ্চিন্তা দূর করেছো। তুমিই তো আমাদের হেদায়াত করেছো। তুমিই তো আমাকে বিপদ-আপদ ও পদস্খলন থেকে রক্ষা করেছো। তুমিই তো আমার অন্যায়কে ঢেকে রেখেছো। তুমিই তো আমাদেরকে ক্ষমা করেছো। তুমিই তো আমাদেরকে মাফ করে দিয়েছো। তুমিই তো আমাদেরকে সাহায্য করেছো। তুমিই তো আমাদেরকে শক্তি দিয়েছো। তুমিই তো আমাদেরকে শক্তি দিয়ে সাহায্য করেছো। তুমিই তো আমাদের রোগ মুক্তি দান করেছো। তুমিই তো আমাদের সুস্বাস্থ্য দান করেছো। তুমিই তো আমাদের সম্মানিত করেছো। تَبَارَكْتَ رَبِّى وَ تَعَالَيْتَ فَلَكَ اْلْحَمْدُ دَائِمًا وَ لَكَ اْلْشُّكْرُ وَاصِبًا “হে আমার প্রতিপালক, মহত্ত্ব ও বিরাটত্ব শুধু তোমারই ভূষণ। সকল প্রশংসা সর্বদা তোমারই জন্যে এবং সকল শোকর সকল ক্ষেত্রে শুধুমাত্র তোমারি।” “হে আমার সৃষ্টিকর্তা! আমি আমার অবাধ্যতার স্বীকার করছি ,তুমি আমাকে ক্ষমা কর এবং আমার সকল পাপ মোচন করে দাও।(উপরোক্ত দোয়াটি আল্লামা সাইয়্যেদ ইবনে তাউস ‘ইকবাল’ নামক গ্রন্থের পৃ. ৩৩৯-৩৫০ ,বালাদুল আমিন ; কাফআমি ,পৃ. ২৫১-২৫৮, বিহারুল আনওয়ার, ৯৮তম খণ্ড) সেদিন হোসাইন ইবন আলী এই দোয়া পাঠে আমাদের অন্তরগুলোকে এমনভাবে আল্লাহর দিকে আকৃষ্ট করেছিলেন যে ,অগণিত জনতা ক্রন্দনে ফেটে পড়ে। তারা সকলে ইমামের দোয়ার সাথে সাথে আমিন বলে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলো। হযরত হোসাইন ইবনে আলীর ব্যক্তিত্ব এতই উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন, আড়ম্বরপূর্ণ এবং মানুষের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ছিল যে, যখন তিনি তাঁর ভাই ইমাম হাসান (আঃ)-এর সাথে পদব্রজে হজ্বে গমন করতেন তখন সকল মহান ব্যক্তিবর্গ এবং ইসলামী ব্যক্তিত্বসমূহ তাদের সম্মানে বাহন থেকে নিচে নেমে আসতেন আর তাদের সাথে পথ চলা শুরু করতেন। তাঁর জীবন এবং মৃত্যু (শাহাদাত) সব কিছুই মানব জাতির মর্যাদা ও আধ্যাত্মিকতাকে সমুন্নত করেছে। তাঁর পবিত্র মুখ থেকে নিঃসৃত জীবন গড়ার হৃদয়গ্রাহী কিছু বাণী আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি। এক: তিনি বলেন : أَلْنَّاسُ عَبِيْدُ اْلْدُّنْيَا وَاْلْدِيْنُ لَعِقٌ عَلَى أَلْسِنَتِهِمْ يَحُوْطُوْنَهُ مَا
মৃত্তিকা কিম্বা মৃত্তিকাজাত বস্তুর উপর সেজদা
পবিত্র ইসলামের দৃষ্টিতে মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে সেজদা করা সর্বাপেক্ষা গুরুত্ববহ ইবাদত কিম্বা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত সমূহের অন্তর্ভূক্ত রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে,মানুষ অন্য যে কোন অবস্থা অপেক্ষা সেজদাবনত অবস্থাতে আল্লাহর তায়ালার নিকটতম। মহামানবগণ বিশেষত: রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও আহলে বাইতের পবিত্র ইমামগণ (আঃ) দীর্ঘায়িত সেজদাবনত হতেন। সর্বশক্তিমান আল্লাহর উদ্দেশ্যে দীর্ঘায়িত সেজদা মানুষের মন ও আত্মাকে প্রশান্ত করে। সেজদা প্রতিপালকের দরবারে বন্দেগী ও উপাসনার সর্বোৎকৃষ্ট মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত। আর এ কারণেই হয়তো প্রতি এক রাকাত নামাযে দু’টি সেজদা আদায়ের আদেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন সূরাতে ওয়াজীব ও মুস্তাহাব সেজদা সমূহ এ বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত বহণ করে। সেজদা র ন্যায় মানুষের কোন কাজই শয়তানকে অধিক ব্যথিত করে না। অপর একটি হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে,রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তার এক ঘনিষ্ঠ সাহাবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, و إذا أردت أن یحشرک الله معی یوم القیامة فأطل السجود بین یدی الله الواحد القهّار “যদি চাও কিয়ামতের দিবসে আমার সাথে একত্রে অবস্থান করবে, তাহলে মহান আল্লাহর উদ্দেশ্য দীর্ঘায়িত সেজদা করবে।” আমরা সুদৃঢ় আকিদা পোষণ করি যে, সেজদা শুধুমাত্র আল্লাহর এক ও অদ্বিতীয় স্বত্তা ব্যতিত অন্য কারও জন্য মোটেও জায়েয নয়। কেননা সেজদা বন্দেগী ও উপাসনার চুড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। আর উপাসনা বা ইবাদত একমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্য নির্ধারিত। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, “আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে সেজদাবনত হয়।” আরবী ব্যাকরণের নিয়ম অনুযায়ী এ আয়াতে “আল্লাহ” শব্দটি বাক্যর শুরুতে বর্ণিত হওয়াতে তা হাস্র বা শুধুমাত্র অর্থে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ সেজদা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত। এছাড়া সূরা আরাফের ২০৬ নং আয়াতে বর্ণিত ( و له یسجدون ) শব্দটি অনুরূপ অর্থের প্রতি ইঙ্গিত বহণ করে। বস্তুতঃ সেজদা -বিনয়ের চুড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ;যা শুধুমাত্র বিশ্বস্রষ্টার জন্য নির্ধারিত। যদি অন্য কোন ব্যক্তি বা বস্তুর জন্য সেজদা করা হয়.তাহলে তাকে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা হবে;যা আদৌ সঠিক নয় এবং শিরক হিসেবে পরিগণিত। তওহীদ বা একত্ববাদের অন্যতম অর্থ হচ্ছে ইবাদতের ক্ষেত্রে একত্ববাদের বিশ্বাস। অর্থাৎ ইবাদত কেবলমাত্র এক ও অদ্বিতীয় প্রতিপালকের জন্য প্রযোজ্য। আর এ বিশ্বাস ছাড়া একত্ববাদের অর্থ পরিপূর্ণতা লাভ করবে না। অন্যভাবে বলা যায়:আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারও উপাসনা শিরকের পরিচয়। আর সেজদা হচ্ছে সর্বত্তোম উপাসনা। সতরাং সেজদা একমাত্র আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারও জন্য আদৌ জায়েয নয়। কিন্তু হযরত আদমের (আঃ) জন্য ফেরেস্তারা যে সেজদা (যা পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে বর্ণিত হয়েছে) করেছেন তা খ্যাতনামা মুফাসসীরগণের বর্ণনানুসারে সম্মানসূচক সেজদা ই হিসেবে পরিগণিত। অর্থাৎ এ সেজদা হযরত আদমের (আঃ) প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য করা হয়েছে,না তাকে উপাসনার উদ্দেশ্যে। যেহেতু এ সেজদা ’র আদেশদাতা ছিলেন স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা,সেহেতু তার নিদের্শ পালন কিম্বা আনুগত্য প্রকাশের নিমিত্তে ফেরেস্তাবর্গ সেজদা করেছেন। এ ধরণের সেজদা কে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা পোষণের সেজদাহ ও বলা যেতে পারে। অনুরূপভাবে হযরত ইউসূফের (আঃ) উদ্দেশ্যে হযরত ইয়াকুব (আঃ), তার সন্তান ও স্ত্রীবর্গের সেজদা ও একই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, “তারা সবাই তার (ইউসূফের) সামনে সেজদাবনত হলেন।” অর্থাৎ এ ধরণের সেজদা ও সম্মান প্রদর্শনের নিমিত্তে কিম্বা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে শিয়া মাযহাবে অন্যতম প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থ “ওসায়েলুশ শিয়া”-তে নামাযের সেজদা অধ্যায়ে ‘আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারও জন্য সেজদা জায়েয নয়’শীর্ষক একটি শিরোনাম রয়েছে। সেখানে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও মাসুম ইমামগণ (আঃ) হতে সাতটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। সুবিজ্ঞ পাঠক সমাজের প্রতি বিশেষ অনুরোধ এ বিষয়টি ভালভাবে স্মরণ রাখবেন, কারণ আগামী আলোচনাতে আমরা এগুলোর উপর আলোকপাত করব। কিসের উপর সেজদা করা জায়েয? রাসূলের (সাঃ) পবিত্র আহলে বাইতের (আঃ) অনুসারীরা ঐকমত্যের ভিত্তিতে আকিদা পোষণ করে যে,সেজদা অবশ্যই মৃত্তিকাজাত বস্তুর উপর হতে হবে। তবে শর্ত হচ্ছে আহার্য ও পরিধেয় কো বস্তু যেন না হয়;যেমন:গাছের পাতা,কাষ্ঠ,উদ্ভিজ্জ বস্তু দিয়ে তৈরী মাদুর কিম্বা এ ধরণের কোন মৃত্তিকাজাত বস্তুর উপর সেজদা করা জায়েয। পক্ষান্তরে সুন্নী মাযহবের ফিকাহবিদরা আকিদা পোষণ করেন যে,সব ধরণের বস্তুর উপর সেজদা করা জায়েয অবশ্য তাদের মধ্যে কেউ কেউ জামার অস্তিন কিম্বা পাগড়ির কোন অংশ বিশেষের উপর সেজদা করা কে জায়েয মনে করেন না। যাই হোক,আহলে বাইতের (আঃ) অনুসারীরা এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও মাসুম ইমামগণ (আঃ) হতে প্রসিদ্ধ হাদীস বর্ণিত হওয়াতে এবং বিশিষ্ট সাহাবীবর্গের আমলের কারণে উক্ত আকিদার প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করে থাকেন। এজন্য হজ্বের মৌসুমে তারা মসজিদুল হারাম মসজিদে নববীর যে সব স্থানে কার্পেট বিছানো থাকে,সে সব স্থানে সেজদা করা হতে বিরত থাকে। বরং তারা কার্পেট বিহীন স্থানগুলোতে নামাজ আদায় করে এবং পাথরের উপর সেজদা করে। কেউ কেউ অবার সাথে ছোট মাদুর রাখে এবং তার উপর সেজদা করে। ইরান,ইরাক এবং শিয়া অধ্যুষিত অঞ্চল সমূহের যে সব মসজিদে কার্পেট বিছানো থাকে,সেখানে মাটির তৈরি সেজদা গাহ’র (সেজদা র স্থান) রাখা হয় এবং তার উপর কপাল রেখে সেজদা করা হয়। আর ‘এভাবে মানুষের শরীরের সবচেয়ে সম্মানজনক অঙ্গ তথা কপালকে মাটির উপর রেখে সর্ব শক্তিমান আল্লাহর দরবারে চুড়ান্ত বিনয়ী ও আনুগত্য প্রকাশ করা হয়। কখনও কখনও এ সেজদা গাহ কে আল্লাহর পথে প্রাণ বিসর্জনকারী শহীদদের শাহাদত স্থলের মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়। যাতে আল্লাহর পথে তাদের আত্মত্যাগ ও উৎসর্গের কথা স্মরণে আসে এবং গভীর একাগ্রতার সাথে নামায আদায় করা সম্ভব হয়। অবশ্য এক্ষেত্রে কারবালার মহান শহীদগণের শাহাদত স্থলের তুরবাত (পবিত্র মাটি) দিয়ে উক্ত সেজদা গাহ তৈরীর উপর তুলনামূলক বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। কিন্তু তাই বলে শুধুমাত্র তুরবাত কিম্বা সাধারণ মাটি দিয়ে তৈরী সেজদা ড়াহর উপরেই সেজদা করা হয় এমনটি নয় বরং যেভাবে পূর্বে উল্লেখ করেছি যে,মসজিদের পাথর কিম্বা ছোট কাঠের টুকরার উপরও সেজদা করা হয়। (অনুধাবনযোগ্য) আহলে বাইতের (আঃ) অনুসারীদের নিকট মৃত্তিকা ও মৃত্তিকাজাত বস্তুর উপর সেজদা ওয়াজিব হওয়ার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত অকাট্য দলিল ও প্রমাণাদি রয়েছে। যেমন:রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হতে বর্ণিত সহীহ হাদীস সমূহ,সাহাবীবর্গের অনুসৃত পন্থা এবং মাসুম ইমামগণের (আঃ) রেওয়ায়েত সমূহ। শিঘ্রই আমরা এগুলোর উপর বিস্তারিত আলোচনা ও পর্যালোচনা করব। এতদসত্বেও অবাক মনে হয় যে, কেন সুন্নী মাযহাবের কিছু ভাই আমাদের এ আকিদাকে নিয়ে অহেতুক সমালোচনা ও বিতর্কের ঝড় তুলে থাকেন। তারা কখনও এটাকে বিদআত আবার কখনও শিরক ও মাটি পূজার সাথেও তুলনা করেন। এমতাবস্থায় যদি আমরা তাদের মাযহাবের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থাবলী হতে প্রমাণ করি যে, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মৃত্তিকা কিম্বা মৃত্তিকাজাত বস্তুর উপর সেজদা করতেন; তদুপরি কি তারা আমাদের এ কাজকে বিদআত বলে প্রচার করবেন?! আমরা যদি প্রমাণ করি যে, রাসূলের (সাঃ) অনেক একনিষ্ঠ সাহাবী যেমন:হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী (রা.) প্রচন্ড রোদ্রের তাপে যখন নুড়ি পাথরগুলো উত্তপ্ত হয়ে যেত,তখন সেগুলোকে এক হাত হতে অপর হাতে নিয়ে ঠান্ডা করতেন। যাতে এগুলোর উপর কপাল রেখে সেজদা করতে পারেন। এমতাবস্থায় তারা কী হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারীর (রা.) এ কাজকে বিদআত কিম্বা নুড়ি-পাথর পূজার সাথে তুলনা করবেন? যদি কেউ মাদুরের উপর সেজদা করে কিম্বা মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর মেঝের উপর নামাজ আদায় করে
ইমাম হোসাইন (আ.)
বিস্ময়কর মহামনব শিশু হিজরীর ৩ রা শাবানের ইশকে মাহবুবে এলাহির চমকিত চাঁদ মোবারকবাদ। অসীম শুন্যতায় কেউ নেই,কিছু নেই আপন প্রকাশের গোপন জ্বালা চারিদিকে সৃস্টির ফিসফাস গুঞ্জন আবির্ভাব হয় সৃস্টির স্বত্বার। অনস্তিত্বে অস্তিত্বের; জগতবাসি দেখে এক পবিত্র মহা আবির্ভাব অভিবাদন- হে ইমাম হোসাইন(আ:) অভিবাসন হে ইমাম হুসাইন (আ:) অভিনন্দন- হে ইমাম হুসাইন (আ:) *মওলায়ে কায়েনাত মওলা আলী (আঃ) এর কলিজার টুকরো, মালিকায়ে জান্নাত নবী নন্দিনী মা ফাতেমা তুজ যাহে্রা (সাঃআঃ) এর চোখের মণি শাহেনশাহে কারিমে কারবালা বিশ্বমানবতার মুক্তিকামী মহান পুরুষ,সাইয়্যেদুস শুহাদা “মওলা ইমাম হোসাইন আলাইহি ওয়া সাল্লাম” এর পবিত্র আবির্ভাব দিবস উপলক্ষে সবাইকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন,ও মোবারকবাদ। *হিজরি চতুর্থ সনের তৃতীয় শা’বান মানবজাতি ও বিশেষ করে, ইসলামের ইতিহাসের এক অনন্য ও অফুরন্ত খুশির দিন। কারণ, এই দিনে আবির্ভাব হয়েছিলেন প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র প্রাণপ্রিয় দ্বিতীয় নাতি তথা বেহেশতী নারীদের মালিক মা ফাতিমা (সা.আ,) ও বিশ্বাসীদের নেতা তথা আমীরুল মুমিনিন মওলা আলী (আ.)’র সুযোগ্য দ্বিতীয় পুত্র এবং ইসলামের চরম দূর্দিনের ত্রাণকর্তা ও শহীদদের নেতা মওলা ইমাম হুসাইন (আ.)। **সংক্ষিপ্ত পরিচিতি — *পূর্ণ নাম-আল হ়োসাইন ʾইবনে ʿআলী ʾইবনে আবী ত়ালিব(আ:) *বংশ-আহল আল-বাইত/বনু হাশিম (আলীয়) *রাজবংশ-কুরাইশ *পিতাʿ-শেরে খোদা হায়দারে কাররার মদিনাতুল ইলম মওলা আলী ʾইবনে আবী ত়ালিব(আ:) *মাতা-আল বতুল সৈয়্যেদাতুন নেসা হযরত ফাতিমাতুয যাহরা (সা:আ:)। বিনতে মুহ়ম্মদ(স:) *কুনিয়াত- (পারিবারিক নাম) আবা আবদিল্লাহ। লকব শরীফ (উপাধি)-সৈয়দ, সাইয়্যেদুশ শোহাদা, শহীদে আকবর, সিবতে আসগর। *আগমন (আবির্ভাব/বেলাদত শরীফ): ৩ শাবান ৪ হিজরি (জানুয়ারী ৬২৬ খ্রি.)। বৃহস্পতিবার। *ধর্ম-ইসলাম *শাহাদাতের কারণ-কারবালার যুদ্ধে উমাইয়া সেনাবাহিনী ইয়াজিদ কর্তৃক শিরশ্ছেদ *সমাধি-ইমাম হোসেনের(আ:) মাজার মোবারক, কারবালা প্রদেশ, ইরাক ৩২°৩৬′৫৯″ উত্তর ৪৪°১′৫৬.২৯″ পূর্বস্মৃতিস্তম্ভ ইরাক, সিরিয়া, মিশর *আত্মীয়-মুহ়ম্মদ ইবনে ʿআব্দুল্লাহ ﷺ (পিতামহ) হ়াসান ʾইবনে ʿআলী(আ:) (ভাই) বোন জয়নব(সা:আ:) বিনতে আলি (আ:) *সন্তান-আলী ইবনে হোসাইন °জয়নুল আবিদীন(আ:) °সকিনা(সা:আ:) °আলী আকবর ইবনে হোসাইন(আ:) °আলি আসগর ইবনে হুসাইন(আ:) °ফাতিমা আস-সুগরা(সা:আ:) *৩ শাবান ৪ হিজরিতে মদিনা শহরে মসজিদে নব্বীর নিকটবর্তী হুজরা খানায় (ছোট্ট কুঠির ঘরে) জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ রমণী ফাতিমাতুয যাহরার(সা:আ:) ওহী অবতরণের গৃহে মওলা ইমাম হুসাইন (আঃ) মানব আকারে পৃথিবীতে আগমন করেন। *যখন তাঁর(আ:) আগমনি সংবাদ ইসলামের সম্মানিত নবি ও রাসূল (সা.)-এর কর্ণগোচর হয় তখন তিনি মওলা আলী(আ:) ও মা ফাতেমার(সা:আ:) গৃহে আগমন করেন। *ইমাম হুসাইন (আ.)’র আবির্ভাব লগ্নে তাঁর (আ:)মায়ের(সা:আ:) সেবা করছিলেন মহানবী (সা.)’র ফুপু সাফিয়া বিনতে আবদুল মোত্তালিব। রাসূল(স:) সে সময় তাঁর ফুপুর কাছে এসে বলেন–, “–হে ফুপু, আমার ছেলেকে আমার কাছে আনুন-“। *তখন সাফিয়া বললেন–, “–আমি তাঁকে এখনও পবিত্র করিনি–“। *প্রিয়নবী (সা.) বললেন–, “–তাঁকে তুমি পবিত্র করবে? বরং আল্লাহই তাঁকে পরিষ্কার ও পবিত্র করেছেন–“। *ইমাম হুসাইন (আ.)’র আগমনের পর তাঁর(আ:)ডান কানে আজান ও বাম কানে ইক্বামত পাঠ করেছিলেন স্বয়ং মহানবী (সা.)। *মহান আল্লাহর নির্দেশে তিনি এই মহামনব শিশুর নাম রাখেন হুসাইন। এ শব্দের অর্থ সুন্দর, সৎ, ভালো ইত্যাদি। তাঁর সৌভাগ্যময় জন্মের প্রথম অথবা সপ্তম দিনে ওহী অবতীর্ণকারী হযরত জিবরাইল (আ.) অবতীর্ণ হয়ে বলেন। “–হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর সালাম আপনার জন্যে প্রেরিত হোক। আপনি এই নবজাত শিশুর নাম হযরত হারুনের কনিষ্ঠ পুত্র ‘শুবাইর”-যা আরবিতে ‘হুসাইন’ অর্থের সমার্থক তার নামে করুন।” কেননা, আলীর(আ:) মর্যাদা আপনার নিকট হযরত মূসার নিকট হারুনের মর্যাদার ন্যায়, পার্থক্য শুধু এটা যে, আপনি আল্লাহর শেষ নবি। “ ,*এভাবে এই মহিমাময় নাম ‘হুসাইন’ আল্লাহর পক্ষ থেকে হযরত মা ফাতেমার(সা:আ:) দ্বিতীয় সন্তানের জন্যে নির্ধারণ করা হলো। তাঁর (আ:)আবির্ভাবের সপ্তম দিবসে হযরত মা ফাতেমা (সা,আ.) আকিকা হিসেবে একটি দুম্বা ইমাম হুসাইনের(আ:) জন্যে কোরবানি করেন এবং তাঁর(সা:আ:)নবজাত শিশুর মাথা মুণ্ডন করেন আর সেই কর্তিত চুলের সম ওজনের রূপা আল্লাহর পথে দান করেন। **মওলা হুসাইন(আ:) এবং আল্লাহর নবি (সা.) *হুসাইন ইবনে আলীর(আ:) আবির্ভাবের হিজরি চতুর্থ বছর থেকে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর শাহাদাত -যা তাঁর(আ:)আবির্ভাবের ছয় বছর ও কয়েক মাস পরে সংঘটিত হয়- এ পর্যন্ত জনগণ ইমাম হুসাইনের(আ:) প্রতি ইসলামের সত্যনবি (সা.)-এর মহব্বত ও স্নেহ-ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ থেকে তৃতীয় ইমামের(আ:) উচ্চ মর্যাদা ও মহত্ত্বের ব্যাপারে ভালভাবেই অবগত হয়েছেন। *হযরত সালমান ফারসি(র:) বলেন– “–আমি দেখেছি রাসূল (সা.) হুসাইনকে(আ:) তাঁর হাঁটুর উপর বসিয়ে চুমু দিচ্ছেন *আর তখন তিনি বলছেন- “–তুমি মহান, মহান ব্যক্তির পুত্র এবং মহান ব্যক্তিবর্গের পিতা। তুমি ইমাম, ইমামের পুত্র এবং ইমামদের পিতা। তুমি আল্লাহর হুজ্জাত (অকাট্য দলিল), আল্লাহর হুজ্জাতের পুত্র এবং আল্লাহর নয়জন হুজ্জাতের পিতা। তাদের শেষ জন শেষ যামানায় কিয়াম করবে (আল্লাহ তাঁর আগমন ত্বরান্বিত করুক)।’ “ *হযরত আনাস ইবনে মালিক বর্ণনা করছেন– ”–যখন রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, আপনি আপনার আহলে বাইতের(আ:) মধ্য থেকে কাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসেন? * তিনি বলেন- ”হাসান ও হুসাইনকে–।” *প্রায়ই প্রিয় নবি (সা.) হাসান ও হুসাইনকে(আ:) তাঁর বুকে চেপে ধরে তাঁদের(আ:) পবিত্র দেহের সুঘ্রাণ নিতেন এবং তাঁদের(আ:) চুম্বন করতেন। *জনৈক সাহাবি থেকে বর্নিত– “–রাসূল (সা.) হাসান ও হুসাইনকে(আ:) তাঁর কাঁধে বসিয়ে আমাদের দিকে আসছেন। যখন তিনি আমাদের কাছে পৌঁছলেন তখন বললেন– ”–যে আমার এই দু’সন্তানকে ভালবাসবে সে আমাকে ভালবাসলো আর যে তাদের সাথে শত্রুতা করবে সে আমার সাথে শত্রুতা করল–“। *হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ও ইমাম হুসাইনের(আ:) মাঝে আধ্যাত্মিক ও ঐশী সম্পর্কের প্রাণবন্ত বর্ণনা এবং আন্তরিকতার সর্বোচ্চ বহিঃপ্রকাশ রাসূল (সা.)-এর নিম্নের এই বাক্যটির মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। *তিনি(স:) বলেছেন– ”–হুসাইন আমা থেকে এবং আমি হুসাইন থেকে–“। **মওলা হুসাইন(আ:) পিতার(আ:) সাথে– *তাঁর(আ:) জীবনের ছয় বছর তাঁর নানার(স:) সাথে অতিবাহিত হয়েছে। যখন রাসূল (সা.) এ ধরাপৃষ্ঠ থেকে বিদায় নিলেন এবং তাঁর(স:) প্রভুর সাক্ষাতে চলে যান তখন থেকে ত্রিশ বছর পর্যন্ত তিনি(আ:) পিতার(আ:) সাথে জীবন যাপন করেছেন। যে পিতা(আ:) কখনো ন্যায় ও ইনসাফ ব্যতীত বিচার করেন নি, পবিত্রতা ও বন্দেগি ছাড়া অতিবাহিত করেননি, আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কিছু তাঁর দৃষ্টিতে ছিল না, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে কিছু প্রার্থনা করেন নি এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছু তাঁর কাঙ্ক্ষিত ছিল না। *তিনি(আ:) এমন পিতা ছিলেন যার শাসনামলে এক মুহূর্তের জন্যে তাঁকে(আ:) শান্তিতে থাকতে দেয়া হয়নি। যেমনি করে তাঁর(আ:) খেলাফত আত্মসাৎ করার সময়ও তাঁকে(আ:) কষ্ট দিতে শত্রুরা পিছ-পা হয়নি। *তিনি(আ:) এ সময়টুকু জান-প্রাণ দিয়ে পিতার(আ:) নির্দেশের আনুগত্য করেছেন। যে ক’বছর মওলা আলী (আ.) খেলাফতের দায়িত্বে ছিলেন তখন ইমাম ইমাম হুসাইন (আ.) ইসলামী লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নের পথে একজন আত্মোৎসর্গী সৈনিকের ন্যায় তাঁর(আ:) মহানুভব ভ্রাতার(আ:) মতো প্রচেষ্টা চালাতেন। তিনি জামাল, সিফিন ও নাহরাওয়ানের যুদ্ধগুলোতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন। *আর এভাবে তিনি(আ:) তাঁর মহান পিতা আমীরুল মুমিনীন মওলা আলী (আ.) এবং আল্লাহর দীনের সমর্থন করেছিলেন। এমনকি তিনি(আ:) লোকজনের উপস্থিতিতে খেলাফত আত্মসাৎকারীদের লক্ষ্য করে প্রতিবাদ করতেন। *একদিন ওমরের(লা:) শাসনামলে ইমাম হুসাইন (আ.) মসজিদে নববীতে প্রবেশ করলেন। তিনি দ্বিতীয় অবৈধ খলীফাকে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মিম্বারে উপবিষ্ট দেখতে পান। ওমর(লা:) তখন বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। ইমাম(আ:) সরাসরি মিম্বারের সিঁড়িতে উঠে উচ্চৈঃস্বরে চিৎকার করেন– ”-আমার পিতার মিম্বার থেকে নিচে নেমে আসুন…। **ভাই ইমাম হাসানের (আ:) সাথে ইমাম হুসাইন(আ:)— মওলা আলী (আ.)-এর শাহাদাতের পর রাসূল (সা.)-এর নির্দেশ অনুযায়ী এবং আমীরুল মুমিনীন মওলা আলী (আ.)-এর অসিয়ত
শেরনর মওলা গাজী আব্বাস আলামদারের(আ:)
২৬ হিজরির ৪ শাবান বনি হাশেমির চাঁদ মোবারকবাদ। *৩ রা শাবানে মুহাম্মদের(স:) উপর মুহাম্মদ নাজিল হয়েছিলো। আর ৪ঠা শাবান মওলা আলীর(আ:) উপরে আলী নাজিল হয়েছিলো। *২৬ হিজরির ৪ শাবান মহান কারবালা বিপ্লবের শীর্ষস্থানীয় সেনাপতি ও পতাকাবাহী নেতা শেরনর মওলা গাজী আব্বাস আলামদারের(আ:) আবির্ভাব দিবস উপলক্ষে সকল হুসাইনি আজাদারোকো অভিনন্দন, শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ। “–আব্বাস আমার(সা:আ:) পুত্র যে তার ভাইয়ের জন্য রক্ষাকবচ—“! —-মা জাহরা( সাঃআঃ) “-আব্বাস শুধুমাত্র হুসাইনের জন্য এই দুনিয়ায় এসেছে, সে হুসাইনের জন্য নিযুক্ত—“। —মাওলা আলী (আঃ) *মা ফাতিমা (সাঃআঃ)এর পুত্র মুহসিন(আ:) যখন জালিমদের আক্রমনে অস্তিত্বে আসার আগেই শহীদ হন, তারপর থেকেই মা ফাতিমা(সা:আ:) রাতের ইবাদতে আল্লাহর কাছে দুয়া করতেন যে তার পুত্র হুসাইন(আ:) এর উপর যখন মুসিবত আসবে তখন তার ভরসা ও সাহায্যের জন্য এমন একজন ভাই দান করা হোক যে সব সময় তার(আ:) পাশে থাকবে। *মা ফাতিমা(সাঃআঃ) মাওলা আলী(আঃ) কে জানিয়ে দেন তিনি(স:আ:) আর বেশিদিন বাঁচবেন না এবং তিনি(সা:আ:) প্রিয়পুত্র হুসাইন(আঃ) এর জন্য মহান আল্লাহ থেকে আব্বাস (আঃ) কে চেয়েছেন এবং শিঘ্রই বিবি উম্মুল বানিনের(আ:) মাধ্যমে তার আগমন হবে, উম্মুল বানিন(সা:আ:) কে স্ত্রী রুপে গ্রহণ করে নিতে অসিয়ত করে যান, শুধু তাই নয়! যে হাত দিয়ে মা যাহ্রা(সা:আ:) তসবি পর্যন্ত টানতে পারতেন না সে হাত দিয়ে ছোট্ট আব্বাসের(আ:) জন্য জামা সেলাই করেছেন। যার কারনে বিবি উম্মুল বানিন(আঃ) কে বিবাহের সাথে সসম্মানে পবিত্র আহলে বাইত(আঃ) এর ঘরে নিয়ে আসা হয় । *মা ফাতিমার(সা:আ:) শাহাদাতের পর যখন উম্মুল বানিন(আঃ) এর মাধ্যমে মওলা আব্বাস (আঃ) এর আগমন হয়, তখন দুঃখ ও শোকে জর্জরিত হাসান, হুসাইন(আ:) যয়নাব ও কুলসুম (সা:আ:) এর মন পুনরায় আনন্দিত হয় এবং ইমাম আলী (আঃ) মা ফাতিমা (সা:আ:) এর শেষ ইচ্ছার বাস্তবায়ন দেখতে পেয়ে খুব খুশি হন । *মাওলা আলী(আ:) উনার হায়াতে জিন্দেগীতে কখনও ব্যক্তিগত কোন দোয়া আল্লাহর কাছে করেননি, একমাত্র ব্যতিক্রম আব্বাস ইবনে আলী(আ:)। তাহাজ্জুদের নামাজে মাওলা আলী(আ:) তাকে চেয়ে এনেছিলেন—, “–বলেছিলেন “আল্লাহ্ আমাকে একটা পুত্র দিন। *আওয়াজে কুদরত এলো “–কেমন পুত্র–?” *মাওলা আলী(আ:) এক শব্দে যা বললেন তার চেয়ে বেশি মাওলা আব্বাসের(আ:) ফাজায়েল আর কেউ পড়তে বা বলতে পারবেনা। **মাওলা আলী(আ:) বললেন– “–মিসলি–” “–আমার মতো–”। *আমি যেমন মাওলা মুহাম্মদের(স:) কাছে তেমন যেন ও হুসাইনের(আ:) কাছে হয়। আব্বাস(আ:) আগমন হয়। *মা জয়নাব (সাঃআঃ) যেন একটা খেলনা পেলেন। সারাদিন মাওলা আব্বাস(আ:) কে নিয়েই থাকেন। মাওলা আব্বাস(আ:) যখন হাঁটা শিখেছেন মাত্র, বিবি জয়নাব তাকে হাত ধরে হাটাচ্ছেন। মাওলা আলী (আ:) জয়নবকে(সা:আ:) জিজ্ঞেস করলেন– “মা! ছোট ভাইকে হাত ধরে হাঁটা শেখাচ্ছো–“?! *মা যয়নব(সা:আ:) উত্তর দিলেন– “—না বাবা–“! ভাইয়ের হাত ধরে আমি হাঁটা শিখছি–“। মাওলার(আ:) চোখ পানিতে ভরে গেলো। *মওলা আব্বাস (আঃ) পুতঃপবিত্র, নৈকট্য প্রাপ্ত, অসীম ভাগ্যবান কারন তার দৈহিক গঠন, আচরণ, চরিত্র, মহানুভবতা কেমন হবে তা পূর্বেই মা ফাতিমা (সাঃআঃ) জানিয়ে গিয়েছেন, তিনি(সা:আ:)বলেছেন— “–আমার আব্বাস এর মাঝে এমন বৈশিষ্ট্য থাকবে, “–আব্বাস কে আল্লাহ শুধুমাত্র আমার দোয়ার কারনেই সৃষ্টি করেছেন, তার অনুরূপ আর কাউকে কখনও সৃষ্টি করা হবেনা—“! *আরও বলেছেন–, “–আব্বাস আমার(সা:আ:) পুত্র যে তার ভাইয়ের(আ:) জন্য রক্ষাকবচ । *মাওলা আব্বাস(আঃ) যখন দুনিয়ায়ে আসলেন তিনি(আ:) তার চোখ খুলেননি, মায়ের মুখ দেখেননি, পিতা আলীর(আ:) মুখও দেখেননি, ভাই হাসানের(আ:) মুখও দেখেননি, সবাই কোলে নিয়েও তার চোখ খুললেন না, তারপর তিনি যখন হুসাইন(আঃ) এর কোলে গেলেন তখন তিনি তার চোখ খুললেন এবং সর্বপ্রথম চোখ খুলেই ইমাম হুসাইনের চেহারা মুবারক দেখলেন, হুসাইন (আঃ) তার ঠোটে চুমু দিলেন এবং বললেন, আমি আমার আব্বাস কে সর্বপ্রথম আমার জিহবার লালা পান করাবো । কত সৌভাগ্য আব্বাস (আঃ)এর, যিনি সর্বপ্রথম রিজিক ইমাম হুসাইনের(আ:) জিহবা মোবারক থেকে পেয়েছেন, মাওলা আব্বাস(আঃ) এর দোলনা ডান ও বামে হাসান ও হুসাইন(আ:) ধরতেন এবং সামনে ও পিছে যাইনাব ও কুলসুম(সা:আ:) ধরতেন, এভাবে তিনি ৪ ভাইবোনের ভালবাসায় মওলা আব্বাস (আঃ) পালিত হন । মাওলা আব্বাস (আঃ) কে দোলনা থাকা অবস্থাতেই ৮ বছরের ইমাম হুসাইন (আঃ) সকল ধরনের স্নেহ ও ভালবাসা দিয়ে লালন পালন করেছেন ৷ *মাওলা আব্বাস(আ:) ইবনে আলী ইবনে আবি তালিব(আ:) জীবনের প্রথম ১৪ বছর আমিরুল মু’মিনিন মওলা আলী (আ.)’র সান্নিধ্য লাভ করেছেন। নবজাতক আবুল ফজলের(আ:) ডান ও বাম কানে আযান দিয়েছিলেন তাঁর মহান পিতা আলী (আ.)। তিনি জানতেন এই শিশু ভবিষ্যতে অনন্য বীরত্ব ও সাহসিকতার জন্য খ্যাত হবেন। আর তাই তিনি নবজাতকের নাম রাখেন আব্বাস। “–এর অর্থ সাহসী ও বীর। **মাওলা আব্বাস(আ:) এমনই এক সত্তার নাম যিনি ছিলেন হুবুহু মাওলা আলীর(আ:) মতোন দেখতে, বীরত্বেও তাই, যে কারনে মাওলা আলীর(আ:) শাহাদাত পরবর্তী ঈদে মাওলা হাসান(আ:) যখন বিবি জয়নাবের(সা:আ:) সামনে গেলেন তখন মা জয়নব (সা:আ:) কালো কাপড় পড়ে মাটিতে বসে কাঁদছিলেন। মাওলা হাসান(আ:) তার মাথায় হাত রেখে সান্তনার সুরে বললেন– “—বোন, এখন আমি ইমাম, তুমি তোমার ইচ্ছামতো ঈদী চাও, তুমি যা চাইবে তাই পাবে—“। মা যয়নব(সা:আ:) উত্তর দিলেন– “–তাই যদি হয় ভাইয়া, তাহলে আপনি একটু আব্বাস কে বলেন সে যেন বাবার পোষাক পরে আমার সামনে একটু দাঁড়ায়। আজ নয়দিন হয়ে গেলো বাবাকে দেখিনা–“! মাওলা হাসানের(আ:) আদেশে মাওলা আব্বাস(আ:) পিতার(আ:) পোষাক পরে বোনের সামনে দাঁড়ায়, তা দেখে বোন শান্ত হন। **তিনি(আ:) কখনই মাওলা হুসাইন(আ:) কে ভাই বলে সম্বোধন করেননি নিজেও মাওলা আলীর(আ:) সন্তান হওয়া সত্তেও, কারন উনি জানতেন হুসাইন(আ:) কে! ভদ্রতা ও আদব-কায়দা রক্ষার দিকেও খুবই সচেতন ছিলেন আবুল ফজল আব্বাস (আ.)। তিনি ইমাম(আ:) ভ্রাতৃদ্বয়ের সামনে পরিপূর্ণ আদব রক্ষা করে চলতেন। কখনও অনুমতি ছাড়া তাঁদের পাশে বসতেন না। বর্ণনায় এসেছে, ৩৪ বছরের বরকতময় জীবনে আবুল ফজল (আ.) কখনও ইমাম হুসাইন (আ.)-কে ভাই বলে সম্বোধন করেননি, বরং বড় ভাই (মওলা হাসান ( আ:)কে বলতেন- সাইয়্যিদি বা আমার কর্তা ও ছোট ভাইকে মওলা হুসাইনকে (আ:) বলতেন ‘মৌলায়ি’ বা ‘আমার নেতা তিনি শৈশব থেকে সব সময়ই মহান ভাইয়ের(আ:) পাশে থেকেছেন তাঁর(আ:) সহায়তার জন্য এবং এ পথেই শেষ পর্যন্ত শাহাদত বরণ করেন–“। *মদীনায় মওলা আলী (আ.)’র স্ত্রী ফাতিমা বিনতে হাজ্জাম তথা উম্মুল বানিনের(আ:)অস্তিত্বে আবির্ভূত এই মহাপুরুষ যে একদিন জগতের আলোয় পরিণত হবেন তার পূর্বাভাস পাওয়া যায় মাওলা আলীর(আ:) একটি বক্তব্যে। ওই বক্তব্যে এসেছে— “–আমার সন্তান আব্বাস শিশু থাকা অবস্থায়ই জ্ঞান রপ্ত করত। কবুতরের ছানা যেভাবে মায়ের কাছ থেকে পানি ও খাদ্য নেয়, তেমনি আব্বাসও আমার কাছ থেকে জ্ঞান রপ্ত করত–“। *আজ সেই গাজী আব্বাস (আঃ) আলামদারের মহা আবির্ভাব দিবস যাকে তার বোন যায়নাব বিনতে আলী (সা:আ:) ডাকতেন “আল হিজাব” যাকে আর সবাই ডাকতেন “ক্বামারে ইবনে হিশাম” বা বনু হাশেম গোত্রের চাঁদ,আবুল ফজল আব্বাস(আ:)। মাওলা হুসাইনের দোলনা দুলিয়েছেন জিবরাঈল (আঃ) আর মাওলা আব্বাসের(আ:) দোলনা দুলিয়েছেন স্বয়ং মাওলা হুসাইন(আ:)। *আলে মোহাম্মদের (স:)আওসাতুনা আলে মোহাম্মদ(স:)মওলা গাজী আব্বাস আলামদার(আ:) *মওলা ইমাম জাফর আস-সাদিক(আ:) হযরত আবুল ফজল (আ.)’র মর্যাদা প্রসঙ্গে বলেছেন—, “–আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি ইমাম হুসাইন (আ.)’র প্রতি অনুগত ছিলেন, আপনি তাঁর(আ:) সঠিক অবস্থানের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন এবং আল্লাহর এই হুজ্জাত তথা নিজ
আলী ইবনে হোসাইন জয়নুল আবিদীন ( আঃ)শুভ আবির্ভাব
৫ ই শাবান ইমাম সাজ্জাদ (আ:) মোবারকবাদ। *আহলে বাইত (আঃ)’র চতূর্থ ইমাম অকল্পনীয় মাত্রার ইবাদত, উদারতা,খোদাভীরুতা, খোদার ভয়ে ক্রন্দনকাররী অতুল জ্ঞান,দানশীলতা ও বিনয়ী এবং কারবালা বিপ্লবের সংরক্ষক আলী ইবনে হোসাইন জয়নুল আবিদীন ( আঃ)শুভ আবির্ভাব উপলক্ষে সকল মুহিব্বিনে আহলে বাইত (আ:) কে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ। **সংক্ষিপ্ত পরিচিতি — *নাম- আলী। *উপাধি- জ়য়নুল আবিদীন সৈয়দুল আবিদীন ইবনুল খ়য়ারতাইন জ়ুল সফ়নাত আজ়-জ়াকী আল-আমীন সৈয়দ আস-সজ্জাদীন *ডাক নাম-আবুল হাসান *পিতার নাম-৩য় ইমাম হুসাইন (আ.) *মাতার নাম-শহর বানু(আ:) (ইয়াযগারদের কন্যা) *পৃথিবীতে পদার্পণের তারিখ- বৃহঃস্পতিবার, ৫ই শাবান ৩৮ হিজরী। *আগমনি স্থান -মদীনা মুনাওয়ারা। *পৃথিবীতে অবস্থান – ৫৭ বছর। *ইমামতকাল- ৩৫ বছর। *হত্যাকারী-ইবনে মুলজিম মুরাদী(লা’ন)। *শাহাদত- ২৫ মহরম ৯৫ হিজরী মদীনা মুনাওয়ারা। *বর্তমান বিশ্রামাগার- জান্নাতুল বাক্বী। *সন্তান- ১৫জন, ১০জন ছেলে এবং ৫জন কন্যা। *ইমাম জয়নুল আবেদিন (আ.) মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র পবিত্র আহলে বাইতের(আ:) সদস্য এবং ইমাম আলী ইবনে হুসাইন (আ.)পুত্র। জয়নুল আবেদিন ছিল তাঁর (আ:)উপাধি যার অর্থ সাধকদের অলঙ্কার বা সৌন্দর্য। *বিশ্ব ইতিহাস নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রসহ মানবীয় মূল্যবোধের সবক্ষেত্রেই যাঁদের কাছে সবচেয়ে বেশি ঋণী তাঁদের মধ্যে ইমাম আলী বিন হুসাইন (আ.) তথা ইমাম সাজ্জাদের(আ:) অবস্থান অত্যন্ত প্রজ্জ্বোল ও শীর্ষস্থানীয়। *সত্যিকারের ও উন্নত মানুষ গড়ার এই মহান সাধক ইমাম ‘জয়নুল আবেদিন'(আ:) ‘খোদা প্রেমিকদের অলঙ্কার’ হিসেবেও খ্যাত। মহান আল্লাহর দরবারে অত্যধিক সিজদায় মগ্ন থাকতেন বলে ইমাম জয়নুল আবেদিন (আ.)-কে বলা হত সাজ্জাদ। *নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতা যেন তাঁর অনুপম চরিত্র এবং উচ্চতর খোদায়ী জ্ঞান ও প্রজ্ঞার যাদুময় ছোঁয়ায় পেয়েছে চিরন্তন সৌন্দর্য ও অনির্বাণ প্রাণ। *কারবালার বিশ্বনন্দিত মহাবিপ্লবের ঘটনায় ইমাম হুসাইন (আ.)’র একমাত্র যে পুত্র বেঁচেছিলেন তিনি হলেন ইমাম সাজ্জাদ (আ.)। অর্থাৎ তিনিই ছিলেন মহান’বী (স.)’র পবিত্র বংশধারার বা আহলে বাইতের(আ:) একমাত্র পুরুষ মহাপুরুষ যিনি কারবালার ঘটনায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছিলেন। অসুস্থ ছিলেন বলে তিনি ওই জিহাদে সরাসরি যোগ দিতে পারেননি। আসলে মহান আল্লাহ অলৌকিকভাবেই তাঁকে(আ:) রক্ষা করেছিলেন মুসলিম জাতিকে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য এবং ইসলামের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ভিত্তি রচনা করার জন্য। *ইমাম সাজ্জাদ(আ:) কারবালার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। দশই মহররমের সেই ভয়াবহ ঘটনার দিনে মারাত্মক অসুস্থ থাকায় তিনি(আ:) জিহাদে যোগ দিতে পারেন নি। ইয়াজিদের সেনারা তাকে হত্যা করতে গিয়েও তাঁর ফুফু জয়নাব (সা,আ,.)’র প্রতিরোধের মুখে এই মহান ইমামকে(আ:) জীবিত রাখতে বাধ্য হয়। পরবর্তীকালেও আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে যান । আসলে মহান আল্লাহই এভাবে তাঁকে মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্ব দেয়াসহ কারবালার কালজয়ী বিপ্লবের পরবর্তী অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করা ও এ বিপ্লবের প্রকৃত বাণী মুসলমানদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্যে জীবিত রেখেছিলেন। *কারবালার ঘটনার পর ইমাম জয়নুল আবেদীন(আ:) ও তাঁর(আ:) ফুপি হযরত জয়নাব (সা.আ,) যদি জীবিত না থাকতেন তাহলে কারবালার শহীদদের আত্মত্যাগ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংঘটিত ঐ বিপ্লবকে নিছক একটা দুর্ঘটনা বলে প্রচার করার ইয়াজিদী চক্রান্ত সফল হতো। উমাইয়া শাসকরা তখন এটাও প্রচার করতো যে ইমাম হুসাইন (আ.) ইয়াজিদের মতো তাগুতি শাসকের শাসন মেনে নিয়েছিলেন। আর এর ফলে পবিত্র ইসলাম ধর্মকে অবিচারের ব্যাপারে আপোসকামী ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ষড়যন্ত্রও সফল হতো। কিন্তু মহান আল্লাহর ইচ্ছায় হযরত ইমাম সাজ্জাদ(আ:) ও জয়নাব (সা.আ,) কারবালা থেকে বন্দী অবস্থায় কুফা ও দামেস্কে যাবার পথেই স্বল্প সময়ে জনগণকে জানিয়ে দেন যে কারবালায় প্রকৃত ঘটনা কি ঘটেছিল এবং কারা ছিল ইসলামের জন্যে নিবেদিত-প্রাণ ও কারা ছিল ইসলামের লেবাসধারী জালেম শাসক মাত্র। *কুফায় ইবনে জিয়াদের দরবারে এবং দামেস্কে ইয়াজিদের দরবারে ইমাম জয়নুল আবেদীনের(আ:) তেজোদৃপ্ত ও সাহসী ভাষণ জনগণের মধ্যে এমন জাগরণ সৃষ্টি করে যে পরবতীকালে সে জাগরণের জোয়ারে ভেসে গিয়েছিল তাগুতি উমাইয়া শাসকদের তাখতে তাউস। *ইবনে জিয়াদ ও ইয়াজিদের দরবারে তেজোদৃপ্ত বক্তব্য রেখেছিলেন হযরত জয়নাব (সা,আ.)। একই ধরনের বক্তব্য রেখেছিলেন নতুন ইমাম হযরত জয়নুল আবেদীন (আ)। কুফায় ফুফু জয়নাব (সা,আ.) ও বোন ফাতিমার ভাষণ শুনে জনগণ যখন মর্মাহত হয় ও কাঁদতে থাকে তখন তাদের সমাবেশে নতুন এই ইমামও বক্তব্য রেখেছিলেন। তিনি(আ:) বলেছিলেন– “— হে মানুষেরা,আমি আলী,হুসাইন ইবনে আলী (আ.)’র সন্তান। আমি তাঁর(আ:) সন্তান যার সব কিছু লুট করা হয়েছে,যার পরিবারের সবাইকে বন্দী করে এখানে আনা হয়েছে। আমি তাঁর(আ:) সন্তান,যে ফোরাতের কিনারায় মর্মান্তিক ও নৃশংসভাবে নিহত হয়েছে–“। “–হে লোকেরা! তোমরা কিয়ামতের দিন কিভাবে নবী(সা.)’র সামনে দাঁড়াবে? রাসূল (সা.) যখন তোমাদের বলবেন,“ তোমরা আমার পরিবারবর্গকে এভাবে কতল করেছ আর আমার মর্যাদাও অক্ষুণ্ণ রাখনি,তাই তোমরা আমার উম্মত নও–।” *নতুন ইমামের এ বক্তব্য শুনে কুফাবাসী চিতকার ধ্বনি দিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে এবং একে-অপরকে তিরস্কার করে বলতে থাকে : আমরা এতই দুর্ভাগা যে নিজেরা যে ধ্বংস হয়ে গেছি তাও জানি না। *ইমাম সাজ্জাদের (আ:) নৈতিক গুণাবলি ও মহত্ব *ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-এর এক আত্মীয় উপস্থিত জনতার সামনে তাঁর প্রতি অশ্লীল ভাষায় কিছু বলে চলে গেল। তিনি(আ:) উপস্থিত সকলের উদ্দেশে বললেন– ”–তার কথাগুলো তোমরা শুনেছ, এখন তোমরা আমার সাথে চলো, কেননা, তাকে আমার দেওয়া উত্তরটাও শুনবে–“। *তারা বলল— ”–আপনার সাথে আমরা যাব, কিন্তু যখন সে অশ্লীল কথাগুলো বলছিল তখন আপনার অথবা আমাদের পক্ষ থেকে তার জবাবটা দিয়ে দেয়াই তো ভাল ছিল–।” *ইমাম(আ:) তাদের সাথে নিয়ে ঐ লোকটির বাড়ির দিকে গেলেন। যেতে যেতে রাস্তায় নিম্নোক্ত আয়াতটি (যে আয়াতটিতে মুমিনদের অতি প্রশংসনীয় কিছু আচরণের উল্লেখ আছে) পাঠ করলেন– ”–যারা ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে বস্তুত আল্লাহ্ সৎকর্মশীলদের পছন্দ করেন–“! সূরা আলে ইমরান/ ১৩৪। *ইমামের(আ:) সঙ্গী-সাথিরা প্রথমে অন্য রকম ধারণা করেছিল। কিন্তু পরে তারা বুঝতে পারল যে, তিনি প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে যাচ্ছেন না। তিনি ঐ লোকের বাড়িতে পৌঁছে তাকে খবর পাঠালেন যে, তিনি(আ:) (আলী বিন হুসাইন) এসেছেন। * তিনি(আ:) প্রতিশোধ নিতে এসেছেন এই ধারণায় ঐ লোক নিজেও ঝগড়া করার জন্যে তৈরি হয়ে আসলো। ইমাম (আ:)তাকে বললেন– ”–ভাই আমার। তুমি কিছু সময় আগে আমাকে যা-তা শুনিয়ে এসেছ। তুমি যা বলেছ যদি আমার ভিতরে তা থেকে থাকে তাহলে আল্লাহর কাছে চাইব তিনি যেন আমাকে ক্ষমা করে দেন… আর ঐগুলো যদি আমার ভিতরে না থেকে থাকে তাহলে তাঁর কাছে চাইব তিনি যেন তোমাকে ক্ষমা করে দেন–“। *ইমামের(আ:) এ কোমল ও অবিশ্বাস্য আচরণ তাকে লজ্জিত করল। এগিয়ে এসে ইমামের কপালে চুম দিয়ে বলল– “–যা কিছু বলেছি তা আপনার ভিতরে নেই, বরং স্বীকার করছি, যা কিছু বলেছি নিজেই সেগুলোর যোগ্য–।” *ইমাম সাদিক (আ.) বলেন “–মদিনায় এক ভাঁড় ছিল যে বিভিন্নভাবে লোকজনকে হাসাত। কিন্তু সে বলত এখনও পর্যন্ত আলী বিন হুসাইনকে হাসাতে পারে নি। একদিন তিনি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন তখন সে তাঁর গায়ের আ’বাটি (চাদরটি) খুলে নিয়ে চলে গেল। তিনি তার এ নোংরা কাজের জন্যে তাকে কিছু বললেন না। ইমামের সঙ্গী-সাথিরা তার কাছ থেকে আ’বাটি নিয়ে আসলে তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন– ”—সে কে?’ *তারা বলল ”-সে হচ্ছে ভাঁড়, সবাইকে হাসায়।’ ,*ইমাম(আ:) বললেন “–তাকে বল, “–মহান আল্লাহ্ এমন একদিন নির্ধারণ করেছেন যেদিন অর্থহীন কর্ম সম্পাদনকারীরা (ঠাট্টা বিদ্রূপকারী) ক্ষতির সম্মুখীন হবে–“। *যায়েদ বিন উসামা মুমূর্ষু অবস্থায় বিছানায় পড়েছিলেন। ইমাম(আ:) তাঁকে দেখতে
মানুষের ঈমান ধ্বংসকারী নাম ও মাজার নামক লুচ্চামির স্থান
*এসব নাম থেকেই তাদের পরিচয় মিলে যে, তারা আসলেই ভন্ড। আর কত ভন্ডামী করবে বলা যায় না । আমি কিছু সংগ্রহ করেছি। আপনাদের এরকম কোন বিচিত্র নাম জানা থাকলে কমেন্টে বলতে পারেন….. →ঝিনজি শাহ্, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম। →হেইত হইত ও হেঁহু ফকির শাহ্, আনোয়ারা, চট্টগ্রাম। →গুই বাবা শাহ্, পটিয়া, চট্টগ্রাম। →লতা শাহ্, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম। →কাতাল শাহ্, পটিয়া, চট্টগ্রাম। →গুনাগার আলী শাহ্, সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম। →পেটান শাহ্-১, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম। →পেটান শাহ্,-২, লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম। →জঙ্গি শাহ্, বাদুরতলা, চট্টগ্রাম। →গাট্টি ফকির, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম। →মা’জুর অলি শাহ্, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম। →বাঘ শাহ্ ফকির, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম। →ডলম পীর, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম। →কল্লা শাহ্, খরমপুর, বি. বাড়িয়া। →লুদত শাহ্ কুটান্দর, সায়েস্তাগনজ। →টংটং শাহ্, লাখাই, হবিগনজ। →উলু শাহ্, কালাপুর, চুনারুঘাট। →পতুশাহ্, কালাপুর, চুনারুঘাট। →বেজি শাহ্, পটিয়া,চট্টগ্রাম। →কালু শাহ্, হাটহাজারি, চট্টগ্রাম। →পানি শাহ্, চট্টগ্রাম। →বদনা শাহ্-১, হাটহাজারি, চট্টগ্রাম। →বদনা শাহ্-২, প্রবর্তক, চট্টগ্রাম। →বালু শাহ্, চট্টগ্রাম । →পাগলা শাহ্, ফেনী। →ভেনভেনিয়া শাহ্, চট্টগ্রাম। →ফাইল্লা পাগলা শাহ্, সখিপুর, টাঙ্গাইল। →পাঙ্খা বাবা,মহনগঞ্জ। →লেংটা বাবা, ধর্মপাশা, সুনামগঞ্জ। →মাস্তান শাহ্, দূর্গাপুর, নেত্রকোনা। →ছাওয়াল (বাচ্চা) পীর, শেরপুর, ঢাকা। →লেডির কান্দা,পূর্বাধলা, নেত্রকোনা। →শাখা মাজার, চট্টগ্রাম। →নিদর্শন দরবার, চট্টগ্রাম। →গাঁধা শাহ্। →ননুশাহ, সন্দীপ, চট্টগ্রাম জহির শাহ। বাউফল,পটুয়াখালী। কোকোনাট বাবার মাজার… মোহছেন আউলিয়ার মাজারের পাশে… রাজার বাঘ দরবার শরীফ কুতুববাগ দরবার শরীফ চিল্লা শাহ ,, পটিয়া। নারী খুর শাহ, কল কাতা। ডলম পির গুনাগরি বদনা শাহ্ চকবাজার বিরি বাবা শাহ গোলাপ শাহ. গুলিস্থান, ঢাকা । শাহজী,চান্দগাও,চট্টগ্রাম। ডাইল,চাইল,সিলেট। হবিগঞ্জে ডাইলা শাহ টেক্সি ফকির-চট্টগ্রাম। বালতি শাহ, সিলেট। লেংলেং শাহ, সুনামগঞ্জ। কালু শাহ মিরসরাই চট্টগ্রাম গরম বিবি শাহ, দামপাড়া পুলিশ লেইন চট্রগ্রাম বোতল শাহ্, পটিকছড়ি, চট্রগ্রাম। →পাতা শাহ, বড়লেখা, মৌলভীবাজার। →কাবেরি শাহ, বড়লেখা, মৌলভী বাজার। →কেতলি শাহ, কোলাউড়া, মৌলভী বাজার। →পাঁচ পীরের মাজার, বিয়ানীবাজার, সিলেট। →চাচা পাগলা, বগুড়া। →চরম শাহ্, বরিশাল। পৃথিবীতে মানুষ কতৃক সৃষ্ট ইহুদী , খ্রীষ্টান , হিন্দু , বৌদ্ব সহ অসংখ্য ধর্মীয় মতবাদ রয়েছে । এমনকি মুসলমানদের মধ্যে সুন্নি , হানাফী , মালেকি , শাফেয়ী , হাম্বলী , বেরলভী , নক্সবন্দী , দেওবন্দী , গাউসিয়া , চিশতীয়া , ইলিয়াসী তাবলীগ , ওহাবী , আহলে হাদিস , লা-মাযহাবি , দেওবন্দী , হেফাজতি , ছরছিনা , মাইজভান্ডারী , চিশতীয়া , নক্সবন্দীয়া , হাটহাজারি , ফুরফুরা , চরমোনাই , আটরশি , নয়রশি , কুতুববাগী , জইনপুরী , হাকিকতি , মারফতি , তরিকতি , শরিয়তী , ন্যাংটাবাবা , হাটাবাবা , পাগলাবাবা , জটাবাবা , শিকলিবাবা , থুথুবাবা , ফুলেশ্বরী , সুরেশ্বরী , কায়কোবাদী , সায়দাবাদী , আরামবাগী , ওয়াসকরনী , ইমামীয়া দরবারী , লালনী , হাসনি , বোগদাদি , সুুফিয়ানি , ওহাবী এবং শীয়া , ফাতেমি , ইসমাইলী , আখবারী , জায়েদী , ফাতেমী , আলাভী, শামপুরী এনায়েতপুরি আলুপুরী ইত্যাদি লক্ষ লক্ষ দল রয়েছে । *চ্যালেঞ্জ সহকারে বলছি যে , উল্লেখিত একটি দলও মহান আল্লাহ কতৃক অনুমোদিত ও স্বীকৃত নয় । “—আর যদি তোমরা তোমাদের মত একজন মানুষের আনুগত্য কর, তবে তোমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে–“! সুরা মু’মিনুন/৩৪ অচিরেই এসব মানুষ তাদের অনুসারী সহ জাহান্নামে যাবে,- “–তিনি আল্লাহ বললেন”– অচিরেই তারা লজ্জিত ও অনুতপ্ত হবে–“! সুরা মু’মিনুন/৪০ নিবেদনে নাম শুনে বেহুশ (নীলিমা) ইয়া সাহেবুজ্জামান (আঃ) আদরিকনী আদরিকনী , আল্লাহুমা সাল্লে আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম , আল্লাহুম্মা লান হুম জামিয়ান , লানতুল্লাহ আলা কওমিজ জালেমিন।
শ্রী ভজহরী ঠাকুর এবং কাল্পনিক ইন্টারভিউ
শতভাগ নির্ভেজাল সহীহ বিশুদ্ব কাল্পনিক একটি ইন্টারভিউ । নীচে বর্নিত ইন্টারভিউ বা সাক্ষাতকার বিষয়ক লেখাটি সম্পূর্নরুপে কাল্পনিক এবং বানোয়াট । দয়া করে ভূয়া লেখাটি পড়ে কেহই উত্তেজিত হইবেন না । লেখাটি পড়ে খারাপ লাগলে আমারে যত পারেন উরাধুরা গালি দিন । আর যদি ভাল লাগে তাইলে দুইটা টোষ্ট বিস্কুটের লগে মালাই মেরে এককাপ চা দিবেন , প্লীজ । সঙ্গত কারনেই সাক্ষাতকার গ্রহনকারীর প্রকৃত নাম গোপন করে একটি ছদ্মনাম দেওয়া হইল । সাক্ষাত দিচ্ছেন — প্রয়াঁত শ্রী ভজহরী ঠাকুর (ছদ্মনাম) । সাক্ষাতকার গ্রহনকারীর নাম – শ্রী কেবলাকান্ত ঠাকুর (ছদ্মনাম) । সাক্ষাত গ্রহনের স্থান – উর্ধজগত । সময় – ঘন অমাবস্যার শেষরাত । বিশেষ একটি উদ্দেশ্যে মুকেশ আম্বানীর 4G রিলায়েন্স স্পেশাল প্যাকেজের আওতায় শ্রী কেবলাকান্ত ঠাকুর পৌঁছে গেল সরাসরি উর্ধ জগতে । আমি শ্রী কেবলাকান্ত ঠাকুর ছোটবেলা থেকে শ্রী ভজহরী ঠাকুরের একনিষ্ঠ ভক্ত । মাদ্রাসাতে ওনার রচিত বিশাল হাদিস গ্রন্থ মুখস্ত করতে হয়েছে । পবিত্র কোরআন খতম দেওয়ার মত ওনার হাদিস গ্রন্থ বেশ কয়েকবার খতম দেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে । বহুলভাবে কথিত আছে যে , শ্রী ভজহরী ঠাকুর যখন হাদিস সংগ্রহ করিতেন তখন তিনি অযু করে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করিতেন । নফল নামাজ শেষ করে তিনি গভীর ধ্যানে নিমগ্ন হয়ে যেতেন । সুগভীর ধ্যানরত অবস্থায় তিনি উর্ধ জগতে প্রবেশ করে রাসুলের (সাঃ) সহিত যোগাযোগ স্থাপন করে সংগৃহীত হাদিসটির বিশুদ্বতা সম্বন্ধে নিশ্চিত হতেন । এরপরে তিনি উক্ত হাদিসটি সহীহ ও বিশুদ্ব হিসাবে লিপিবদ্ব করতেন । ইতিহাস থেকে আরও জানা যায় যে , স্বল্পকালীন জীবনে তিনি কমপক্ষে ছয় লক্ষাধিক হাদিস সংগ্রহ করেছেন । এরপরে বিভিন্ন জটিল ও কঠিনতম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে সর্বসাকুল্যে সাড়ে সাত হাজার হাদিস সমূহ সহীহ , নির্ভুল এবং শতভাগ বিশুদ্ব ঘোষনাপূর্বক সংরক্ষিত ও লিপিবদ্বকরন করেছেন । এই সাড়ে সাত হাজারের মধ্যে প্রায় তিন হাজার হাদিস ডুপ্লিকেট এসেছে । অর্থাৎ একই হাদিসের দুইবার বর্ননা হয়েছে । তাহলে সর্বসাকুল্যে চার হাজার হাদিস টিকে গেল । বিশেষ ব্যাপার যে , সর্বমোট ছয়লক্ষ হাদিসের ক্ষেত্রে ছয়লক্ষ বার অযুু , ছয় লক্ষবার দুই রাকাত নফল নামাজ শেষে মোরাকাবা ধ্যানে বসে রুহানী জগতে রাসুলের (সাঃ) সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা সত্যই এক দুরুহ কঠিন কর্ম বটে ! যাইহোক , আজকের মূল বিষয়বস্ত এটা নয় । আলাপের মূল প্রসঙ্গে আসছি । শ্রী ভজহরী ঠাকুরের ইন্তেকালের প্রায় ১৩০০ বছর পরে আমার মনে আজব একটা খেয়াল উদিত হইল । আজব খেয়ালের মূল কারনটি হচ্ছে , সহীহ আল বুখারী শরীফে নবীজীর (সাঃ) সাথে সম্পর্কিত বেশকিছু হাদিস দেখে নিজেই খুব লজ্জিত হয়ে পড়লাম । সর্বশক্তিমান আল্লাহ স্বয়ং নিজে সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদকে (সাঃ) সমগ্র মানবজাতির জন্য সর্বউত্তম অনুকরনীয় আদর্শ চরিত্র হিসাবে ঘোষনা দিলেন । “ — নিঃসন্দেহে তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুল হলেন উত্তম আদর্শ (অনুসরনীয়) , তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরন করে —- ” । সুরা – আহযাব / ২১ । পবিত্র কোরআন এই জাতীয় সুস্পষ্ট ঘোষনার পরেও সহীহ আল বুখারী শরীফে নবীজীর (সাঃ) শানে অত্যন্ত কুরুচীপূূর্ন অশ্লীল হাদিস বিদ্যমান । যেমন – রাসুল (সাঃ) অত্যন্ত কামুক পুরুষ ছিলেন (নাউযুবিল্লাহ) , পশ্চিম কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে প্রসাব করতেন (নাউযুবিল্লাহ) , মনের দুঃখে একবার আত্মহত্যা করতে চাইলেন (নাউযুবিল্লাহ) , মাঝে মধ্যে ভুল করে ফেলতেন (নাউযুবিল্লাহ) , ফরজ গোসল না করেই নামাজে ইমামতী শুুরু করে দিলেন (নাউযুবিল্লাহ) , কিশোর বয়সে সকলের সামনে উলঙ্গ হয়ে পড়লেন (নাউযুবিল্লাহ) , ওনার কলিজা একাধিকবার জমজমের পানি দ্বারা ধৌতকরন করা হয় (নাউযুবিল্লাহ) , একজন মহিলা অপরিচিত পুরুষকে স্তন্যদান করতে পারে (নাউযুবিল্লাহ) ইত্যাদি ইত্যাদি । আরও অবাক হইলাম এইজন্য যে , পবিত্র কোরআনের সাথে প্রচন্ড সাংঘর্ষিক চরম মিথ্যা গাঁজাখুরি এই হাদিসগুলি পৃথিবীর সকল সুন্নি আলেম , মুহাদ্দিস , পন্ডিতগন একত্রিত হয়ে এখনও কেন বাতিল বলে ঘোষনা করছেন না ? ভারত বাংলাদেশের অনেক নামকরা জ্ঞানীগুনী সুন্নি আলেম পন্ডিতগনের সাথে এই বিষয়টি নিয়ে কথা বলেও কোন লাভ হয় নাই । উল্টে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য অপমানজনক ব্যবহার সহ্য করতে হয়েছে । শেষমেষ উপায়ন্তর না পাইয়া আমি নিজেই অদ্ভত একটা সিদ্বান্ত নিলাম । মনস্থির করলাম যে , পুরো বিষয়টি নিয়ে সরাসরি শ্রী ভজহরী ঠাকুরের সাথে খোলামেলা কথাবার্তা বলিব । সিদ্বান্ত মোতাবেক আমি শ্রী কেবলাকান্ত ঠাকুর কিভাবে এবং কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মোরাকাবা ধ্যান করতে হয় সে বিষয় বিশেষ জ্ঞান অর্জন এবং বিশেষ প্রশিক্ষন নিতে থাকলাম । দিন যায় রাত আসে , সংসার ধর্ম পরিত্যাগ করে ধ্যানে নিমগ্ন রইলাম । অবশেষে মহেন্দ্রক্ষন উপস্থিত হইল । দীর্ঘদিন অতি কঠোর সাধনার পরে মুকেশ আম্বানীর 4G রিলায়েন্স স্পেশাল প্যাকেজের বদৌলতে একদিন মোরাকাবা ধ্যান যোগে রুহানী জগতে প্রবেশ করে শ্রী ভজহরী ঠাকুরের সাথে দেখা ও খোলামেলা আলাপ আলোচনা করার অমূল্য সুযোগ পেয়ে গেলাম । প্রিয় পাঠক , আমাদের দুইজনের মধ্যকার আলাপের কিছুু চৌম্বিক অংশবিশেষ আপনাদের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরছি । মোরাকাবা ধ্যানের এক পর্যায় আমি সূক্ষ শরীরে উর্ধ জগতে প্রবেশ করলাম । চন্দন আতরের সুবাসিত সুঘ্রানে পরিবেষ্টিত হালকা মোলায়েম নরম আলো-আধারির মায়াবী পরিবেশে কিছুক্ষন পরেই চরম কাংখিত ব্যক্তিটি আমার সামনে উপবিষ্ট অবস্থায় দেখতে পেলাম । বলাই বাহুল্য পরম পূজনীয় ব্যক্তিটি হলেন – শ্রী ভজহরী ঠাকুর । আমি – নমস্কার । শ্রী ভজহরী ঠাকুর – তোমাকেও নমস্কার । বৎস ! কেমন আছ তুমি ? আমি – ভাল আছি । শ্রী ভজহরী ঠাকুর – শুনে খুশী হলাম । বল বৎস , তুমি কি জানতে চাও ! আমি – যদি অভয় দেন মন খুলে কিছু কথা বলতে চাই । তবে কিছু শক্ত কথাও হবে । শ্রী ভজহরী ঠাকুর – নির্ভয় বলতে পার । তবে সময় খুবই কম পাবে । সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন কাম্য । আমি – জীবনে এই প্রথম আপনার একান্ত সান্নিধ্য পেলাম । সত্যিই বিশ্বাস হচ্ছে না ! মানব জন্ম আজ ধন্য হল । হে প্রিয় ! প্রথম জিজ্ঞাস্য এটা যে , দুনিয়ার জীবনে আপনার একটি সুন্দর নাম ছিল । বিখ্যাত একজন নবীর (আঃ) নামের সাথে মিলিয়ে । যে নবীকে (আঃ) তাঁর পিতা (আঃ) কুরবানী দেওয়ার জন্য ধারালো ছুরির নীচে শুইয়ে দিয়েছিলেন । সুন্দর নামটি পরিবর্তন করে এখানে “শ্রী ভজহরী ঠাকুর” নামে কেন ? শ্রী ভজহরী ঠাকুর – খুব সংক্ষেপে বলি । ভগবানকে “হরি” বলা হয় । দুনিয়াতে যখন ছিলাম তখন আব্বাসীয় খলীফাদের হরিজ্ঞানে পূজা করেছিলাম । তাদেরকে ভগবান মনে করেছিলাম । ইহকালীন ক্ষমতা প্রতিপত্তির লোভ-লালসায় আব্বাসীয় খলীফাদের হরি মনে করে ভজে গিয়েছিলাম । পরকালে এসে আমার প্রকৃত চরিত্র অনুযায়ী পিতার দেওয়া নামটি পরিবর্তন করে “শ্রী ভজহরী ঠাকুর” নামধারন করেছি । এবারে বুঝলে তো ? আমি – বিলক্ষন বুঝে গেছি । হে প্রিয় ! আপনি কেমন আছেন ? শ্রী ভজহরী ঠাকুর – সেটা নাহয় পরেই বলি । তবে আমি এখানে মহান আল্লাহর প্রতিটি অঙ্গীকার শতভাগ
সাচ্চা মুমিন এবং পাক্কা কাফির
হিসাবটা কিছুতেই মিলছে না । নামকরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক ইতিহাসে অনার্সে পড়ুয়ারত একজন ছাত্রের মাথাটা বনবন করে ঘুরছে । কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না । মানসিক অশান্তি এতটাই বাড়ছিল যে , কয়েকবার গাজা বা ইয়াবা টানার ইচ্ছে হয়েছিল । বিবেকের প্রচন্ড বাঁধার জন্য নেশার জগতে যায় নাই । চিনি ছাড়া ব্ল্যাক কফির বড় গ্লাসে ধীরে ধীরে চুমুক দিচ্ছে । আর ঠান্ডা মনে ভাবছে যে , ১৫০০ বছর পূর্বে সর্বশক্তিমান আল্লাহ বাস্তব সত্য কথাটি পবিত্র কোরআনে বহু জায়গায় বলেছেন যে , বেশীরভাগ মানুষ বেঈমান , গাদ্দার এবং চরম অকৃতজ্ঞ । দুইদিনের ইহকালীন জীবনে সাময়িক কিছু ভোগ-বিলাস এবং নগদ নারায়নের লোভে ফটাফট চোখ পল্টি দিয়ে দেয় । আমাদের সমাজে যে যত বেশী ক্ষমতাধর , জ্ঞানী এবং জনপ্রিয় সে তত আগে বিক্রী হয়ে যায় । বিক্রী হয়ে যাওয়া লোকটি একবারের জন্য ভাবে না যে , দুইদিনের দুনিয়ায় দম ফুরাইলে ঠুস । হ্যাডফোনে এন্ড্র কিশোরের “হায়রে মানুষ রঙীন ফানুস , দম ফুরাইলে ঠুস ” গানটি চালিয়ে দিয়ে ছাত্রটি ইসলামিক ইতিহাস মনযোগ দিয়ে পড়ছে । পড়তে পড়তে এক জায়গায় দুজনের নাম পেল । হিসাবটা কেন মিলছে না ! প্রথম জন – আবু সুফিয়ান লানতুল্লাহর জঘন্য অপকর্মের ঘটনা সমূহ বিদ্যমান থাকার পরেও কুলাঙ্গারটার নামের শেষে “রাঃআনহু” লাগানো হয়েছে । বদমাশটাকে বিশাল বড় মাপের জলীল-ক্বদর সাহাবীর সনদ দেওয়া হয়েছে । একজন পাক্কা লানতুল্লাহকে কেনইবা “রাঃআনহু” সনদ দেওয়া হইল ? ছাত্রটির খুবই কৌতুহল হইল । কে এই কুখ্যাত আবু সুফিয়ান লানতুল্লাহ ? জীবনের অপকর্মগুলি কি কি ? কোন কোন বদগুনাবলীর জন্য তাকে লানতুল্লাহ বলা হয় । সম্পূর্ন নিরপেক্ষ চোখ দিয়ে ইতিহাস ঘেটে ছাত্রটি যা পেল , তার খুব ছোট্ট সারসংক্ষেপ খতিয়ান । আবু সুফিয়ান লানতুল্লাহ । ১) – রাসুলের (সাঃ) চরম ঘোরতর দুশমন । ২) – রেসালতের দুশমন । ৩) – নবুয়তের দুশমন । ৪) – ইসলামের দুশমন । ৫) – দ্বীনের দুশমন । ৬) – পবিত্র কোরআনের দুশমন । ৭) – মুসলমানের দুশমন । ৮) – নব্য মুসলমানের দুশমন । ৯) – নবীর (সাঃ) বিরুদ্বে বদর , ওহুদ সহ প্রত্যেকটি যুদ্বের নেতৃত্ব দানকারী । ১০) – নবীর (সাঃ) প্রতিটি ষড়যন্ত্রে অগ্রনী ভুমিকা পালন করেছে । ১১) – আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দা নিজে নবীজীর (সাঃ) চাচা হামজার (আঃ) কলিজা কাঁচা চিবিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করেছে । ১২) – গাদীর অর্থাৎ “আলীউন ওয়ালীউল্লাহ” অস্বীকার এবং প্রত্যাখ্যান করেছে । ১৩) – অর্থ-সম্পদ-জীবন বাঁচানোর জন্য মক্কা বিজয়ের পরে লোক দেখানো ভন্ড মুসলমান সেজেছে । ১৪) – খবিশ ওসমান লানতুল্লাহর খেলাফতের সময় নবীজীর (সাঃ) চাচা হামজার (আঃ) কবরে সজোরে লাথি মেরেছে । ১৫) – নিজে ষড়যন্ত্র এবং যুদ্ব করেছে নবীর (সাঃ) বিরুদ্বে , পুত্র ষড়যন্ত্র এবং যুদ্ব করেছে মাওলা আলীর (আঃ) বিরুদ্বে , নাতি হচ্ছে কারবালা হত্যাযজ্ঞের মূল কারিগর । পাঠক , এতসব জঘন্য নিকৃষ্ট কার্যকলাপের পরেও ইসলামের ইতিহাস লেখকগন আবু সুফিয়ান লানতুল্লাহকে শতভাগ “রাঃআনহু” মার্কা মুসলমান বলে আখ্যায়িত করেছে ! এবারে ছাত্রটি দ্বিতীয় আরেক ব্যক্তির বিষয় মনযোগ দিল । দ্বিতীয় জন – হযরত ইমরান (আঃ) । যিনি আবু তালিব (আঃ) নামে পরিচিত । ছাত্রের কৌতুহল হইল । কে এই কম আলোচিত মহানবীর (সাঃ) চাচা মাওলা আবু তালিব (আঃ) ? কি তাঁর জীবনের কর্ম ? ইতিহাস ঘেটে ছাত্রটি যা পেল , তার খুব ছোট্ট সারসংক্ষেপ । হযরত ইমরান (আঃ) । ১) – পবিত্র ক্বাবা গৃহের তত্বাবধায়ক । ২) – রেসালতের মূল হেফাজতকারী । ৩) – মহানবীর (সাঃ) মূল লালন-পালনকারী । ৪) – ইসলামের সর্বপ্রথম প্রকাশ্য দাওয়াত জুল আশিরার একমাত্র আয়োজনকারী । ৫) – তাঁর পুত্রের (আঃ) আগমনের জন্য পবিত্র ক্বাবা গৃহ ধন্য হয়েছে । ৬) – মহানবীর (সাঃ) সর্বপ্রথম বিবাহের কাজী ও মূল আয়োজনকারী । ৭) – আল্লাহ কতৃক নিযুক্ত ইমামত ধারার পিতা ও দাদা । ৮) – নবীজীর (সাঃ) সার্বক্ষনিক সুখ-দুঃখের একমাত্র সাথী ও পাহারাদার । ৯) – ওনার জীবদ্দশাতে নবীজীকে (সাঃ) হিজরত করতে হয় নাই । ১০) – ওনারাই এক পুত্র হিজরতের রাতে নবীজীর (সাঃ) বিছানায় শয়ন করে রেসালত বাঁচিয়েছেন । ১১) – ওনারাই নামে পবিত্র কোরআনে সুরা আলে-ইমরান নাজিল হয়েছে । ১২) – ওনারই বংশ থেকে মহান আল্লাহ খেলাফত এবং ইমামত ধারার জন্য পবিত্র বারজন খলীফা এবং ইমামগনকে নিযুক্ত করেছেন । ১৩) – ওনারাই বংশ থেকে মহান আল্লাহ আহলে বাইতের (আঃ) সকল সদস্যগনকে নিযুক্ত করেছেন । ১৪) – প্রতি নামাজের মধ্যে ওনারই বংশধরের প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে । ১৫) – শেব এ আবু তালিবের – ইমরান (আঃ) ইনিই যিনি নবীজীকে (সাঃ) রক্ষা করেছেন । ১৬) – সর্বোপরি আজকের ইসলাম – এই আবু তালিবের অবদান । ১৭) – ওনারই পুত্র , নাতি-পোতারা হলেন – আল্লাহর আশ্রয়স্থল ও নিরাপত্তা , আল্লাহর দূর্গ , আল্লাহর করুনা , রহমত , আল্লাহর হুজ্জাত , আল্লাহর দলীল , আল্লাহর পথ , আল্লাহর কথা , আল্লাহর ইজ্জত , জান্নাত ও জাহান্নামের বিতরণকারী , আল্লাহর পথপ্রদর্শক , আল্লাহর হুকুম , বিচার দিবসের মালিক , সকল নূরের নূর , আল্লাহর হাত , আল্লাহর জিহ্বা , আল্লাহর কান , আল্লাহর চোখ , আল্লাহর চেহারা । ১৮) – ওনারই পুত্র মাওলা আলীর (আঃ) ওয়ালায়াহ বা বেলায়েত হচ্ছে আল্লাহর ওয়ালায়াহ । যেটা সমগ্র সৃষ্টিজগত বিশেষ করে মানব ও জ্বীন জাতির উপর ওয়াজীব বা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং তা এভাবেই থাকবে যতক্ষণ না বিচারের দিন আসে । এবং যারা মাওলা আলীর (আঃ) অনুগত বা বাধ্য নয় আল্লাহ স্বয়ং নিজে তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন I ১৯) – ওনারাই পুত্র , নাতি-পোতাদের মহান কুরবানীর জন্য “ইসলাম আভি তাক জিন্দা হোতা হ্যায় হার কারবালাকা বাদ” । এতসব সুমহান কার্যকলাপের পরেও ইসলামের ইতিহাস লেখকগন ওনাকে শতভাগ কাফির হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন ! সত্য সত্যই ছাত্রটির তো মাথা খারাপ হবার দশা । এ কেমনতর ফয়সালা ? সারাটা জীবন মহানবীর (সাঃ) বিরুদ্বে যুদ্ব ষড়যন্ত্র করেও কুলাঙ্গার আবু সুফিয়ান লানতুল্লাহ একজন রাঃআনহু মার্কা সাহাবা কাম মুসলমান ! সারাটা জীবন-যৌবন , সংসার , পরিবার পরিজন , অর্থবিত্ত সকল কিছুই নবীজীর (সাঃ) মহব্বতে বিশ্বনবীর (সাঃ) পবিত্র চরনতলে অকাতরে বিনা স্বার্থে বিলিয়ে দেবার পরেও মাওলা ইমরান (আঃ) হয়ে গেলেন কাফির !! আরও এক গ্লাস ব্লাক কফিতে চুমুক দিয়ে ছাত্রটি তখন মহানবীর (সাঃ) একটি হাদিস খুঁজে পেল । হাদিসের বক্তব্য অনেকটা এরকম যে , প্রতিটি মানব শিশুই ইসলামের ফিৎরাতের উপর জন্ম নেয় । জন্মের পর শিশুটির লালন পালনকারী যে ধর্ম অনুসরন করে সেই ধর্মেই শিশুটি বেড়ে ওঠে । এজন্যে ঐ লালন-পালনকারী ব্যক্তিই মূলত দায়ী হয় । এবারে ছাত্রটি মনে বড় শান্তি পেল । প্রতিপালকের নিকটে ছাত্রটি শুকরিয়া জানালো এ কারনে যে , হযরত আবু তালিব (আঃ) দুটি শিশুকে লালন-পালন করে বড় করেছেন । একজন হলেন – হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ,
আবু লাহাব লানতুল্লাহর দুইহাত প্রসঙ্গে
মাওলার (আঃ) স্মরনে শুরু করিলাম । ” — ধ্বংস হোক , আবু লাহাবের উভয় হাত । আর ধ্বংস হোক সে নিজেও । কোন কাজে আসবে না তার ধন-সম্পদ , যা সে উপার্জন করেছে । অচিরেই সে দগ্ধ হবে লেলিহান আগুনে । এবং তার স্ত্রীও । যে কাঠ (খড়ি) বহনকারিণী (পরনিন্দুক) । তার (স্ত্রীর) গলায় বাঁধা থাকবে লৌহ শৃঙ্খলের রজ্জু (পাকানো খর্জুরের আঁশের মত) —“। সুরা – মাসাদ (লাহাব) / ১১১ । প্রিয় পাঠক , পবিত্র কোরআনের এটা ১১১ তম সুরা । মহান আল্লাহর প্রতিটি কথাতেই শিক্ষনীয় কিছু থাকবেই থাকবে । সঙ্গত কারনেই আপনার বাড়তি মনযোগ চাইছি , প্লীজ । সুরাটিতে মহান আল্লাহ নিজে আবু লাহাব লানতুল্লাহর দুইটি হাতের ধ্বংস চাইলেন কেন ? এখানে তো আবু লাহাবের পা , চোখ , কান ইত্যাদির ধ্বংস চাইতে পারতেন । আবু লাহাবের শরীরের অন্য অঙ্গগুলির ধ্বংস না চেয়ে শুধুমাত্র হাত দুটির ধ্বংস কেন চাওয়া হচ্ছে ? নিশ্চয়ই এর পেছনে কোন না কোন কারন আছে ! শরীরের এত অঙ্গ থাকতে শুধু হাতদুটির ধ্বংস চাওয়া হচ্ছে কেন ? আসুন , একটু বিশ্লেষন করি – কি সেই নেপথ্য কারন ? আল্লাহর রাসুল (সাঃ) স্বয়ং নিজে যাঁকে (আঃ) দেখামাত্র দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করতেন , তাঁকে মাওলা ইমরান (আঃ) বলা হয় । যিনি হযরত আবু তালিব (আঃ) নামে সর্বাধিক পরিচিত । আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) আশ্রয়দাতা , সার্বক্ষনিক রক্ষাকর্তা এবং লালন-পালনকর্তা প্রানপ্রিয় চাচা হযরত ইমরানের (আঃ) সার্বিক সাহায্য সহযোগিতা , আর্থিক সহায়তা ও প্রত্যক্ষ তত্বাবধানে আনুষ্ঠানিকভাবে সর্বপ্রথম প্রকাশ্যে ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্য হযরত আবু তালিবের (আঃ) গৃহে এক বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হইল । এই অনুষ্ঠানেই আনুষ্ঠানিকভাবে সর্বপ্রথম ইসলাম ধর্মের প্রকাশ্য দাওয়াত দেওয়া হইল । হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) মহান আল্লাহ প্রেরিত একজন রাসুল – সে ঘোষনা দেওয়া হইল । মক্কা নগরীর সকল গোত্রপতি ও সকল নেতা উপনেতাসহ মান্যগন্য সকলকেই নিমন্ত্রন করা হয়েছিল । পর পর তিনদিন সে অনুষ্ঠান চলে । সাথে ভুড়িভোজের আয়োজনও ছিল । ইতিহাসে অনুষ্ঠানটি “দাওয়াতে জুল আশিরা” নামে সুপরিচিত । যাইহোক , অনুষ্ঠানে ভরপুর খাওয়া দাওয়া শেষে রাসুল (সাঃ) আমন্ত্রিত সকল অতিথিগনের উদ্দেশ্যে নিজেকে মহান আল্লাহ কতৃক প্রেরিত একজন রাসুল হিসাবে উপস্থাপন করলেন । এই ঘোষনা শোনামাত্র অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাসুলের (সাঃ) চাচা আবু লাহাব লানতুল্লাহ তার দুইহাত উঁচু করে ঐ ঘোষনার তীব্র প্রতিবাদ করা শুরু করে দিল । আবু লাহাব লানতুল্লাহর দুইহাত উঁচু করে তীব্র চীৎকার ও মারমুখি আচরনের প্রেক্ষিতে অনুষ্ঠানে বেশ হট্টগোল শুরু হল । এমতাবস্থায় অনুষ্ঠানের শান্তি শৃংখলা বজায় রাখার স্বার্থে বাঘের মত গর্জে উঠলেন রাসুলের (সাঃ) সার্বক্ষনিক নিরাপত্তাদাতা মাওলা ইমরান (আঃ) । বজ্র কঠিন ভাষায় আবু লাহাব লানতুল্লাহকে প্রচন্ড হুংকার দিয়ে বলে উঠলেন , “ওহে লাহাব ! হাতদুটি নামিয়ে চুপ করে বসে পড় ও আমার ভাতিজা মুহাম্মাদের (সাঃ) কথা শুনে যাও এবং তোর ঐ হাতদুটি যেন ধ্বংস হয়ে যাক –” ইত্যাদি ইত্যাদি । মহান আল্লাহ সাথে সাথে হযরত ইমরনের (আঃ) এই প্রার্থনা কবুল করলেন । এবং কেয়ামত পর্যন্ত প্রকাশ্য সকলের সম্মুখে খুল্লামখুল্লা আবু লাহাব লানতুল্লাহর প্রতি অভিশাপ ও লানত প্রদান অব্যাহত রাখলেন । মহান আল্লাহ এই ঘটনায় একটি বিষয় পরিস্কারভাবে বলে দিলেন যে , রাসুল (সাঃ) এবং আহলে বাইতের (আঃ) প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ শত্রু সে যেই হোক না কেন – লানতযোগ্য । এখানে সামান্য পরিমান সামাজিক সম্প্রীতি প্রদর্শনের সুযোগ নাই । এছাড়া আবু লাহাব লানতুল্লাহর হাত দুটি ধ্বংসের আরও কারন আছে । মহানবী (সাঃ) যখনই কোন কাজে বাহিরে বেরুতেন তখনই সময় সুযোগমত লাহাব লানতুল্লাহ তার দুইহাত দিয়ে মহানবীর (সাঃ) প্রতি সজোরে ছোট ছোট পাথরখন্ড নিক্ষেপ করত যাতে করে নবীজী (সাঃ) মারাত্মকভাবে আহত হয় । একবার তো নামাজে সেজদারত অবস্থায় রাসুলের (সাঃ) পবিত্র মাথার উপর উটের নাঁড়িভূঁড়ি চাপিয়ে দিয়ে নবীজীকে (সাঃ) দমবন্ধ করে হত্যা করতে চেয়েছিল । এসব জঘন্য অপকর্মগুলো লাহাব তার দুই হাত দিয়েই সম্পাদন করত । পাঠক , গভীর মনযোগ সহকারে খেয়াল করুন যে , আবু লাহাব কিন্ত মহান আল্লাহর সরাসরি বিরোধীতা করে নাই । প্রচন্ড বিরোধীতা করেছিল রাসুলের (সাঃ) প্রতি । বিরোধীতা সত্বেও হযরত আবু তালিবের (আঃ) তীব্র নজরদারির ফলে মহানবীকে (সাঃ) হত্যা করার মত দুঃসাহস করে নাই আবু লাহাব । আবু লাহাব ছিল রাসুলের (সাঃ) খুবই ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ও সম্পর্কে চাচা । এবারে মূল কথায় আসি – দয়া করে আমায় বুঝিয়ে বলবেন কি ! রাসুলের (সাঃ) ঘনিষ্ঠ আত্মীয় এবং সম্পর্কে আপন চাচা হয়েও আবু লাহাব লানতুল্লাহ নিজেকে মহান আল্লাহর তীব্র ক্রোধ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারল না । পক্ষান্তরে , রাসুলের (সাঃ) কোন রক্তীয় আত্মীয় কুটুম নন । রাসুলের (সাঃ) বংশের বাহিরের লোক যারা নিজেদের কন্যাকে রাসুলের (সাঃ) ঘরে দিয়ে আত্মীয় হয়েছিল বটে ! বৈবাহিক সূত্রে এই জাতীয় আত্মীয়গন যারা রাসুলকে (সাঃ) যুদ্বক্ষেত্রে সম্পূর্ন একা ফেলে রেখে পালিয়ে গিয়েছিল । পাহাড়ের গুহাতে রাসুলের (সাঃ) সঙ্গে একসাথে থাকার পরেও ভয় পেয়ে ভেউ ভেউ করে কেঁদে ফেলেছিল । রাসুলের (সাঃ) পরিস্কার হুকুম অমান্য করে ওসামার নেতৃত্বে যুদ্বে না যেয়ে মদীনার উপকন্ঠে পালিয়েছিল । খাতা-কলম না দেবার জন্য রাসুল (সাঃ) যাদেরকে নিজ গৃহ থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিলেন । বিষ মিশ্রিত ঔষধ সেবন করিয়ে যারা নবীকে (সাঃ) খুন করল । মদীনাতে অবস্থান এবং শাহাদাতের সংবাদ জানা সত্বেও রাসুলের (সাঃ) জানাজা দাফনে অংশগ্রহন না করে সকিফাতে চলে গেল । সকিফাতে অবস্থান করে রাসুলের (সাঃ) আদেশ অমান্য করে মাওলা আলীর (আঃ) ন্যায্য অধিকার হরন করে অবৈধভাবে প্রথম খলীফা হয়েছিল । নবীকন্যা ফাতেমা যাহরার (সাঃআঃ) বৈধ পৈত্রিক সম্পত্তি বাগে-ফাদাক অবৈধভাবে ছিনিয়ে নিয়েছিল । পবিত্র গৃহে অগ্নিসংযোগ করে নবীকন্যা ফাতেমা যাহরাকে (সাঃআঃ) হত্যা করেছিল । নবীকন্যা ফাতেমা যাহরা (সাঃআঃ) যাদেরকে প্রকাশ্যে লানত দিয়েছিলেন এবং তাদের সাথে কথাবলা বন্ধ করা সহ সকল সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন । নবীকন্যা ফাতেমা যাহরা (সাঃআঃ) কেয়ামতের ময়দানে রাসুলের (সাঃ) নিকট তাদের বিরুদ্বে সরাসরি নালিশ জানাবেন । নবীকন্যার (সাঃআঃ) ওসিয়ত মোতাবেক নবীকন্যার (সাঃআঃ) জানাজা দাফনে অংশগ্রহনের অনুমতি পায় নাই । মদীনাতে অবস্থান করা সত্বেও মাওলা আলী (আঃ) নিজে ওদের জানাজা-দাফনে অংশগ্রহন করেন নাই । সর্বোপরি গাদীর অর্থাৎ “আলীউন ওয়ালীউল্লাহ” যারা সরাসরি অস্বীকার এবং প্রত্যাখ্যান করিল ! রাসুলের (সাঃ) শাহাদাতের পর এই জাতীয় আত্মীয়বর্গ কোন বিধানবলে “”সিদ্দিক” , “ফারুকে আযম” , “জুন্নুরাইন” , “রাঃআনহু” খেতাবপ্রাপ্ত “আশারা মোবাশশরার” অন্তর্ভুক্ত হইল ? এইসব কুলাঙ্গার খবিশ আত্মীয়বর্গ কেন লানতের অন্তর্ভুক্ত হইবে না ? ” — নিশ্চয়ই যারা আল্লাহকে এবং তাঁর রাসুলকে কষ্ট দেয় আল্লাহ তাদের ইহকাল এবং পরকালে লানত বা অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্য মর্মান্তিক শাস্তি প্রস্তত রেখেছেন —- ” । সুরা – আহযাব / ৫৭ । ” —– আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী এবং কাফেরদেরকে জাহান্নামের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন । আর তারা সেখানে চিরকাল থাকবে এবং এটাই তাদের জন্য যথেষ্ট এবং আল্লাহ তাদের প্রতি
ইতিহাস থেকে এক ঝলক
জগত জননী মা যাহরা সালামুল্লাহ’আলাইহা বলেন , “আল্লাহর কসম ! আমি (সাঃআঃ) ঐ দুই লানাতুল্লাহকে তাদের কবর থেকে বের করে আগুনে নিক্ষেপ করিব । তারপর আমি (সাঃআঃ) তাদের অর্থাৎ লানাতুল্লাদের ছাই ধ্বংস করিব । অথবা তাদের সমুদ্রে প্রেরণ করিব I” সূত্র – বিহারুল আনোয়ার , খন্ড- ৫০ । দ্রষ্টব্য – দুই লানাতুল্লাহ যথাক্রমে – আবু বকর লানাতুল্লাহ জাহান্নামী এবং ওমর ইবনে খাত্তাব লানাতুল্লাহ জাহান্নামী I আরও জেনে নিন । নামধারী , লেবাসধারী , মুখোশধারী , মুশরিক, কাফির , সীমালঙ্ঘনকারী , গাদীর ঘোষনার সরাসরি বিরোধীতাকারী , রাসুল (সাঃ) এবং জগত জননী মা যাহরার (সাঃআঃ) হত্যাকারী অর্থাৎ সকিফা দলের আদর্শিক পিতা আবু বকর লানাতুল্লাহ এবং ওমর লানাতুল্লাহ প্রসঙ্গে – মাওলা মুহম্মাদ আল বাকির (আঃ) বলেছেন , প্রতি হজ্বের মৌসুমে দুই সীমালঙ্ঘনকারী ও শপথ ভঙ্গকারী লানাতুল্লাহকে যখন কবর থেকে বের করে আনা হয় তখন তাদের লানাতুল্লাহদের দেহ (লাশ) সতেজ থাকে । এবং তাদের লানাতুল্লাহদের ঝুলিয়ে দেওয়া হয় জামারাতে অর্থাৎ প্রস্তরাঘাতের স্থানে । কিন্ত ইমামুজ্জামান (আঃ) ছাড়া তাদের আর কেউ দেখতে পায় না। তারপর প্রথম লানাতুল্লাহকে দুইবার ইমামুজ্জামান (আঃ) নিজে পাথর ছুড়ে মারেন এবং দ্বিতীয় লানাতুল্লাহকে তিনবার পাথর ছুড়ে মারা হয় । কারন সে লানাতুল্লাহ একজন বড় মুরতাদ এবং আমাদের (আঃ) বিরুদ্ধে শত্রুতা প্রকাশ করে । অথচ প্রথমটি লানাতুল্লাহ ছিল আরও ধূর্ত প্রকৃতির । দ্রষ্টব্য – দুই লানাতুল্লাহ যথাক্রমে – আবু বকর লানাতুল্লাহ জাহান্নামী এবং ওমর ইবনে খাত্তাব লানাতুল্লাহ জাহান্নামী I “জিয়ারতে আশুরা” থেকে কয়েকটি বাক্য — “অতএব আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক তাদের প্রতি যারা আপনাদের প্রতি জুলুম ও নিপীড়নের ভিত্তি স্থাপন করেছে । এবং আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক ঐ গুষ্ঠির প্রতি যারা আপনাদেরকে আপনাদের প্রাপ্য স্থান থেকে বলপ্রয়োগে সরিয়ে দিয়েছে । আল্লাহ ও আপনাদের কাছে আশ্রয় নিচ্ছি তাদের সাথে সকল প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং তাদের সমর্থক , অনুসারী ও তাদের বন্ধুদের সাথে । হে আল্লাহ ! বিশেষভাবে আমার পক্ষ থেকে অভিশাপ দিন “প্রথম জালিমকে” — যে এর সূচনা করেছে । এরপর অভিশাপ দিন “দ্বিতীয়জন” , “তৃতীয়জন” ও “চতুর্থজনকে” । হে আল্লাহ ! অভিশাপ দিন পঞ্চমজন ইয়াজিদকে এবং অভিশাপ দিন উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ ও মারজানার পুত্রকে এবং ওমর ইবনে সাদ ও শীমারকে এবং আবু সুফিয়ানের বংশধর , জিয়াদের বংশধর ও মারওয়ানের বংশধরকে — কেয়ামত দিবস পর্যন্ত । মহান আল্লাহ , ফেরেশতাগন এবং মুমিনগন সকলে একসাথে রাসুল (সাঃ) এবং পবিত্র আহলে বাইতগনের (আঃ) প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ্য শত্রুদের প্রতি মনখুলে ঘৃনা এবং লানত প্রদান সর্বক্ষন অব্যাহত রেখেছেন । ” — নিশ্চয়ই যারা আল্লাহকে এবং তাঁর রাসুলকে কষ্ট দেয় আল্লাহ তাদের ইহকাল এবং পরকালে লানত বা অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্য মর্মান্তিক শাস্তি প্রস্তত রেখেছেন —- ” । সুরা – আহযাব / ৫৭ । ” —- নিশ্চয়ই যে স্পষ্ট প্রমান এবং পথনির্দেশ আমরা অবতীর্ন করেছি , আমরা গ্রন্থে মানুষের জন্য স্পষ্টভাবে তা বর্ননা করার পরও যারা তা গোপন করে , তারাই সেসব লোক যাদের উপর আল্লাহ অভিসম্পাত করেন এবং অভিশাপকারীরাও অভিসম্পাত করে —- ” । সুরা – বাকারা / ১৫৯ । “—যারা ঈমান আনার পর এবং রাসূলকে সত্য বলে স্বাক্ষ্য দেয়ার পর এবং তাদের নিকট প্রমাণ এসে যাওয়ার পর কাফের হয়েছে । আর আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে হেদায়েত দান করেন না । এমন লোকের শাস্তি হল আল্লাহ ফেরেশতাগণ এবং মানুষ সকলেরই (লানত) অভিসম্পাত —– ।” সুরা – আলে-ইমরান / ৮৬ , ৮৭ । ” —– আল্লাহ মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী এবং কাফেরদেরকে জাহান্নামের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন । আর তারা সেখানে চিরকাল থাকবে এবং এটাই তাদের জন্য যথেষ্ট এবং আল্লাহ তাদের প্রতি লানত প্রদান করেছেন এবং তাদেরই জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী শাস্তি —- ” । সুরা – তওবা / ৬৮ । ” — আল্লাহ কাফেরদের (অবিশ্বাসী) ওপর লানত (অভিসম্পাত) করেছেন এবং তাদের জন্য প্রজ্বলিত আগুন প্রস্তত রেখেছেন । যেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে এবং তারা না কোন অভিভাবক পাবে আর না কোন সাহায্যকারী —“। সুরা – আহযাব / ৬৪ , ৬৫ । এমনকি ব্যক্তি বিশেষের প্রতিও মহান আল্লাহ তাঁর প্রচন্ড অভিশাপ ও ক্রোধ বর্ষণ করেছেন । ” — ধ্বংস হোক , আবু লাহাবের উভয় হাত, আর ধ্বংস হোক সে নিজেও । কোন কাজে আসবে না তার ধন-সম্পদ , (এমন কি) যা সে উপার্জন করেছে । অচিরেই সে দগ্ধ হবে লেলিহান আগুনে । এবং তার স্ত্রীও । যে কাঠ (খড়ি) বহনকারিণী (পরনিন্দুক) । তার (স্ত্রীর) গলায় বাঁধা থাকবে লৌহশৃঙ্খলের রজ্জু (পাকানো খর্জুরের আঁশের মত) —“। সুরা – লাহাব । বিঃদ্রঃ- সুরাটি আবু লাহাবের মৃত্যুর দশ বছর পূর্বে নাযিল হয় । বাস্তবিক অবস্থা যখন এরকম তাহলে ঘৃনা বা লানত প্রদান করার ক্ষেত্রে আমি কেনইবা এত কুন্ঠিত বা ইতস্তত করি ? বিদায়বেলা কিছু সেকুলার পন্ডিত এবং দাবীদার ভন্ড আলেমগনের প্রকৃত স্বরুপ উম্মোচন করছি যে , নিজেদের আপনজনের শত্রুদের বেলায় বিন্দুমাত্র আপোষ বা ছাড় নাই । সর্বশক্তি নিয়োগ এবং বড় বড় উকিল-মোক্তারের সাহায্যের বিনিময় নিজেদের আপনজনের শত্রুদের ভিটায় লালবাতি জ্বালিয়ে দেবেই দেবে । সমস্যা নাই , এটাই করা উচিত । পবিত্র কোরআন এই শিক্ষা দেয় । আফসোস ! রাসুল (সাঃ) এবং আহলে বাইতগনের (আঃ) প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ শত্রুগনের বেলায় তথাকথিত সেকুলার পন্ডিত এবং ধর্মীয় আলেমগনের কথিত ঐক্যের নামে চুলকানি , এলার্জী , হাঁপানী , আপোষকামী , সামাজিক সৌহার্দ , সম্প্রীতি ইত্যাদি চেতনার দন্ড দুম করে জাগ্রত হয়ে যায় । মুখে মুখে আলী আলী বলে ফেনা তুলে ফেলে । আদতে এরা সকলেই সলিড বাটপার ও মুনাফিক । এতক্ষন ধৈর্য সহকারে লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ ও সালাম রইল । সদা ভাল থাকুন । আজ তবে এইটুকু থাক , বাকী কথা পরে হবে । ধন্যবাদান্তে , সাকিল আহমেদ । ইয়া সাহেবুজ্জামান (আঃ) আদরিকনী আদরিকনী , আল্লাহুমা সাল্লে আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম , আল্লাহুম্মা লান হুম জামিয়ান , লানতুল্লাহ আলা কওমিজ জালেমিন ।