বহুদিন থেকে বিভিন্ন ঘরোয়া আলাপ এবং ইদানীং সামাজিক মাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুকে ওহাবী মতাদর্শে প্রভাবিত প্রচুর সুন্নি কাম ওহাবী মুসলমান ভাই (সকল সুন্নি ভাইরা নয়) বার ইমামীয়া শীয়াদেরকে খুব বিশ্রীভাবে গালাগাল করেন । যদিও এটা ওনাদের বহু পুরানো ট্রাডিশান । কেননা এই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত তথা সুন্নি মাযহাবের জন্মদাতা মুয়াবিয়া স্বয়ং নিজে মাওলা আলীর (আঃ) উপর গালিগালাজ করার প্রথা চালু করেছিল । সেক্ষেত্রে গালাগালি দেওয়ার বিষয়টা তাদের অস্থিমজ্জায় মিশে আছে । কথা প্রসঙ্গে বিষয়টি এখানে জানিয়ে রাখা ভাল যে , পৃথিবীর কোন সুস্থ রুচিবান ব্যক্তি অযথা অন্য কাউকে বিনা কারনে গালাগাল দেওয়া থেকে নিজেকে সম্পূর্ন বিরত রাখেন । এছাড়া পবিত্র কোরআনেও গালাগাল করা সম্পূর্নরুপে নিষেধ বা হারাম ঘোষনা করা হয়েছে । বার ইমামীয়া শীয়ারা পবিত্র কোরআনের এই বিধানটি মেনে চলে । ” —- এবং তোমরা তাদের গালমন্দ করিও না যাদের তারা আল্লাহকে ছেড়ে আহবান করে । কেননা তারাও অজ্ঞতার কারনে শত্রুতাবশত আল্লাহকে গালমন্দ করিবে —– ” । সুরা – আনআম / ১০৮ । আমাদের কিছু ওহাবী কাম সুন্নি মুসলমান ভাইরা (সকল সুন্নি ভাইরা নয়) বার ইমামীয়া শীয়াদেরকে একটা গালি দিয়ে হেভি মজা পেয়ে থাকে । গালিটার মূল বক্তব্য এরকম যে , “শীয়ারা হচ্ছে জারজ কাফের সন্তান” । যে যার বংশ মর্যাদা ও শিক্ষা দীক্ষা অনুযায়ী গালি দিতেই পারে । এ বিষয় আমার বিন্দুমাত্র মাথা ব্যাথা নাই । কারন রাস্তায় যে কুকুরগুলো পাগল হয়ে যায় সেগুলো দেদারসে মানুষকে কামড়ায় । কিন্ত মানুষ কখনও পাগলা কুকুরকে কামড়ায় না । সম্মানীয় পাঠক , আমি ভাবছিলাম অন্য প্রসঙ্গ । বার ইমামীয়া শীয়াদেরকে যে সকল ওহাবী কাম সুন্নি মুসলমান ভাইরা অজ্ঞতাহেতু জারজ বলে গালিটা দিচ্ছেন – শুধুমাত্র সেই সকল সুন্নি ভাইদের কাছে অধমের পক্ষ থেকে বিনীতভাবে একটা জিজ্ঞাস্য আছে । জিজ্ঞাসাটা হইল – আপনি বা আপনারা যারা হেভী উৎসাহ সহকারে বার ইমামীয়া শীয়াদেরকে জারজ বলছেন । হে বিজ্ঞ মহাশয় ! একটিবার আপনি কি ভেবে দেখছেন যে , আপনি নিজেই একজন “জারজ সন্তান” ! দয়া করে রেগে যাবেন না ! আপনাকে জারজ বলার জন্য আমি অবশ্যই দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী । কিন্ত আপনাকে জারজ কেন বললাম – যুক্তিটা একটু শুনুন , প্লীজ । আপনাকে যদি প্রশ্ন করি যে , মানব বংশ কিভাবে বিস্তার লাভ করিল ? চট করে বলবেন যে , আমাদের সকলের আদিপিতা হযরত আদমের (আঃ) পত্মী অর্থাৎ আদিমাতা হযরত হাওয়ার (সাঃআঃ) গর্ভে জোড়ায় জোড়ায় যমজ ভাইবোন ভুমিষ্ঠ হয়েছিল । ঐ জমজ ভাইবোন যখন বয়ঃপ্রাপ্ত হল তখন একই মায়ের গর্ভের আপন ভাইবোনের মধ্যে বিবাহ দেওয়া হয়েছিল । এবং সেভাবেই মানব বংশ বিস্তারের সূত্রপাত হয়েছিল । সার সংক্ষেপে মানব বংশ বিস্তার প্রসঙ্গে – এটাই হল আপনাদের মূল বিশ্বাস বা আক্বীদা । (নাউযুবিল্লাহ) তো জনাব ! পবিত্র কোরআনের সুস্পষ্ট বিধান মোতাবেক আপন ভাইবোনের মধ্যে বিবাহ সম্পূর্ন হারাম । জেনেশুনে এই জাতীয় হারাম বিবাহের মাধ্যমে যে সন্তান ভুমিষ্ঠ হবে সে সন্তানও জারজ । কারন বিবাহ যেখানে নাজায়েজ বা হারাম সেখানে ঐ হারাম বিবাহের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া সন্তান হারাম বা জারজ হবে , এটাই স্বাভাবিক । ” —- তোমাদের জন্য নিষিদ্ব করা হয়েছে — তোমাদের মাতাগন , তোমাদের কন্যাগন , তোমাদের ভগ্নিগন , ফুফুগন , খালাগন , ভ্রাতুস্পুত্রিগন , ভাগ্নিগন এবং তোমাদের স্তন্যদানকারী মাতারা , তোমাদের দুধ ভগ্নিগন , তোমাদের স্ত্রীদের মাতাগন এবং তোমাদের কোলে পালিত তোমাদের সৎ কন্যাগন যারা তোমাদের সেই স্ত্রীদের গর্ভজাত যাদের সাথে তোমরা সহবাস করেছ , তবে যদি তাদের সাথে সহবাস না করে থাক তাহলে কোন দোষ নেই এবং তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রীদের , আর দুইজন ভগ্নিকে একসাথে বিবাহ করা , কিন্ত অতীতে যা হয়ে গেছে । নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল , অনন্ত করুনাময় —- ” । সুরা – নিসা / ২৩ । এখন হয়তো আপনি বলবেন যে , সেইসময় এই বিধান চালু থাকলেও পরবর্তীতে মহান আল্লাহ সেই বিধান বাতিল করেছেন । এই যুক্তিটাও ধোপে টিকল না । কারন পবিত্র কোরআন বলছে যে , “আল্লাহর নীতি পূর্ব হতেই এরূপ এবং আল্লাহর নীতিতে কোন পরিবর্তন নাই ।” সূরা – ফাতহ / ২৩ । “ – আল্লাহর বিধানে তুমি কখনই কোন পরিবর্তন পাইবে না —- ” । সুরা – আহযাব / ৬২ । আর আপনি পবিত্র কোরআনে বর্নিত বিধানের বিপরীতে অবস্থান নিয়ে বলছেন যে , অতি গুরুত্বপূর্ন বিধান নাকি পরিবর্তনশীল ! পবিত্র কোরআনে বর্নিত বিধান বহির্ভূত কথা বলার অধিকার কোথায় পাইলেন ? আমি শুধু বিনয়ের সাথে আপনাকে স্মরন করিয়ে দিতে চাই যে , অজ্ঞতা বা হিংসার বশবর্তী হয়ে অপরকে জারজ না বলে নিজে বহুপূর্বে বংশ পরিক্রমায় জারজের কারখানা থেকে জারজ হিসাবে পয়দা নিয়েছেন , সেদিকটা একটু খেয়াল করুন । কারন আপনি নিজেই এই বিষয়টি স্বীকার করেন যে , হযরত আদম (আঃ) ও হযরত হাওয়া (সাঃআঃ) থেকে যমজ ভাইবোন জন্ম হয় এবং সেই আপন ভাইবোনের মধ্যে বিবাহের মাধ্যমেই আপনাদের বর্তমান মানব বংশধারার সূত্রপাত হইয়াছে ! আপনার লালনকৃত বিশ্বাসের সূত্র ধরেই আমি যদি আপনাকে জারজ বলি , সেটা কি আমার অন্যায় বলা হইবে ? এ প্রসঙ্গে আপনাকে একটা তথ্য দেই , বার ইমামীয়া শীয়ারা এই জাতীয় জঘন্য ঘৃন্য ডাঁহা মিথ্যা ফর্মুলা বিশ্বাস করে না । এই জাতীয় জঘন্য মিথ্যা কথা চিন্তা করাও মহাপাপ । কারন মহান আল্লাহ কখনও অশ্লীল বা অবৈধ কর্ম করেন না । তিনি অতীব পবিত্র এবং মহান সত্বা । মহান আল্লাহ কখনও অশ্লীল এবং হারাম কাজের নির্দেশ দিতে পারেন না । ” — (হে রাসুল) বলে দিন , নিশ্চয়ই আল্লাহ কখনও অশ্লীল কাজের আদেশ করেন না । তোমরা কি আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলছ , যে সম্বন্ধে তোমাদের কোন জ্ঞান নাই — “? সুরা – আরাফ / ২৮ । বার ইমামীয়া শীয়াদের কাছে মানব বংশ বিস্তারের বিষয়টা খুবই স্বচ্ছ এবং পবিত্র । যদিও শীয়াদের বিশ্বাসটা এখানে মূল প্রতিপাদ্য বিষয় নয় । এই প্রসঙ্গে অন্য একদিন বিস্তারিত আলাপ হবে , ইনশাল্লাহ । পরিশেষে যা বলতে চাই – যে সমস্ত ওহাবী কাম সুন্নি ভাইরা বার ইমামীয়া শীয়াদেরকে জারজ বলেন , দয়া করে ওনারা এই বিষয়টি যেন ভুলে না যান যে , আপনাদেরই বিশ্বাস মতে আপনি নিজেই একজন নির্ভেজাল জারজ সন্তান ! অতএব অন্যের ঘরে ঢিল ছুড়বার আগে নিজের চেহারাটা একবার আয়নাতে দেখুন , প্লীজ । একটি আকুল নিবেদন – শরীরে যদি বিন্দুমাত্র বাবা আদমের (আঃ) রক্ত প্রবাহিত থাকে তাহলে দয়া করে অন্যকে ফটাফট কাফের , বাতিল , জারজ ইত্যাদি অশ্রাব্য গালাগাল দেওয়া থেকে বিরত থাকুন । সত্যকে জানুন ও অজ্ঞতাকে দূর করুন । এতক্ষন ধৈর্য সহকারে লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ ও সালাম রইল । সদা ভাল থাকুন । আজ তবে এইটুকু থাক , বাকী কথা পরে হবে । ধন্যবাদান্তে , সাকিল আহমেদ । ইয়া সাহেবুজ্জামান (আঃ) আদরিকনী আদরিকনী
রাফেযী এবং শীয়া সমাচার
প্রাত্যাহিক জীবনে বেশীরভাগ সুন্নি , ওহাবি ও আহলে হাদিসের মুসলমান ভাইয়েরা বার ইমামীয়া শীয়াদেরকে কথায় কথায় “তুই রাফেযী” – কথাটি বেশ গর্বভরে বলে থাকেন । কথাটি ওনারা অপমান , ঠাট্টা-মশকরা করার জন্য বলে থাকেন । এবং এই কর্মটি করে বেশ তৃপ্তি বোধ করেন বটে ! প্রিয় পাঠকবন্ধু , আসুন আমরা আজ নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে রাফেযী এবং শীয়া প্রসঙ্গে অল্প বিস্তর আলাপ আলোচনা করি । ওনারা “রাফেযী” কথাটিকে হরহামেশা শীয়াদের বিরুদ্বে ধুমাইয়া ব্যবহার করে থাকেন । অর্থাৎ শীয়া মানেই রাফেযী । অতএব শীয়া মানেই অচ্ছুৎ ! জাত গেল , জাত গেল – মনোভাব অনেকটা এরকম । আজকের আলোচনার মূল প্রসঙ্গ হচ্ছে “শীয়া-রাফেযী” । যিনি বা যারা মহা উৎসাহে “শীয়া-রাফেযী” কথাটি বলে থাকেন তাদের প্রতি খুব মোলয়েমভাবে যদি পাল্টা প্রশ্ন করা হয় যে , “রাফেযী” কথাটার বাংলা অর্থ কি ? কেনইবা শীয়াদের রাফেযী বলছেন ? চ্যালেজ্ঞ দিয়ে বলতে পারি যে , শতকরা নিরানব্বই ভাগ সঠিক জবাব দিতে পারবে না । বত্রিশ দাঁত কেলিয়ে ভেটকি দিয়ে বলবে যে , সবাই বলে তাই আমিও বলি ! আপনারাই বলেন , এইগুলারে কি আর কইতাম ? পবিত্র কোরআনের এই আয়াতটি এবং ইমাম আলীর (আঃ) হাদিসটি স্মরন করিয়ে দিয়ে লেখাটির মূল প্রসঙ্গে চলুন । ” — দয়াময়ের বান্দা তো তারাই যারা ভূপৃষ্ঠে বিনম্রভাবে চলাফেরা করে এবং মূর্খরা যখন তাদের সম্বোধন করে তখন তারা তাদের “সালাম” (বিদায় সম্ভাষন) বলে — “। সুরা – ফুরকান / ৬৩ । “মূর্খ আহাম্মকের কথার কোন প্রতিবাদ করিও না । করিলে তুমি নিজেই আহাম্মক হয়ে যাবে ।” – ইমাম আলী (আঃ) । প্রিয় পাঠক , প্রথমেই বলে নেই যে , “শীয়া” কথাটি পবিত্র কোরআনে অত্যন্ত উঁচু মর্যাদা সম্পন্ন মুমিনদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে । মাওলা আলীর (আঃ) প্রকৃত আনুগত্যকারী ব্যক্তিকে “শীয়া” বলা হয় । পুনরায় বলছি যে , ভন্ড এবং লোক দেখানো দাবীদার শীয়া নয় , মাওলা আলীর (আঃ) প্রকৃত আনুগত্যকারী ব্যক্তিকে “শীয়া” বলা হয় । যেমন হযরত ইব্রাহীমকে (আঃ) পবিত্র কোরআনে “শীয়া” বলে বিশেষ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে । কেননা হযরত ইব্রাহীম (আঃ) একজন শীয়ানে আলী (আঃ) ছিলেন । যাইহোক , সাধারনভাবে “শীয়া” এবং “রাফেযী” কথা দুটির প্রকৃত বাংলা আভিধানিক অর্থ জানার চেষ্টা করি । প্রথমে চলুন “শীয়া” কথাটির প্রকৃত বাংলা আভিধানিক অর্থ এবং ব্যবহার দেখে নেই । আসুন জেনে নেই – শত ক্রোধ সৃষ্টি হওয়া শীয়া কথাটির অর্থ । “শীয়া” একটি পরিস্কার নির্ভেজাল আরবী কথা । এই কথাটির বাংলা অনুবাদ হল – অনুসরনকারী এবং ইংরেজীতে যার অর্থ হল – Follower । এবারে আসুন , জেনে নেই এই কথাটির ব্যবহারিক বিষয় । সর্বপ্রথম বিষয় হল যে , জগতের প্রতিটা সৃষ্টিই তার সৃষ্টিকর্তার অনুসারী বা Follower । সেই হিসাবে একজন হিন্দু ধর্মালম্বী তার ভগবানের “শীয়া” বা অনুসরনকারী বা Follower । সেই হিসাবে একজন খ্রীষ্টান ধর্মালম্বী তার ইশ্বরের “শীয়া” বা অনুসরনকারী বা Follower । সেই হিসাবে একজন বৌদ্ব ধর্মালম্বী তার ভগবানের “শীয়া” বা অনুসরনকারী বা Follower । সেই হিসাবে একজন ইহুদী ধর্মালম্বী তার ইশ্বরের “শীয়া” বা অনুসরনকারী বা Follower । সেই হিসাবে একজন ইসলাম ধর্মালম্বী তার আল্লাহর “শীয়া” বা অনুসারী বা Follower । সেই হিসাবে একজন মুসলমান ব্যক্তি তার রাসুলের (সাঃ) “শীয়া” বা অনুসারী বা Follower । সেই হিসাবে একজন মুসলমান ব্যক্তি তার রাসুলের (সাঃ) সুন্নাতের “শীয়া” বা অনুসারী বা Follower । সেই হিসাবে একজন মুসলমান ব্যক্তি তার পীরের “শীয়া” বা অনুসারী বা Follower । সেই হিসাবে একজন মুসলমান ব্যক্তি তার গোত্রের ইমাম যেমন , হানাফী , হাম্বলী , শাফেয়ী , মালেকী , ইবনে তাইমিয়া , আব্দুল ওহাব নজদীর “শীয়া” বা অনুসারী বা Follower । এমনকি একজন নাস্তিক ব্যক্তি তার নফসের “শীয়া” বা অনুসারী বা Follower । এবং পবিত্র কোরআনের ঘোষনা মোতাবেক একজন মুমিন মুসলমান ব্যক্তি মহান আল্লাহ কতৃক নিযুক্ত এবং রাসুল (সাঃ) কতৃক ঘোষিত পবিত্র বার ইমামগনের (আঃ) “শীয়া” বা অনুসারী বা Follower । এবারে আরও দেখে নিন যে , পবিত্র কোরআনে “শীয়া” কথাটির ব্যবহার প্রসঙ্গ । পবিত্র কোরআন বলছে যে – ” — নিশ্চয়ই ইব্রাহীম ছিল তার শীয়াদের একজন —– ” । সুরা – সাফফাত / ৮৩ । “ —- তিনি (মুসা নবী) শহরে প্রবেশ করলেন যখন তার অধিবাসীরা ছিল বেখবর , তথায় তিনি দুই ব্যক্তিকে লড়াইরত দেখলেন । এদের একজন ছিল তাঁর *শীয়া* এবং অন্যজন তাঁর শত্রু দলের । অতঃপর *শীয়া* সে তাঁর শত্রু দলের লোকটির বিরুদ্ধে তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করল । তখন মুসা তাকে ঘুষি মারলেন এবং এতেই তার মৃত্যু হয়ে গেল । মুসা বললেন , এটা শয়তানের কাজ , নিশ্চয় সে প্রকাশ্য শত্রু, বিভ্রান্তকারী —– ।“ সূরা — আল ক্বাসাস / ১৫ । পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ একাধিক স্থানে “শীয়া” কথাটি ব্যবহার করেছেন । অতি দুঃখের সাথে বলছি যে , পবিত্র কোরআনে কোথাও “সুন্নি” নামে কোন কথা নাই ! অতএব , যিনি বা যারা “শীয়া” শুনলেই তেলে-বেগুনে ফস করে জ্বলে ওঠেন – দয়া করে বিষয়টি একটু ভেবে দেখতে পারেন ! পাঠক , এবারে চলুন “রাফেয” কথাটির প্রকৃত বাংলা আভিধানিক অর্থ এবং ব্যবহার দেখে নেই । “রাফেয” অর্থাৎ ছেড়ে দেওয়া বা ত্যাগ করাকে বলা হয় । সেই কারণে মাক্বাবিসুল্লোগ্বাতে এসেছে (رَفَضتُ الشَی أی تَرَکتُہ) অর্থাৎ অমুক জিনিষকে রাফয করে দিয়েছি অর্থাৎ ত্যাগ করে দিয়েছি । ঐ ব্যক্তিকে “রাফেযী” বলা হয় যে কোন কিছু পরিত্যাগ করেছে । বিষয়টা অনেকটা এই রকম যে , একজন হিন্দু ধর্মালম্বী ব্যক্তি তার হিন্দু ধর্ম পরিত্যাগ করে যদি খ্রীষ্টান ধর্ম গ্রহন করেন তখন ঐ ব্যক্তিকে হিন্দু ধর্মের রাফেযী বলা হয় । কেননা ঐ ব্যক্তি হিন্দু ধর্মকে রাফেয বা ত্যাগ করেছেন । ঐতিহাসিক ঘটনায় এসেছে যে , মুহাম্মাদ বিন ফারিস , মুজামু মুক্বাবীসুল লোগ্বাত (رفض) শব্দের ব্যাখ্যায় লিখেছেন । এই কথাটি অভিধানে যেমন ছিল তেমনি ব্যবহার হত । সেই কারণে মুয়াবিয়া এই কথাটি মারওয়ান ও কিছু লোকের উপর ব্যবহার করেছে যারা জামাল যুদ্ধে থেকে ফিরে এসেছিল ও আমার বিন আসের কাছে চিঠিতে লিখেছে – (قد سقط الینا مروان بن الحکم فی رافضۃ اھل البصرۃ) সূত্র – নাছর বিন মাজাহিম: ওয়াক্বআতুস সিফ্ফিন, প্র: ২৪ / আনসাবুল আশরাফ , বেলাজারী , খ: ৩, প্র: । সিফফীনের যুদ্বের এক পর্যায় কিছু ব্যক্তি মাওলা আলীর (আঃ) পক্ষ ত্যাগ করে মুনাফিক মুয়াবিয়া লানতুল্লাহর দলে চলে গিয়েছিল । অর্থাৎ ঐ সকল ব্যক্তিবর্গ তখন মাওলা আলীর (আঃ) রাফেযী হয়ে গিয়েছিল । যারা মাওলা আলীকে (আঃ) ত্যাগ করে মুয়াবিয়া লানতুল্লাহর কাছে চলে গিয়েছিল ওদেরকে তখন “রাফেযী শীয়া” বলা হইত । এজন্য তাদেরকে মুয়াবিয়ার শীয়া বলা হয় । অন্য এক ঐতিহাসিক ঘটনায় এসেছে যে , এক ব্যক্তি ষষ্ঠ ইমাম জাফর সাদিকের (আঃ) কাছে এসে অভিযোগ করলেন যে , হে রাসুলের (সাঃ) সন্তান (আঃ) !
রাসুলের (সাঃ) শাহাদাত পরবর্তী রেসালতের দায়িত্ব প্রসঙ্গ
একটি বিষয় প্রায়ই আমরা দেখতে পাই যে , দুনিয়ার অনেক অভিজ্ঞ ধর্মীয় আলেমগন এবং বহু পীর সাহেবগন বেশ জোরের সাথে এই কথাটি বলে থাকেন যে , রাসুলের (সাঃ) শাহাদাতের পর থেকে কেয়ামত পর্যন্ত রাসুলের (সাঃ) রেখে যাওয়া ইসলাম ধর্মকে প্রসার-প্রচার এবং পরিচালিত করার একচ্ছত্র অধিকার এবং যোগ্যতা একমাত্র ওনাদের হাতেই সীমাবদ্ব । ওনাদের কথার সারমর্ম এটাই যে , আল্লাহর রাসুল (সাঃ) স্বয়ং নিজে তাদেরকে এই মহান দায়িত্ব নিজ হাতে অর্পন করে গেছেন । ওনাদের এই দাবীর স্বপক্ষে অনেকে স্বপ্নের মাধ্যমে দায়িত্ব প্রাপ্তির গল্প বলে থাকেন । মোদ্দকথা এটাই যে , মহান আল্লাহর নিকট থেকে দুনিয়ার সকল অভিজ্ঞ জ্ঞানীগুনী ধর্মীয় আলেমগন এবং সম্মানীত পীর সাহেবগন কেয়ামত পর্যন্ত পুরো এজেন্সী বা দায়িত্ব পেয়ে গেছেন । এজন্য ওনারা নিজেদেরকে “রাসুলের (সাঃ) ওয়ারীশ” বলে দাবী করেন । সর্বশক্তিমান আল্লাহ কতৃক প্রদত্ত স্বাধীনতার বদৌলতে অনেকেই নিজেদেরকে “রাসুলের (সাঃ) ওয়ারীশ” দাবী করে কেয়ামত পর্যন্ত ইসলাম ধর্মের ধারক-বাহক বলে নিজেদের দাবী করতেই পারেন । বলা বাহুল্য যে , আল্লাহ কতৃক প্রদত্ত স্বাধীনতার বদৌলতে অনেকেই নিজেদেরকে আল্লাহ বলেও দাবী করেছিলেন । যেমন ফেরাউন , নমরুদ ইত্যাদি । এরা নিজেদের খোদা বলে দাবী করেছিল । প্রত্যেকের করুন পরিনতি সম্পর্কে আমরা সকলেই অবগত আছি । এছাড়া পবিত্র কোরআনেই এই ব্যাপারে পরিস্কার বলা আছে । প্রিয় পাঠক , এসব কাঠমোল্লা , পীর সাহেব , তাবলীগওয়ালাদের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে চলুন দেখে নেই যে , রাসুলের (সাঃ) শাহাদাতের পূর্বে নবীজী (সাঃ) কাদেরকে এই ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে দায়িত্ব দিয়ে গেলেন । অর্থাৎ মহানবী (সাঃ) কাদেরকে পরবর্তী ওয়ারীশ , উত্তরাধিকার এবং স্থলাভিষিক্ত করে গেলেন ? এছাড়া পুরো বিষয়টি নিয়ে মহান আল্লাহর হুকুম কি ? কেননা মহান আল্লাহই শেষ ও চূড়ান্ত কথা বলেন । পবিত্র কোরআনে বলা আছে । ” — আল্লাহ সবচেয়ে ভাল জানেন কোথায় তাঁর রেসালত রাখবেন — !” সুরা – আনআম / ১২৪ । ” — তোমার প্রতিপালক যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন । এই ব্যাপারে তাদের কোন অধিকার নাই । এবং আল্লাহ পবিত্র , মহিমাম্বিত এবং যাকে তারা অংশী করে (তাঁর সাথে) তা হতে তিনি অনেক উর্ধ্বে — ” । সুরা – কাসাস / ৬৮ । ” — এটি ছিল আমাদের যুক্তি যা আমরা ইবরাহীমকে দিয়েছিলাম তার জাতির বিরুদ্বে । আমরা পদমর্যাদায় উন্নীত করি যাকে আমাদের ইচ্ছা হয় । নিশ্চয়ই তোমাদের প্রভু সর্বপ্রজ্ঞাবান ও সর্বজ্ঞাত । আর আমরা তাকে দিয়েছিলাম ইসহাক ও ইয়াকুবকে এবং তাদের প্রত্যেককে পথ দেখিয়েছিলাম । এবং নূহকে আমরা পথ দেখিয়েছি আগে এবং তার বংশধর থেকে দাউদ ও সুলাইমান , আইয়ুব , ইউসুফ , মুসা ও হারুনকে – এভাবে আমরা পুরস্কার দেই নৈতিক গুনসম্পন্নদের এবং যাকারিয়া , ইয়াহিয়া , ঈসা ও ইলঈয়াসকে – তাদের প্রত্যেকে ছিল ন্যায়নিষ্ঠদের অন্তর্ভুক্ত এবং ইসমাঈল , আল ইয়াসায়া , ইউনুস ও লুতকে – প্রত্যেককে আমরা সব জাতির উপর মর্যাদা দিয়েছিলাম এবং তাদের পিতৃপুরুষদের , সন্তানদের ও ভাইদের মধ্য থেকে কতককে – আমরা নির্বাচিত করেছিলাম এবং তাদের সকলকে পরিচালিত করেছিলাম এক সোজা পথে —– ” । সুরা – আনআম / ৮৩ , ৮৪ , ৮৫ , ৮৬ , ৮৭ । “ – এবং প্রত্যেক জাতির জন্য আছে একজন পথপ্রদর্শক (হাদী) — “ । সুরা – রাদ / ০৭ । “ – নিশ্চয়ই আমরা আপনাকে সত্যসহ প্রেরন করেছি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরুপে । আর এমন কোন উম্মত ছিল না যাদের মধ্যে কোন সতর্ককারী আসেনি —- “ । সুরা – ফাতির / ২৪ । “ – আমরা তাদেরকে ইমাম নির্বাচিত করেছিলাম আমাদের আদেশ অনুসারে হেদায়েত করতেন — “ । সুরা – আম্বিয়া / ৭৩ । “ – এবং তাদের মধ্যে আমরা নিয়োগ দিয়েছিলাম ইমামদের যারা আমাদের আদেশে পথ দেখায় — “ । সুরা – সাজদাহ / ২৪ । আরও দেখে নিন । ” — অতঃপর আমরা এই গ্রন্থের উত্তরাধিকারী তাদেরকেই করেছি যাদেরকে আমাদের বান্দাদের মধ্য হতে নির্বাচিত করেছি । যেহেতু তাদের মধ্যে একদল নিজেদের প্রতি জালিম (অবিচারক) । তাদের মধ্যে কতক মধ্যপন্থী এবং কতক আল্লাহর অনুমতিক্রমে কল্যানের দিকে অগ্রগামী । প্রকৃতপক্ষে এটাই মহা অনুগ্রহ —“। সুরা – ফাতির / ৩২ । নবীজীর (সাঃ) শাহাদাত পরবর্তী নবুয়ত এবং রেসালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত কে বা কারা হবেন সে ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে বারংবার বলা হচ্ছে যে , পুরো বিষয়টি একমাত্র আল্লাহর এখতিয়ারের অন্তর্ভুক্ত । দয়া করে লেখাটিতে বাড়তি মনযোগ দিন । উপরে উল্লেখিত পবিত্র কোরআনের আয়াতগুলো থেকে এই বিষয়টি অত্যন্ত পরিস্কার যে , একমাত্র আল্লাহ ঠিক করবেন যে , রাসুলের (সাঃ) শাহাদাতের পরে রেসালত ও নবুয়তের দায়িত্ব তিনি কাদেরকে অর্পন করবেন । অর্থাৎ নবী-রাসুলগনের শাহাদাত পরবর্তী স্থলাভিষিক্ত খলীফা , ইমাম বা ওয়াসী কে বা কারা হইবেন এটা নিযুক্ত করার এখতিয়ার কেবলমাত্র মহান আল্লাহর । এই ব্যাপারে পৃথিবীর কারোরই বিন্দুমাত্র কোন অধিকার নাই । একমাত্র সর্বশক্তিমান আল্লাহ স্বয়ং নিজে নিযুক্ত করেন । সেইসাথে আরও একটি বিষয় সর্বশক্তিমান আল্লাহ চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন যে , নবী-রাসুলগনের পিতা , নবী-রাসুলগনের সন্তান তথা রক্তজ বংশধর এবং নবী-রাসুলগনের ভাই থেকে নবী-রাসুলগনের শাহাদাত পরবর্তী স্থলাভিষিক্ত , খলীফা , ইমাম , নেতা বা ওয়ারীস তিনি নিযুক্ত করেন । উদাহরনস্বরুপ বলা যায় যে , হযরত ইউসুফের (আঃ) পিতা ছিলেন হযরত ইয়াকুব (আঃ) । হযরত মুসার (আঃ) ভাই ছিলেন হযরত হারুন (আঃ) । ঠিক যেমন সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদের (সাঃ) ভাই ছিলেন হযরত আলী ইবনে ইমরান (আঃ) । আমরা সকলেই অবগত আছি যে , হজ্ব থেকে ফেরার পথে গাদীর নামক স্থানে মহান আল্লাহর সরাসরি কঠোর আদেশের প্রেক্ষিতে রাসুল (সাঃ) স্বয়ং নিজে এক লক্ষ একত্রিশ হাজার হজ্ব ফেরৎ হাজী সাহাবাগনের থেকে মাওলা আলীর (আঃ) বেলায়েত বা অভিভাবকত্বের পক্ষে বাইআত বা কঠিন অঙ্গীকার আদায় করেছেন এইমর্মে যে , রাসুলের (সাঃ) শাহাদাতের পরে সর্বপ্রথম খলীফা এবং ইমাম হিসাবে হযরত আলী ইবনে ইমরান (আঃ) এবং কেয়ামত পর্যন্ত মাওলা আলীর (আঃ) সন্তানগন থেকে এগারজনকে (আঃ) পর্যায়ক্রমে খলীফা এবং ইমাম হিসাবে শর্তহীন অনুসরন এবং আনুগত্য করতে হবে । বলা বাহুল্য যে , গাদীরের আদেশ সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে । আমরা যারা সেই সময় গাদীরের ময়দানে শারীরিকভাবে উপস্থিত ছিলাম না তাদের জন্য রাসুলের (সাঃ) আদেশ – “নিঃসন্দেহ , আমি তোমাদের নিকট পৌঁছিয়ে দিয়েছি যা আমাকে আদেশ করা হয়েছে তোমাদের সকলের নিকট (বিরুদ্ধে) একটি দলীল , প্রমাণ , যুক্তি হিসেবে পৌঁছিয়ে দেওয়ার জন্য । সে উপস্থিত হোক বা অনুপস্থিত , একজন প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী হোক বা না হোক এবং ইতিমধ্যে জন্মগ্রহণ করেছে বা এখনও জন্মগ্রহণ করেনি I কাজেই উপস্থিত সকলকে জানাতে হবে এই উপদেশ যারা এখানে অনুপস্থিত তাদের উদ্দেশ্যে । প্রত্যেক অবিভাবককে বিশেষ করে পিতামাতার উচিত তাদের সন্তানদের যথাযথভাবে জানানো । অবশ্যই তাদের সন্তানদের জানাতে হবে এবং তোমাদের সকলকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত
বেলাশেষে দুই বন্ধুর আড্ডা
পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার উলুবেরিয়াতে সাগর ক্লাবের পাশেই এরা থাকে । দুজনের মধ্যে খুব ভাল বন্ধুত্ব বিদ্যমান । দুটিতে একবারে হরিহর আত্মা । বয়সে সত্তরের কাছাকাছি । দুজনেই অবসর জীবনযাপন করছে । নাতি-পুতি নিয়ে ভরা সংসার । স্বচ্ছল গেরস্থ পরিবার । তবে ছেলেপুলেরা এখন আর কৃষিকাজ করে না । শহুরে বাতাস লেগেছে । কোলকাতা আর মুম্বাইতে চাকরী-বাকরী করে । পরিবার বাড়ীতেই থাকে । দুজনই মুসলিম পরিবারের সন্তান । এক আল্লাহ , এক নবী , এক কোরআন । কিন্ত এরপরেও সমাজে দুটি পরিবারের ভিন্ন অবস্থান । ধর্মীয় বিশ্বাসে বিশাল অনতিক্রম ব্যবধান । একদম জান্নাত এবং জাহান্নাম । মাঝামাঝি কোন জায়গা নাই ! জগত সংসার শীয়া এবং সুন্নি নাম দিয়ে দুটি পরিবারের মধ্যে বিনে সুতোর মালা দিয়ে বিশাল পার্থক্য করে দিয়েছে । কি আর করা ! মহান আল্লাহর কঠোর নিষেধাজ্ঞা সত্বেও নবীর (সাঃ) শাহাদাতের পর থেকে মুসলিম জাতি মোটাদাগে দুইভাগে বিভক্ত । মাওলা আলীর (আঃ) দলটাকে দুনিয়া শীয়া বলে জানে । আর মাওলা আলীর (আঃ) ন্যায্য অধিকার ছিনতাইকারী দলটাকে দুনিয়া সুন্নি বলে ডাকে । দুই বন্ধুর আড্ডা প্রসঙ্গে চলুন । পারিবারিক রীতি মোতাবেক একজন আলীয়া মাদ্রাসার ছাত্র অপরজন জাফরী ফিকহার মাদ্রাসার ছাত্র । পৃথিবীবাসী আলীয়া মাদ্রাসার ছাত্রকে “সুন্নি” এবং জাফরী ফিকহার মাদ্রাসার ছাত্রকে “শীয়া” বলে । যদিও দুইজনের আল্লাহ , নবী (সাঃ) , কোরআন এক ও অভিন্ন । এটাই দুঃখজনক বাস্তবতা ! রোজকার মত সেদিনও গ্রামের বটগাছটির নীচে আড্ডায় মেতে উঠেছে । হঠাৎ কি মনে করে আলীয়া মাদ্রাসায় পড়া বন্ধুটি প্রশ্ন করল শীয়া বন্ধুটিকে । আলীয়া – আচ্ছা বন্ধু ! দুজনেই তো কবরে যাওয়ার অপেক্ষা করছি । জাফরী – হ্যাঁরে বন্ধু । এবারে তো যাওয়ার পালা ! আলীয়া – সুখেদুঃখে সারাটা জীবন একসাথে পার করে দিলাম । কত ঝড়ঝাপ্টা এল আর গেল । জাফরী – সত্যিই , ইদানীং ফেলে আসা দিনগুলো বড্ড মনে পড়ে ! আলীয়া – মরার পরে দুজনে একসাথে থাকব তো ? জাফরী – হঠাৎ এসব বলছিস ? আলীয়া – না এমনিতে । কত স্মৃতি , কত মায়া — একি ভোলা যায়রে ! জাফরী – এখন আর এসব মনে করে কি লাভ ? দুনিয়া তো খুবই ক্ষনস্থায়ী – আয়ারাম আর গয়ারাম । অর্থাৎ এলুম আর গেলুম । আলীয়া – কথা কিন্ত সত্য । জাফরী – এখন তো দুজনেরই শেষবেলা চলছে । কে কার আগে চলে যাই , জানেন আমার মাওলা (আঃ) । আলীয়া – ঠিক বলেছিস । সব জানেন আল্লাহ । জাফরী – শেষ বেলায় তোকে দুটো কথা শুধোই ? আলীয়া – মন খুলে বলে ফেল । কে কখন কোথায় কিভাবে থাকি ! জাফরী – তোর বিধান মোতাবেক নামাজ , যাকাত , হজ্ব , রোজা ইত্যাদি হচ্ছে দ্বীনের মূলস্তম্ভ । আলীয়া – তোর এখনও সন্দেহ আছে নাকি ? জাফরী – মোটেই না । তবে আমার বিশ্বাসমতে “বেলায়েতে আলী (আঃ)” – হচ্ছে দ্বীনের প্রধান বিষয় । “বেলায়েতে আলী (আঃ)” ব্যতীত অন্য সকল ধর্মীয় ইবাদত আমল পুরাই মূল্যহীন । আলীয়া – তুই আর মানুষ হইলি না ? মরনকালে এসেও ঘাড় ত্যাড়ামো করছিস ! সুযোগ পাওয়া মাত্র হযরত আলীর (রাঃ) প্রতি স্বজন প্রীতি দেখাইতে শুরু করলি ! জাফরী – ওরে আমার পরানের বন্ধু ! তোর উপর খোদার লানত পড়ুক । আলীয়া – আমি আবার তোর কোন পাকা ধানে মই দিলুমরে ? জাফরী – লানত দেওয়ার আগে আমি কিন্ত তোকে পরানের বন্ধু বলেছি । আচ্ছা , তুই তো পাল্টা জিজ্ঞেস করতে পারতিস যে – “বেলায়েতে আলী (আঃ)” কেনইবা প্রধানতম হইল ? আলীয়া – মানছি , অন্যায় হয়েছে । বেশ তাহলে বুঝিয়ে দে । জাফরী – গতকাল তুই বেয়াই বাড়ী গেলি । ওখানে গিয়ে নিশ্চয়ই নামাজ আদায় করেছিস ? আলীয়া – করেছি তবে কসর । কারন আমি ওখানে সফররত একজন মুসাফির ছিলাম । জাফরী – দেখ , প্রতিটা আমলই নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ন । তবে আমলের মধ্যেও প্রকারভেদ আছে । “বেলায়েতে আলীর (আঃ)” তুলনায় নামাজ , যাকাত , হজ্ব ও রোজা ইত্যাদি খুবই কম গুরুত্বপূর্ন । আলীয়া – সেটা কিভাবে সম্ভব ? জাফরী – সফররত অবস্থায় নামাজ পরিপূর্ন নয় , কসর আদায় করতে হয় । যাকাত সকলের জন্য ওয়াজীব নয় , গরীবরা বাদ পড়ে যায় । হজ্ব সকলের জন্য ওয়াজীব নয় শুধু সামর্থ্যবান ব্যতীত । অর্থাৎ হজ্ব থেকেও অনেকেই বাদ পড়ে যায় । সফররত অবস্থাতে এবং গুরুতর অসুস্থদের উপর রোজা ওয়াজীব নয় । অর্থাৎ প্রথম চারটি প্রধানতম আমল থেকে অনেকেই বাদ পড়ে যায় । এবং এসবই অবশ্যই শরীয়ত কতৃক অনুমোদিত । আলীয়া – কথা তুই মিথ্যে বলিসনি বটে । তবে এগুলোর সাথে বেলায়েতে আলীর সম্পর্ক কি ? জাফরী – ঠান্ডা মনে শুনে নে । “বেলায়েতে আলী (আঃ)” বিষয়টা ধনী-গরীব , সুস্থ-অসুস্থ , জাতি-ধর্ম-বর্ন নির্বিশেষে – জগতের সকল মানুষের উপর ওয়াজীব বা বাধ্যতামূলক । এখান থেকে বাদ পড়ার সামান্যতম কোন সুযোগ মহান আল্লাহ রাখেন নাই । নবুয়ত যেমন সকলের জন্য ওয়াজীব ঠিক তেমনিভাবে নবুয়ত ধারার সমাপ্তির পরে ইমামত তথা বেলায়েতে আলী (আঃ) সকলের জন্য ওয়াজীব বা বাধ্যতামূলক । আলীয়া – আমরা মানি না । জাফরী – সেটা তোর স্বাধীনতা । এবারে রাসুলের (সাঃ) বানী শুনে নে । ইমাম হাসান (আঃ) থেকে অষ্টম ইমাম রেজা (আঃ) বলেছেন যে , আল্লাহর রাসুল (সাঃ) মাওলা আলীকে (আঃ) বলেন , হে আলী (আঃ) ! আপনি (আঃ) হলেন মহান আল্লাহর প্রমাণ এবং আপনি (আঃ) হলেন মহান আল্লাহর দরজা এবং আপনিই (আঃ) মহান আল্লাহর পথ । আর আপনিই (আঃ) হলেন মহৎ সংবাদ এবং আপনিই (আঃ) সর্বশ্রেষ্ঠ উত্তম উদাহরণ । যারা আলীর (আঃ) অনুগত বা বাধ্য নয় আল্লাহ স্বয়ং নিজে তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন I একমাত্র আলীর (আঃ) ওয়ালায়াহ বা বেলায়েত হচ্ছে আল্লাহর ওয়ালায়াহ । যা সকলের উপর ওয়াজীব বা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং তা এভাবেই থাকবে যতক্ষণ না বিচারের দিন আসে । আলীয়া – এসব হাদিস মানলুম না । জাফরী – দোস্ত , জবরদস্ত একটা কথা কইছ । তোর সাথে মেজখবিশ ওমরের খাপেখাপ মিলে গেল । মেজখবিশ এই ডায়ালগ মারছিল -“হাসবুনা কিতাবাল্লাহ” । অর্থাৎ কোরআন যথেষ্ট । অন্যকিছু মানিনা / মানিনা ! আলীয়া – শেষ বয়সে তুই ঝগড়া শুরু করে দিলি ? জাফরী – আমিও চাই , ওপারে দুটিতে এভাবে একসাথে থাকি । কিন্ত একা আমি চাইলেই তো হবে না । তোর অবস্থাটা বুঝে গেছি । বন্ধু , কি আর করা ! “বেলায়েতে আলী (আঃ)” – এই বিষয়টা কিন্ত সকলের কপালে জোটে না । সকলেই এই বিষয়টা ধারন করতে পারে না । কেননা বিষয়টির সাথে পুতঃপবিত্রতা বা তাতহীরের একটা ব্যাপার জড়িত আছে । আলীয়া – সেটা কিরকম ? জাফরী – নবুয়ত ও ইমামত তথা বেলায়েতে আলী (আঃ) খুবই পুতঃপবিত্র ধারা । পবিত্র বিষয় তো
নিছকই একটি গল্প
মোটেও সিরিয়াসলি নেবেন না । পুরো লেখাটিই একটি গালগল্প । মনে যা আসে তাই উরাধুরা লেখালেখি করি । ভাল না লাগলে পশ্চাত অংশে দুই পায়ের লাথি মেরে ব্লক মেরে দিন । আর যদি দৈবক্রমে মনে ধরে তাহলে পুরানো আবদার – দুটি বিস্কুট সহ এক কাপ গরম কফি ! মাওলার (আঃ) স্মরনে শুরু করিলাম । গ্রামের ছেলে । মনে জিলাপির প্যাঁচ নাই । খুবই সহজ সরল বোকা । দশ গ্রামের সকলেই খুব ভালবাসে , স্নেহ করে । মাস তিনেক হল কওমি থেকে বড় পাশ দিয়েছে । একটি চাকরীর খুব প্রয়োজন । আশেপাশের মসজিদে কোথাও ইমাম-মুয়াজ্জিনের পদ খালি নাই । অপেক্ষায় আছে । সাতাশ বছরের টগবগে যুবক । বিয়ের জন্য সোনালী বয়স চলছে । বুকটা পুরো তপ্ত মরুভূমি । জল পেলেই শুষে নেবে । মনে ঝড় বইছে । দুঃখের কথা কাউকে বলতে পারেনা । বেকারকে কেইবা মেয়ে দেবে ! রাত যায় দিন আসে । দিনগুলি এভাবেই চলছে । ওস্তাদজির সাথে শ্যামবাজারে এল মসজিদের মাইক কেনার জন্য । জীবনে প্রথম শ্যামবাজারে এল । কোলকাতা এত বড় শহর – কল্পনাতেও ছিল না । চোখ বড় করে এদিক ওদিক দেখছে । লোকে ঠাসা শ্যামবাজার । ওস্তাদজির সাথে এ দোকান সে দোকান ঘুরছে । আর বিস্ময়ভরা চোখে কোলকাতা শহরের মানুষগুলোকে দেখছে । কি সুন্দর চিকনাই চেহারা । এরা কি খায় ? টান টান ফর্সা চেহারা কেমনে হয় ? আড়চোখে দেখছে আর ভাবছে – এরা পরী নাকি মেয়েমানুষ ! হঠাৎ করে একটি মেয়েকে দেখে চোখ আটকে গেল । পরী থেকে মানুষ ? নাকি মেয়েমানুষ থেকে হুরপরী ! চোখদুটি যেন নাটোরের বনলতা সেন । পড়ে না চোখের পলক । কেমন যেন হয়ে গেল । পুরো নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলল । মেয়েটির সামনে মাথা নীচু করে আদবের সাথে সালাম দিল । মাথায় ওড়না টেনে মেয়েটি পাল্টা সালাম দিয়ে নরম গলায় জানতে চাইল , “ঠিক চিনতে পারছি না” ? ছেলেটি বলল , “অভয় দিলে একটি কথা বলি !” ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে মেয়েটি বলল , “বলুন” । লাজুক স্বরে ছেলেটি বলল , “তোমায় খুব মনে ধরেছে ” । চীৎকার দিয়ে মেয়েটি বলে উঠল , “এসবের মানে কি ? কি হচ্ছে এসব ” ! মুহূর্তে আশেপাশের লোকজন জড়ো হয়ে গেল । উপস্থিত সকলকে স্বাক্ষী রেখে ছেলেটি দৃঢ় কন্ঠে মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বলল , “বিবাহ-বিবাহ-বিবাহ করিলাম” । বিস্ময়ের ঘোর কাটতে কয়েক সেকেন্ড লাগল । “ফাজলামো হচ্ছে — পায়ের হাইহিল খুলে ছেলেটিকে দমাদম পেটাতে লাগল । মেয়েটির মার দেখে আশপাশের লোকজন ইচ্ছেমত ছেলেটিকে কেলাতে লাগল । হৈহুল্লোর শুনে ওস্তাদজি দৌড়ে এসে ছেলেটিকে বহু কষ্টে উদ্বার করলেন । সকলের কাছে জোড়হাতে ক্ষমা চেয়ে ছেলেটিকে ওখান থেকে বের করে আনলেন । নিরাপদ জায়গায় এসে ছেলেটিকে কড়া করে জিজ্ঞেস করলেন , “হ্যারে ! তোকে কি মেয়েভুতে ধরেছিল ? ঘটনা কি !” মারের চোটে চোখমুখ ফুলে আছে । কিছুক্ষন জিরিয়ে নিয়ে ছেলেটি বলল , “কি এমন অন্যায় করলুম ? আমি তো মন্দ কিছু বলিনি । সুন্দর করে বিয়ের কথা বলেছি !” ভীষন রেগে গিয়ে ওস্তাদজি বললেন , “সব কাজের একটি নিয়ম কানুন আছে । বিয়ে খুবই গুরুতর কর্ম । এভাবে কেউ বলে ?” ছেলেটি আগের মতই গো ধরে বলল , “এতে অন্যায়ের কি হইল ?” মায়াভরা কন্ঠে ওস্তাদজি বললেন , “তুই আর কবে বড় হবি !” ছেলেটি পাল্টা জিজ্ঞেস করে বলল , “এক বৈঠকে একসাথে পরপর “তালাক-তালাক-তালাক দিলাম” উচ্চারন করলে যদি তালাক হয়ে যায় তাইলে এক দেখায় একসাথে পরপর “বিবাহ-বিবাহ-বিবাহ করিলাম” উচ্চারন করলে বিয়ে হবে না কেন ?” এরকম উটকো কথা শুনতে হবে – ওস্তাদজি কখনও ভাবে নাই । ওরে গাধা ! ওটা তালাকের নিয়ম । বিয়ের নিয়ম এভাবে হয় না । ভালমত খোঁজখবর , দেখশোনা এবং বহু সময় দেওয়া ইত্যাদি বহুকিছু ঘেটেঘুটে একটা বিয়ে হয় । বিয়ে এত সস্তা নয় । জয়নগরের মোয়া-মুড়কি নয় , বললুম আর ফটাফট বিয়ে হয়ে গেল ! কথায় বলে লাখ কথা খরচ না হলে বিয়ে হয় না । এসব যুক্তি ছেলেটি কিছুতেই মানছে না । পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলল , “লাখ কথা না হলে বিয়ে হয় না , তাহলে ফটাফট মাত্র তিনটে কথায় তালাক হবে কেন ?” কেবলাকান্তকে নিয়ে ওস্তাদজি পড়ে গেলেন মহা ফ্যাসাদে । তবে মন বলছে যে , ছেলেটি মন্দ কিছু বলেনি ! লাখ কথা না হলে বিয়ে হয় না , তাহলে ফটাফট মাত্র তিনটে কথায় তালাক হবে কেন ! হেরে গেলে চলবে না । ধর্ম ঠিক রাখতে হবে । কড়া স্বরে ধমক দিয়ে ছেলেটিকে বলল , “তুই ফতোয়ার কি বুঝিস ? কোন হরিদাস পাল !” নাছোড়বান্দা ছেলেটি জানতে চাইল , আজগুবি ফতোয়া দিল কে ? ওস্তাদজি বললেন , ফতোয়া দিয়েছেন হযরত ওমর । এতবড় সাহস তোর ! ওমরের কথা শুনে অজানা পাপের ভয় ছেলেটি চুপসে গেল । এবারে ওস্তাদজির কাছে ছেলেটি কিছু কথা পেশ করে বিনয়ের সাথে জানতে চাইল — ” — হে নবী ! তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে তালাক দিতে চাও তখন তাদের ইদ্দতের প্রতি লক্ষ্য রেখে তালাক দিও এবং ইদ্দত গণনা কর । তোমরা তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করে । তাদেরকে তাদের গৃহ থেকে বহিস্কার করিও না এবং তারাও যেন বের না হয় যদি না তারা কোন সুস্পষ্ট নির্লজ্জ কাজে লিপ্ত হয় । এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা । যে ব্যক্তি আল্লাহর সীমালংঘন করে , সে নিজেরই অনিষ্ট করে । সে জানে না , হয়তো আল্লাহ এরপর কোন উপায় করে দেবেন । অতঃপর তাদের ইদ্দতকালে পূর্ন হওয়ার উপক্রম হলে হয় তাদেরকে যথোপযুক্ত পন্থায় রেখে দেবে অথবা যথোপযুক্ত পন্থায় ছেড়ে দেবে এবং তোমাদের মধ্য থেকে দু’জন নির্ভরযোগ্য লোককে স্বাক্ষী রাখবে । তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে স্বাক্ষ্য দিবে । এতদ্বারা যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে , তাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে । আর যে আল্লাহকে ভয় করে , আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন । সুরা – আত তালাক / ১,২ । বিঃদ্রঃ — পবিত্র কোরআন বলছে – তালাকের জন্য দুজন স্বাক্ষী দরকার । পবিত্র কোরআন বলছে – উভয় পক্ষ সালিশ নিয়োগ করে প্রথম তিনমাস সমঝোতার চেষ্টা করতে হবে । সব মিলিয়ে কমপক্ষে চার মাসব্যাপী সমঝোতার চেষ্টা ব্যর্থ হলে সর্বশেষ তালাক প্রদানের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে । মোটকথা বিয়ে করার সময় প্রচুর জানাশোনা কথাবার্তা খোঁজখবর করতে হয় । একইভাবে তালাকের ক্ষেত্রেও অনেক নিয়মকানুন মানতে হয় । মন চাইল না অথবা তরকারীত লবন কম হইল কেন ? মাগী তোরে তালাক দিলাম ! এসব জংলী আইন কানুন ইসলাম ধর্মে নাই । কি আর কইতাম দুঃখের কথা । বিশেষ করে গাদীর এ খুম পরিত্যাগকারী মুসলমান বলছেন যে , মুখ থেকে ফটাফট তিনবার – তালাক তালাক তালাক – উচ্চারন করলেই কেল্লাফতে – অর্থাৎ তালাক
নবীপত্মীগন , কাফের পত্মী এবং জান্নাত-জাহান্নাম প্রসঙ্গ
মাওলার (আঃ) স্মরনে শুরু করিলাম । হযরত নুহ (আঃ) এবং হযরত লুতের (আঃ) স্ত্রীদ্বয়ের বিশ্বাসঘাতকতার সর্বশেষ পরিনাম । ” — আল্লাহ অবিশ্বাসীদের জন্য নূহের স্ত্রী ও লুতের স্ত্রীর দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন । তারা আমাদের দুইজন ন্যায়নিষ্ঠ বান্দার অধীনে ছিল । কিন্ত তারা দুইজন তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল । ফলে তারা (নবীপত্মী হওয়া সত্বেও) আল্লাহর নিকট (শাস্তি থেকে রক্ষায়) তাদের কোন উপকার সাধন করে নাই এবং বলা হয়েছিল , “(জাহান্নামে) প্রবেশকারীদের সাথে তোমরাও আগুনে প্রবেশ কর —- ” । সুরা – তাহরীম / ১০ । পাঠক বন্ধুগন , আপনার সদয় মনযোগ আকর্ষণ করছি । বর্নিত আয়াতের প্রথমেই বলা হচ্ছে যে , “আল্লাহ অবিশ্বাসীদের জন্য নূহের স্ত্রী ও লুতের স্ত্রীর দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন” । মহান আল্লাহ এখানে হযরত নূহের (আঃ) স্ত্রী এবং হযরত লুতের (আঃ) স্ত্রীর “দৃষ্টান্ত” উপস্থাপন করেছেন । আল্লাহ কিন্ত সরাসরি এভাবে বলতে পারতেন যে , “আল্লাহ অবিশ্বাসীদের জন্য নূহের স্ত্রী ও লুতের স্ত্রীর “কর্ম” উপস্থাপন করেছেন” । এভাবে না বলে আল্লাহ হযরত নূহের (আঃ) স্ত্রী এবং হযরত লুতের (আঃ) স্ত্রীর “দৃষ্টান্ত” উপস্থাপন করেছেন । অর্থাৎ এই দুইজন নবীপত্মীর দৃষ্টান্ত অথবা এই দুইজনের মত আরও দুইজন নবীপত্মী রেয়েছে । যারা এদেরই মত জঘন্য বেঈমানী এবং সীমালংঘন করেছিল । অর্থাৎ এদেরই মত আরও নবীপত্মীগন রয়েছে যারা নবীর (সাঃ) পত্মী হওয়া সত্বেও নবীর (সাঃ) সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল । এবং আল্লাহ এদের সকলকেই ঘাড় ধাক্কা দিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেছেন । বিষয় তাহলে পরিস্কার যে , নবীপত্মী হইলেই ডাইরেক্ট জান্নাতী – এরকম বলার সুযোগ আল্লাহ দেন নাই । আল্লাহ যেসব নবীত্মীগনকে লানতুল্লাহ এবং জাহান্নামী বলে ঘোষনা দিয়েছেন তাদেরকে যেন মনের ভুলেও আমরা “রাঃআনহা সিদ্দিকা” না বলি । কারন লানতুল্লাহকে রাঃআনহু বলা ঘোরতর মহাপাপ । হযরত নূহ (আঃ) ও হযরত লুতের (আঃ) পত্মীগন প্রতি মুহূর্তে এই দুই নবীর (আঃ) বিরুদ্বে ভয়াবহ ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতা করিত । প্রতিক্ষনে এই দুই কুলাঙ্গার নবীপত্মী লানতুল্লাহগন সীমালংঘন করিত । নবীর (আঃ) অনুপস্থিতিতে জঘন্য অপকর্ম সমূহ সম্পাদন করিত । প্রকাশ্য এগুলো বলাটাও পাপ করার সমতূল্য । শালীনতা বজায় রেখে এটুকু বলছি যে , হযরত নূহের (আঃ) পত্নী লানতুল্লাহর বিশ্বাসঘাতকতা এটাও ছিল যে , হযরত নুহের (আঃ) নিকট সমাজের বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ হেদায়েত ও শিক্ষা লাভ করার আগমন করতেন । তখন নূহপত্মী ঐ মানুষগুলোকে বলত , “নুহ একজন বদ্ব পাগল । আমি তো তাঁর ঘর করছি , ফলে তাঁর অবস্থা আমি ভালভাবেই বুঝি । অযথা কেন তোমরা একজন পাগল উম্মাদের নিকটে আস ?” হযরত লুতের (আঃ) স্ত্রী লানতুল্লাহর বিশ্বাসঘাতকতা ছোট একটি নমুনা দেখুন , যখনই কোন মেহমান হযরত লুতের (আঃ) নিকট আসতেন তখন তিনি তার স্বামীর মনে কষ্ট দেওয়ার জন্য ও আগত অতিথিদের নির্যাতন করার জন্য সমকামী লোকদের খবর দিত । বিষয়টি তাহলে পরিস্কার যে , নবীপত্মী হলেই নিশ্চিত জান্নাতী – এরকম মনে করার কোন কারন নাই । ওদেরই মত আরও দুইজন কুলাঙ্গার লানতুল্লাহ নবীপত্মীর দৃষ্টান্ত জানতে হলে সুরা তাহরীম ভালমত পড়ুন । এরকম কুলাঙ্গার পত্মী নবীর (সাঃ) ঘরেও ছিল । আয়েশা লানতুল্লাহ ও হাফসা লানতুল্লাহ মিলে রাসুলের (সাঃ) বিরুদ্বে ভয়ংকর ও নির্মম ষড়যন্ত্র করেছিল । যার পরিপ্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ পরবর্তী আয়াতে আয়েশা এবং হাফসাকে উদ্দেশ্য করে কঠোর ও হুঁশিয়ারী বার্তা প্রেরন করেন । ” —- যদি তোমরা দুইজন আল্লাহর নিকট অনুতাপ কর , কারন নিঃসন্দেহে তোমাদের অন্তর বক্র হয়ে গেছে এবং যদি তোমরা তার (রাসুলের) বিরুদ্বে ষড়যন্ত্রমূলক পরস্পরকে সাহায্য কর , তাহলে (জেনে রাখ) আল্লাহ নিশ্চয়ই তার অভিভাবক এবং জীবরাইল , মুমিনদের মধ্য হতে পূন্যাত্মা ব্যক্তি এবং এরপর ফেরেশতারা তাঁর সাহায্যকারী । হতে পারে যে , যদি সে তোমাদেরকে তালাক দেয় (তাহলে) তার প্রভু তাকে দিবেন (তোমাদের) বদলে (এমন) স্ত্রীদের (যারা) তোমাদের থেকে উত্তম , মুসলিম , মুমিনা , অনুগতা , অনুতাপশীল , ইবাদতকারী এবং রোজা পালনকারী , কুমারীদের এবং অকুমারীদের —– ” । সুরা – তাহরীম / ৪ , ৫ । উল্লেখিত দুইটি আয়াতে সর্বশক্তিমান আল্লাহ রাসুলের (সাঃ) দুইজন পত্মীকে উদ্দেশ্য করে যা বললেন , তার মূল মমার্থ হল যে – ১) – ঐ পত্মীদ্বয় এবং তাদের পিতারা মিলেমিশে পারস্পরিক শলা-পরামর্শ করে রাসুলের (সাঃ) বিরুদ্বে ভয়াবহ ও জঘন্য ষড়যন্ত্র করেছিল । নিষেধ সত্বেও জোরপূর্বক বিষ মিশ্রিত ঔষধ সেবন করিয়ে নবীকে (সাঃ) হত্যা করেছিল । ২) – আল্লাহর ঘোষনামতে ক্ষমতার লোভে ঐ পত্মীদ্বয়ের অন্তর কলুষিত এবং বক্র হয়ে গিয়েছিল । ৩) – মহান আল্লাহ ঐ পত্মীদ্বয়ের এহেন অপকর্মে এতটাই ক্রোধাম্বিত হলেন যে , তাদেরকে তালাক দেওয়ার অনুমতি দিয়ে দিলেন । ৪) – রাসুল (সাঃ) যদি তাদেরকে তালাক দিয়ে দেন তাহলে আল্লাহ ঐ পত্মীদ্বয় থেকে আরও উত্তম ধার্মিক , নামাজি , অনুগতা , রোজা পালনকারী এবং মুমিন স্ত্রী দান করবেন । অর্থাৎ আল্লাহর দৃষ্টিতে ঐ দুইজন পত্মীদ্বয় ধার্মিক , নামাজি , অনুগতা , রোজা পালনকারী স্ত্রী ছিল না । আর এই ব্যাপারটা তো আল্লাহ প্রথমেই পরিস্কার করে দিলেন যে , তাদের অন্তর কলুষিত ও বক্র হয়ে গিয়েছিল । যারজন্য আল্লাহ তাদেরকে তওবা করতে বলেছিলেন । ৫) – মহান আল্লাহ তাদের ওপর এতটাই অসন্তষ্ট ও ক্রোধাম্বিত হয়েছিলেন যে , রাসুলের (সাঃ) নিরাপত্তা ও সাহায্য করবার জন্য স্বয়ং আল্লাহ নিজে দায়িত্ব নিলেন এবং ফেরেশতাগন ও মুমিনগনকেও সেই দায়িত্ব অর্পন করেছিলেন । অর্থাৎ এখানে রাসুলের (সাঃ) জীবনের উপরে হুমকি এসেছিল । মহান আল্লাহ যেহেতু আস্ত একটি সুরা নাজিল করে এতটাই কঠোরভাবে হুশিঁয়ার ও সাবধান করে দিলেন সেহেতু বিষয়টি হালকা করে দেখার কোন অবকাশ নাই । ইতিহাস থেকে আরও জানা যায় যে , আয়েশা লানতুল্লাহ নবীজীর (সাঃ) বিরুদ্বে যত ষড়যন্ত্র করেছিল , তারমধ্যে বেশীরভাগ ষড়যন্ত্রের সাথে হাফসা লানতুল্লাহও জড়িত ছিল । খুবই আশ্চর্যের বিষয় , এই দুইজন নবীপত্নীগনের মাঝে চিন্তা-চেতনার অনেক মিল খুজে পাই । ঠিক যেমনটি ওদের পিতা আবু বকর লানতুল্লাহ ও ওমর লানতুল্লাহর মাঝে যথেষ্ট মিল ছিল । রাসুলের (সাঃ) অন্য সকল স্ত্রীগনের মধ্যে আয়েশা লানতুল্লাহ সবসময় শক্তি আর সামর্থের দিক থেকে অনেকখানি এগিয়ে থাকত । তবে এটাও ঠিক যে , হাফসা বিনতে ওমর লানতুল্লাহ সকল সময় আয়শা লানতুল্লহকে সাহস ও উসকানি যোগাত । প্রিয় পাঠক , এবারে ভিন্ন কিছু দেখে নিন । ফেরাউন লানতুল্লাহর সম্মানীতা ঈমানদার স্ত্রী হজরত আছিয়ার (সাঃআঃ) দৃঢ় ঈমানদারীর পুরস্কার । “—- আল্লাহ বিশ্বাসীদের জন্য ফেরাউনের পত্মীর দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করছেন । যখন সে বলেছিল , “হে আমার প্রভু ! তোমার সন্নিকটে জান্নাতে আমার জন্য একটি বাড়ী নির্মান করিও এবং আমাকে রক্ষা কর ফেরাউন ও তার আচরন থেকে এবং আমাকে রক্ষা কর জালেম দল থেকে — ” । সুরা – তাহরীম / ১১ । ফেরাউন লানতুল্লাহর সম্মানীতা ঈমানদার পত্নী হযরত আছিয়া (সাঃআঃ) এমন দৃঢ় ঈমানের অধিকারিনী ছিলেন যে , তিনি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসে অটল ছিলেন । অর্থাৎ তিনি
তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করতে পেরেছি কি ?
ইদানীং অনেকেই বলে থাকেন যে , অতশত বুঝি না , বুঝতে চাই না । দরকার মনে করি না । রাসুল (সাঃ) সহ সকল সাহাবীবৃন্দকে সমানতালে ভক্তি শ্রদ্বা করি । সকলেই আমাদের পরম পূজনীয় গুরুজন । চট করে কথাটা শুনতে বেশ লাগে । সকলেই মোদের বড় আপনজন । সাতপাঁচ না ভেবে মনের মাধুরী মিশিয়ে কত কথাই বলি আমরা । আসলে আমরা সকলেই আল্লাহ , নবী (সাঃ) , আহলে বাইতগন (আঃ) তথা ইসলাম ধর্মকে নিজের জ্ঞান মোতাবেক বর্ননা করি । অনেকটা এরকম যে , বাপকেও ভালবাসি আবার বাপের খুনীকেও সমানতালে ভালবাসি । ভন্ডামীর এই জাতীয় ফর্মুলা বাহ্যিকভাবে শুনতে মন্দ লাগে না বটে ! তবে মূল কথাটা হল যে , ইসলাম ধর্ম আমাদের আবিস্কৃত ফর্মুলা বা জ্ঞান অনুযায়ী চলে না । এক্ষেত্রে মহান আল্লাহর সিদ্বান্তই শেষ ও চুড়ান্ত । সকলেই আল্লাহর বিধিবিধান মানতে বাধ্য । আল্লাহর আদেশ মেনে চলাই হচ্ছে মূল ইবাদত । অবশ্য ঈবলীশের ইবাদতকারী নামধারী মুসলমানদের কথা মোটেও ধর্তব্য নয় । প্রিয় পাঠক , বিস্ময়কর একটি ব্যাপার খেয়াল করুন । ইসলাম ধর্মের মূলভিত্তি বা বুনিয়াদ শুরুই হয়েছে “লা” অর্থাৎ “না” দিয়ে । না – না — না । “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু” । অর্থ – নাই , অন্য কোন মাবুদ আল্লাহ ব্যতীত — । বাড়তি মনযোগ চাইছি , প্লীজ । পৃথিবীর সকল মুসলমান , যে দল বা সম্প্রদায়ভুক্ত হন না কেন , মূল কলেমাটির সাথে সম্পূর্ন একমত পোষন করেন । পবিত্র কোরআনেও এই কথাটি বহু জায়গায় বলা আছে । এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-পয়গম্বরগন এবং প্রত্যেক ঐশী গ্রন্থেও এই কথাটি বলা আছে । আমি শুধু বলতে চাচ্ছি যে , এই কথাটি মহান আল্লাহ কিন্ত অন্যভাবেও বলতে পারতেন । যেমন = “আমিই আল্লাহ , আমি ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ বা ইলাহ নাই” । আল্লাহ কিন্ত এভাবে কথাটি বলেন নাই । আল্লাহ প্রথমে শুরু করেছেন “লা” অথবা “না” কথাটি দিয়ে । অর্থাৎ মহাপবিত্র আল্লাহকে মনেপ্রানে পরিপূর্নভাবে ধারন করার সর্বপ্রথম পূর্বশর্ত হচ্ছে – “না” । অবশ্য আল্লাহকে ধারন করার মত অনু পরিমান ক্ষমতা কোন মাখলুক বা সৃষ্টির নাই । কেননা যে সত্বাকে বর্ননা করা অসম্ভব তাকেই আল্লাহ বলা হয় । অর্থাৎ সমস্ত প্রকার বর্ননা থেকে আল্লাহ বহু উর্ধে । যারা আল্লাহ বর্ননা করে অথবা আল্লাহ নিয়ে গবেষনা করে বই-কিতাব লেখে তারা সকলেই ঈবলীশের পূজারী । নির্ভেজাল খবিশ এসব ভন্ডদের প্রতি অবিরাম লানত রইল । আর এখানে আল্লাহ সমগ্র সৃষ্টিজগতের জন্য অশেষ করুনা করেছেন । আল্লাহ পরিস্কার করে বলে দিয়েছেন । “ – — আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম , তোমাদের প্রতি “আমার নেয়ামত” সম্পূর্ণ করলাম এবং “ইসলাম” কে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করিলাম —– । সুরা – মাইদাহ / ৩ । গাদীরের ময়দানে আল্লাহর পরিস্কার আদেশ – “আলীউন ওয়ালীউল্লাহ” । মাওলা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর আশ্রয়স্থল ও নিরাপত্তা । মাওলা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর দূর্গ । মাওলা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর করুনা , রহমত । মাওলা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর হুজ্জাত । মাওলা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর দলীল । মাওলা আলী (আঃ) হলেন সিরাতুল্লাহ (আল্লাহর পথ) । মাওলা আলী (আঃ) হলেন কালামুল্লাহ (আল্লাহর কথা) । মাওলা আলী (আঃ) হলেন ইজ্জতুল্লাহ (আল্লাহর ইজ্জত) । মাওলা আলী (আঃ) হলেন জান্নাত ও জাহান্নামের বিতরণকারী । মাওলা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর পথপ্রদর্শক । মাওলা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর হুকুম ا মাওলা আলী (আঃ) হলেন বিচার দিবসের মালিক (মালিক ইউম আল কিয়ামত) । মাওলা আলী (আঃ) হলেন সকল নূরের নূর (নূর আল আনওয়ার) । মাওলা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর হাত (ইয়াদুল্লাহ) । মাওলা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর জিহ্বা (লিসানুল্লাহ) । মাওলা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর কান (ইজ্জনুল্লাহ) । মাওলা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর চোখ (আইনুল্লাহ) । মাওলা আলী (আঃ) আল্লাহর চেহারা (ওয়াজহুল্লাহ) । একমাত্র মাওলা আলীর (আঃ) ওয়ালায়াহ বা বেলায়েত হচ্ছে আল্লাহর ওয়ালায়াহ । যেটা সমগ্র সৃষ্টিজগত বিশেষ করে মানব ও জ্বীন জাতির উপর ওয়াজীব বা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং তা এভাবেই থাকবে যতক্ষণ না বিচারের দিন আসে । এবং যারা মাওলা আলীর (আঃ) অনুগত বা বাধ্য নয় আল্লাহ স্বয়ং নিজে তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন I ইমাম হাসান (আঃ) থেকে অষ্টম ইমাম রেজা (আঃ) বলেছেন যে , আল্লাহর রাসুল (সাঃ) নিজে মাওলা আলীকে (আঃ) বলেন , হে আলী (আঃ) ! আপনি (আঃ) হলেন মহান আল্লাহর প্রমাণ এবং আপনি (আঃ) হলেন মহান আল্লাহর দরজা এবং আপনিই (আঃ) মহান আল্লাহর পথ । আর আপনিই (আঃ) হলেন মহৎ সংবাদ এবং আপনিই (আঃ) সর্বশ্রেষ্ঠ উত্তম উদাহরণ । সূত্র – তাফসীরে সুলাইম বিন কায়েস আল হিলালি / তাফসীরে ইমাম হাসান আল আসকারী (আঃ) – ইংরেজী ভার্সন থেকে সংগৃহীত । “আলীউন ওয়ালীউল্লাহ” – এই নীতিকথাটির পরিস্কার মানে হল যে , সর্বপ্রথম সকল প্রকার মিথ্যা , ভূয়া এবং বাতিল মতবাদগুলোকে প্রত্যাখ্যান বা অস্বীকার বা “না” বলতে হবে । পবিত্র কোরআন স্বাক্ষ্য দেয় যে , হযরত ইব্রাহীম (আঃ) ঠিক এই পদ্বতিটি গ্রহন করেছিলেন । হযরত ইব্রাহীম (আঃ) সর্বপ্রথম সূর্য , চন্দ্র ও পাথরের মূর্তিকে স্রষ্টা হিসাবে মানতে অস্বীকার করেছিলেন । অর্থাৎ হযরত ইব্রাহীম (আঃ) শুরু করেছিলেন অস্বীকার , প্রত্যাখ্যান ও “না” দিয়ে । আমাদের মহানবী (সাঃ) ৪০টি বছর পরেই আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করেছিলেন । এই ৪০ বছরের পূর্ব দিনটি পর্যন্ত তিনি ইসলাম তথা “আলীউন ওয়ালীউল্লাহ” ধারন করার ক্ষেত্র প্রস্তত করেছেন । ঐ সময়টিতে তিনি মিথ্যা ও বাতিলকে যথাসাধ্য সকলের সামনে তুলে ধরেছেন । কারন একমাত্র হক বা সত্য “আলীউন ওয়ালীউল্লাহ” ধারন করতে হলে অবশ্যই ধারনকৃত পাত্রটিকে পরিস্কার করে নিতে হবে । ময়লা আবর্জনা সমেত কোন পাত্রের মধ্যে যে কোন উত্তম বিষয়াদি রাখা মোটেই বুদ্বিমানের কাজ নয় । ঠিক তেমনি অন্তর যত সত্য সুন্দর পরিস্কার হবে মহান আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ঠিক ততটাই গাঁঢ় ও সুদৃঢ় হবে । অন্তর যত সত্য সুন্দর পরিস্কার হবে মহান আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ঠিক ততটাই সুমিষ্ট ও সুমধুর হবে । পবিত্র কোরআন ঠিক এই কথাটিই বলে যে , সত্য ও মিথ্যার সহাবস্থান একবারেই অসম্ভব একটি বিষয় । পবিত্র কোরআন ঠিক এই কথাটিই বলে যে , জেনে শুনে সত্যের সাথে মিথ্যার মিশ্রন করিও না । ” — এবং তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করিও না এবং জেনেশুনে সত্য গোপন করিও না —।” সুরা – বাকারা / ৪২ । কথা দাদা জলের মত পরিস্কার যে , একই অন্তরে বনু সকিফা এবং গাদীরের সহাবস্থান হতে পারে না । একই অন্তরে তিনখবিশ লানতুল্লাহ এবং “আলীউন ওয়ালীউল্লাহ” তথা মাওলা আলীর (আঃ) সহাবস্থান হতে পারে না । একই অন্তরে মুয়াবিয়া এবং মাওলা আলীর (আঃ) সহাবস্থান অসম্ভব । বর্নিত আয়াতটিতে পরিস্কার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে যে , সর্বপ্রথম মিথ্যা ও বাতিলকে প্রত্যাখ্যান এবং অস্বীকার করতে হবে । এবং
রেসালতের প্রতি সন্দেহ পোষন এবং মেজখবিশ ওমর প্রসঙ্গ
সামগ্রিকভাবে ঘটনাটির সংক্ষিপ্ত বিবরন এইরকম যে , হিজরী ষষ্ঠ সালে রাসুল (সাঃ) প্রায় ১৪০০ শত সাহাবীগনকে সাথে নিয়ে ওমরাহ হজ্ব পালন করার উদ্দেশ্যে মক্কা অভিমুখে রওয়ানা হলেন । মক্কার নিকটবর্তী হলে মহানবী (সাঃ) সকল সাহাবাগনকে হুকুম দিলেন তরবারীগুলো খাপের মধ্যে রাখতে । জুলহুলাইফা , মক্কার নিকটবর্তী একটি স্থান । সেখানে পৌঁছেই রাসুল (সাঃ) সকল সাহাবাগনকে সাথে নিয়ে ওমরাহর জন্য এহরাম বাঁধলেন এবং কোরবানীর পশুগুলোর গলায় চামড়ার বন্ধনী ও কাঁধে দাগ দিয়ে দিলেন যাতে করে মক্কার কোরাইশদের বিশ্বাস হয় যে , মুহাম্মাদ (সাঃ) কোন প্রকার যুদ্বের জন্য নয় বরং মক্কাতে শুধুমাত্র ওমরাহ পালনের জন্যই এসেছেন । দুভার্গক্রমে , সমগ্র মক্কায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে , মুহাম্মাদ (সাঃ) তাঁর দলবল নিয়ে জোরপূর্বক মক্কায় প্রবেশ করে কোরাইশগনের মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দেবেন । এই ভয় থেকেই কোরাইশগন সোহাইল ইবনে আমরের নেতৃত্বে মুহাম্মাদের (সাঃ) নিকট একদল প্রতিনিধি পাঠায় এবং প্রস্তাব দেয় যে , “আপনি এই বছর ওমরাহ না করে ফিরে যান , আগামীতে তিনদিনের জন্য মক্কা নগরী খুলে দেব , তখন এসে ওমরাহ পালন করবেন” । উভয় পক্ষের বিস্তর কথাবার্তার পরে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট শর্তের ভিত্তিতে এবং সর্বোপরি মহান আল্লাহর ওহী মোতাবেক রাসুল (সাঃ) কোরইশগনের সাথে সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ব হন । এটিই “হুদায়বিয়ার শান্তি সন্ধি” নামে ইতিহাসে খ্যাত হয়ে আছে । এবারে মূল প্রসঙ্গে আসছি । মহান আল্লাহর সরাসরি হুকুমে রাসুলের (সাঃ) এই পদক্ষেপ কতিপয় ক্ষমতাধর কথিত সাহাবাগনের কিছুতেই মনঃপুত হইল না । প্রচন্ড বিরক্ত সহকারে মেজখবিশ ওমর লানতুল্লাহ সরাসরি রাসুলের (সাঃ) মুখের উপর বলল , “হে মুহাম্মাদ (সাঃ) ! আপনি কি সত্য সত্যই আল্লাহর রাসুল নন ?” ক্রোধান্বিত স্বরে পুনরায় মেজখবিশ ওমর লানতুল্লাহ জিজ্ঞেস করল , “আমরা কি সত্যের উপর এবং দুশমনরা কি মিথ্যার উপর নয় ?” শান্তভাবে রাসুল (সাঃ) বললেন , “অবশ্যই আমরাই সত্যের উপর” । অনেকটা কৈফিয়ত তলবের মত করে মেজখবিশ ওমর লানতুল্লাহ বলল , “তাহলে কেন আমরা এত অপমানজনক শর্তে তাদের সাথে সন্ধি করব”? আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বললেন , “শোন হে ওমর ! আমি হচ্ছি আল্লাহর রাসুল (সাঃ) , আমি যাই কিছু করি সবই আল্লাহর হুকুমে করি , আমি আল্লাহর অবাধ্য হতে পারি না , যেহেতু তিনিই আমার সাহায্যকারী” । তখন মেজখবিশ ওমর লানতুল্লাহ বলল , “আপনি কি আমাদের বলেননি যে , অচিরেই আমরা ক্বাবা ঘর তাওয়াফ করতে যাব ?” আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বললেন , “ঠিকই বলেছি , কিন্ত আমি কি তোমাদের ঠিক এই বছরই করব – এরকম কোন কথা বলেছিলাম ?” মেজখবিশ ওমর লানতুল্লাহ বলল , “না , তা অবশ্য বলেন নাই ।” তখন রাসুল (সাঃ) বললেন , “শান্ত হও , এত অধৈর্য হইও না । অবশ্যই তোমরা আসবে এবং আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করবে , ইনশাল্লাহ” । রাসুলের (সাঃ) এই কথায় মেজখবিশ ওমর লানতুল্লাহ সন্তষ্ট না হয়ে বড়খবিশ আবু বকর লানতুল্লাহর নিকট গেল এবং পুরো বিষয়টি নিয়ে পুনরায় কথা বলল । এক পর্যায় রাসুল (সাঃ) সন্ধি বৈঠক থেকে উঠে এসে সাহাবাগনের উদ্দেশ্যে বললেন , “তোমরা যেয়ে কুরবানী কর এবং মাথা মুড়িয়ে নাও” । বর্ননকারী বলছেন , আল্লাহর কসম ! নবীজীর (সাঃ) এই কথা শুনে কেউ উঠেন নাই ! এমতাবস্থায় , মহানবী (সাঃ) তিনবার একই নির্দেশ দিলেন । এরপরেও যখন কেউ তাঁর কথামত কেউ উঠেনি তখন তিনি নিজেই উঠে হুজরার দিকে চলে গেলেন । কিছুক্ষন পরে তিনি হুজরা থেকে বেরিয়ে এসে কারও সাথে কোন কথা না বলে নিজের মাথা কামালেন । সাহাবাগন এই দৃশ্য দেখলেন এবং নিজ নিজ পশু কুরবানী করলেন ও একে অন্যের মাথা কামালেন । প্রিয় পাঠক , এই হইল হুদাইবিয়ার সন্ধির সংক্ষিপ্ত ঘটনা সমূহের বিবরন । ঘটনাটি সম্পর্কে শীয়া সুন্নি সকলেই একমত । ঐতিহাসিক এই ঘটনাটি তাবারী , ইবনে আসীর , ইবনে সাঈদ , সহীহ বুখারী , সহীহ মুসলিমসহ অনেক ঐতিহাসিকগন তাদের কিতাবে লিপিবদ্ব করেছেন । এখানেই আমি থমকে গেলাম ! কেননা এটা কি করে সম্ভব যে , এমন ঘটনা জানার পরেও মনে কোন প্রতিক্রিয়া হবে না । খুব অবাক হয়ে যাই যে , তারা কেমন সাহাবী ছিলেন যে , তারা নিজেরাই নবীজীর (সাঃ) মুখের উপর এভাবে তর্ক করতে পারে ? এই ঘটনার পরে দুনিয়ার এমন কোন সচেতন ব্যক্তি আছেন কি ? যারা মানতে রাজী হবেন যে , রাসুলের (সাঃ) সকল সাহাবীগন সত্যিই কি মন থেকে রাসুলের (সাঃ) সমস্ত কর্ম বা আদেশ-নিষেধ বিনা বাক্যব্যয় মানতে রাজী ছিলেন ? এটা কিভাবে সম্ভব যে , কতিপয় প্রভাবশালী কথিত সাহাবী মুহাম্মাদের (সাঃ) রেসালতের প্রতি সন্দেহ পোষন করে ? বিবেক বুদ্বি সম্পন্ন কোন সচেতন ব্যক্তি কি এটা মেনে নিতে পারে যে , মহানবীর (সাঃ) সম্মুখে এমনতর আপত্তি তোলা কি সাধারন বিষয় ? বিনীতভাবে জানতে চাই যে , উক্ত নামকরা কুখ্যাত মুনাফিক কি জানত না যে , পবিত্র কোরআনে পরিস্কার করে বলা আছে । ” — তোমাদের সাথী না পথভ্রষ্ট হয়েছে , আর না বিভ্রান্ত হয়েছে এবং সে মনগড়া (প্রবৃত্তির বশে) কোন কথা বলে না , এতো কেবল প্রত্যাদেশ (ওহী) , যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয় —– ” । সুরা – নাজম / ২, ৩ , ৪ , ৫ । উক্ত নামকরা কুখ্যাত মুনাফিক কি জানত না যে , পবিত্র কোরআনে পরিস্কার করে বলা আছে । ” —- মুমিন তো তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার পর কখনও সন্দেহ পোষন করে নাই —– ।” সুরা – হুজরাত / ১৫ । উক্ত নামকরা কুখ্যাত মুনাফিক কি জানত না যে , পবিত্র কোরআনে পরিস্কার করে বলা আছে । “ – একজন মুমিন পুরুষ এবং একজন মুমিন নারীর অধিকার নেই , যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কোন একটি বিষয় সিদ্বান্ত নিয়েছেন , তাঁদের বিষয় অন্য কোন কিছু পছন্দ করার এবং যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে অমান্য করে নিঃসন্দেহে [সে] পথভ্রষ্ট হয়েছে সুস্পষ্ট ভুলের ভিতরে – “ । সুরা – আহযাব / ৩৬ । পবিত্র কোরআনে বর্নিত এই তিনটি আয়াত অনুযায়ী মেজখবিশ ওমর লানতুল্লাহর অবস্থান কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় ? সে কি আল্লাহ ও মহানবীর (সাঃ) সিদ্বান্তে সন্তষ্ট হতে পেরেছিল ? “হে মুহাম্মাদ (সাঃ) ! আপনি কি সত্য সত্যই আল্লাহর রাসুল নন ?” সে কি মহানবীর (সাঃ) রেসালতের বিষয় সন্দিহান ছিল না ? পাঠক , এই ঘটনাগুলো যদি শীয়াদের গ্রন্থে উল্লেখ থাকত , তাহলে কিছুতেই বিশ্বাস করতাম না । কিন্ত এই ঘটনাতো আমাদের সহীহ সিত্তাহ গ্রন্থে বিদ্যমান । এই বিষয় শীয়া-সুন্নি সকলেই একমত । তাই অনিচ্ছা সত্বেও বিশ্বাস না করে কোন উপায় নাই । তাছাড়া নবীজীর (সাঃ) নির্দেশের প্রতি সন্দেহ পোষনকারী কতিপয় ক্ষমতাধর কথিত সাহাবাগনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করার সামান্যতম সুযোগ আছে ? উল্লেখ্য যে , নবুয়ত ঘোষনার প্রায় বিশ বছর পরে হুদাইবিয়ার চুক্তি হয় । দীর্ঘদিন ওরা মহানবীর (সাঃ) সাথে ছিল
রাসুলের (সাঃ) মিম্বরে বানরের নৃত্য এবং কিছু প্রশ্ন ।
সর্বশক্তিমান আল্লাহ যাকে বের করে দিলেন দুনিয়ার কেউ কি তাকে পুনরায় ফিরিয়ে আনার দুঃসাহস রাখে ? অর্থাৎ ঈবলীশ লানতুল্লাহকে স্বয়ং আল্লাহ নিজে তাঁর দরবার থেকে বের করে দিলেন । অতএব , ঈবলীশ চিরজনমের মত লানতি এবং জাহান্নামী হয়ে গেল । দুনিয়ার কেউই ঈবলীশের বিষয় বিন্দুমাত্র হস্তক্ষেপ করার অধিকার রাখে না । ” — সে (ঈবলীশ) বলিল , আমি তার থেকে উত্তম , আপনি আমাকে আগুন হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন কাদামাটি থেকে । তিনি (প্রতিপালক) বলিলেন , তুমি এখান থেকে বেরিয়ে যাও , নিশ্চয়ই তুমি বিতাড়িত এবং তোমার উপর বিচার দিবস অবধি আমার অভিশাপ বর্ষিত হতে থাকবে —– ” । সুরা – সাদ / ৭৬ , ৭৭ , ৭৮ । পবিত্র কোরআনে ঘটনাটি এভাবেই বলা আছে । এই ঘটনাটির বহু হাজার বছর পরে এই জাতীয় বহিস্কারের ঘটনা ঘটেছিল মদীনা শহরে । ছোট্ট একটি প্রশ্ন সকলের সমীপে – ঠিক একইভাবে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) যদি কোন ব্যক্তিকে মদীনা থেকে বের করে দেন তাহলে অন্য কোন ব্যক্তির পক্ষে এটা কি সঠিক যে , আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কতৃক বিতাড়িত ব্যক্তিকে পুনরায় মদীনাতে ফিরিয়ে এনে গুরুত্বপূর্ন পদে বহাল করে দেওয়া ? এক কথায় জবাব হল , রোজ কেয়ামত পর্যন্ত কোন মুমিন ব্যক্তির সামান্যতম অধিকার নাই যে , আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের (সাঃ) সিদ্বান্তের বিষয় বিন্দুমাত্র হস্তক্ষেপ করে । অবশ্য ঐ ব্যক্তি যদি মুমিন না হয়ে ঈবলীশ লানতুল্লাহর খাস চামচা হয় তাহলে ঐ খবিশ ব্যক্তি যা ইচ্ছা তাই করতে পারে ! “ – একজন মুমিন পুরুষ এবং একজন মুমিন নারীর অধিকার নেই , যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসুল কোন একটি বিষয় সিদ্বান্ত নিয়েছেন , তাঁদের বিষয় অন্য কোন কিছু পছন্দ করার এবং যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে অমান্য করে নিঃসন্দেহে [সে] পথভ্রষ্ট হয়েছে সুস্পষ্ট ভুলের ভিতরে — “ । সুরা – আহযাব / ৩৬ । প্রিয় পাঠক , আলোচনার মূলে আসছি । ” —- এবং যখন আমরা আপনাকে বলেছিলাম যে , নিশ্চয়ই আপনার প্রতিপালক মানুষকে পরিবেষ্টন করে আছেন এবং আমরা আপনাকে যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলাম তা কেবল মানুষের জন্য পরীক্ষার মাধ্যম ছিল এবং কোরআনে বর্নিত অভিশপ্ত বৃক্ষটিও । আমরা মানুষকে ভীতি প্রর্দশন করতে থাকি । কিন্ত তা তাদের চরম ঔদ্বতাকেই কেবল বৃদ্বি করে —– ” । সুরা – বনী ঈসরাইল / ৬০ । উপরে উল্লেখিত পবিত্র কোরআনের আয়াতের প্রেক্ষিতে এটা বলা হয় – ইবনে জাবির সুহাইল বিন সাদ হতে , ইবনে আবি হাতিম ইবনে উমর এবং ইয়ালা বিন মুররা হতে এবং ইবনে মারদুইয়্যা এবং ইমাম হোসেন (আঃ) হতে , ইবনে আব্বাস হতে , আয়েশা লানতুল্লাহ হতে , বায়হাকী এবং ইবনে আসাকীর সাঈদ বিন মুসাইয়্যের হতে বিভিন্ন রেওয়ায়েতে বর্ননা করেছেন তার মূল সারমর্ম হল যে , একদা আল্লাহর রাসুল (সাঃ) স্বপ্নে দেখেন যে , বনু উমাইয়া তাঁর মিম্বরে উঠে বানরের মত নাচানাচি করছে । এই স্বপ্ন দেখে মহানবী (সাঃ) এমনই শোকাহত হলেন যে , এরপর যতদিন রাসুল (সাঃ) বেঁচে ছিলেন তিনি আর মনখুলে হাসেন নাই । পবিত্র কোরআনে উল্লেখিত “অভিশপ্ত বৃক্ষটি” হচ্ছে মারওয়ান বিন হাকাম । কে এই মারওয়ান ? সংক্ষিপ্ত পরিসরে জেনে নিন । নাম – মারওয়ান বিন হাকাম , পিতা – আল হাকাম ইবনে আল আস , মাতা – আমিনা বিনতে আল কামা আন কিনাইয়া , জন্ম – ৬২৩ অথবা ৬২৬ , মৃত্যু – ৬৮৫ , জীবনকাল – ৬৩ বছর । কিছু কুখ্যাত কর্মের বিবরন – ছোটখবিশ ওসমান লানতুল্লাহর এক কন্যাকে বিবাহ করার সুবাদে ছোটখবিশ ওসমান লানতুল্লাহর অন্যতম রাজনৈতিক সচিব এবং রাষ্ট্রীয় মন্ত্রীসভার নীতি নির্ধারনী প্রভাবশালী সদস্য ছিল । ইতিহাস স্বাক্ষ্য দেয় যে , ছোটখবিশ ওসমান লানতুল্লাহর শাসন আমলে সীমাহীন স্বজনপ্রীতি এবং প্রচন্ড আর্থিক দূর্নীতির মূল ব্যক্তিদের মধ্যে মারওয়ান লানতুল্লাহ অন্যতম কারিগর ছিল । মূলত মারওয়ান ইবনে হাকাম লানতুল্লাহর অহমিকা এবং কূটকৌশলের জন্য ছোটখবিশ ওসমান লানতুল্লাহকে সাধারন জনতার হাতে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরন করতে হয় । অবশ্য ছোটখবিশ ওসমান লানতুল্লাহ নিজেও মাওলা আলীর (আঃ) ন্যায্য অধিকার হরন করে সম্পূর্ন অবৈধভাবে তৃতীয় খলীফার পদে বসেছিল । মূলত এরা সকলেই গাদীরের ময়দানে ঘোষিত “আলীউন ওয়ালিউল্লাহ” প্রত্যাখ্যানকারী খবিশ লানতুল্লাহগন । মাওলা আলীর (আঃ) বিরুদ্বে জঙ্গে জামাল যুদ্বের প্রধান উদ্যোক্তাদের মধ্যে মারওয়ান লানতুল্লাহ অন্যতম একজন খলনায়ক ছিল । “আলীউন ওয়ালিউল্লাহ” প্রত্যাখ্যানকারী খবিশ আবু তালহা ইবনে উবায়েদ লানতুল্লাহকে মারওয়ান হত্যা করে । মাওলা আলীর (আঃ) শাহাদাতের পরে কুলাঙ্গার মুয়াবিয়া লানতুল্লাহর শাসন আমলে মারওয়ান লানতুল্লাহ মদীনার গর্ভনর পদে নিয়োগ পায় । নরাধম ইয়াজিদ লানতুল্লাহর পটল তোলার পরে এক পর্যায় মারওয়ান বিন হাকাম লানতুল্লাহ মুসলিম জাহানের খলীফা পদে আসীন হয় । খালিদ বিন ওয়ালিদ লানতুল্লাহর জননী এবং ইয়াজিদ লানতুল্লাহর বিধবা পত্মী উম্মে হাশিম ফাখিতাকে বিবাহ করে । নবীকন্যা ফাতেমার (সাঃআঃ) বৈধ পৈত্রিক সম্পত্তি বাগে ফাদাক তখন মারওয়ান ইবনে হাকাম লানতুল্লাহর হাতেই ছিল । মারওয়ান ইবনে হাকাম লানতুল্লাহ পূর্বের বনু উমাইয়াদের ধারা মতেই খেলাফতের শাসন অব্যাহত রাখে । অর্থাৎ মাওলা আলীর (আঃ) পবিত্র সন্তানদের (আঃ) ন্যায্য অধিকার হরনকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিল । মুসলিম ঐতিহাসিক লেখকগনের মতে আভ্যন্তরীন জাতিগত বিদ্বেষ এবং প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের কারনে ঘুমন্ত অবস্থায় তারই পত্মী উম্মে হাশিম ফাখিতার হাতে খুন হন মারওয়ান ইবনে হাকাম লানতুল্লাহ । মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৬৩ বছর । তাকে দামেস্কে সমাহিত করা হয় । পাঠক , মহানবী (সাঃ) নিজের জীবদ্দশায় মারওয়ান বিন হাকাম লানতুল্লাহর সীমাহীন পাপাচার ও প্রচন্ড অপকর্মের দরুন মদীনা থেকে চিরস্থায়ীভাবে বহিস্কার করেছিলেন । সেইজন্য জনগন তাকে “রাসুল (সাঃ) কতৃক বিতাড়িত ব্যক্তি” বলত । সূত্র – তাফসীরে দুররে মানসুর , ৪র্থ খন্ড , পৃ- ১৯৯ / আল কুরআনুল কারীম , প্রথম খন্ড , উর্দু অনুবাদ – মাওলানা ফরমান আলী সাহেব , বাংলা অনুবাদ – মাওলানা শেখ ছাবের রেজা , পৃ- ৪৭১ । সঙ্গত কারনেই প্রশ্নটা চলে আসে যে , আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কতৃক বিতাড়িত একজন জঘন্য প্রকৃতির খবিশ ব্যক্তিকে কিভাবে ছোটখবিশ ওসমান লানতুল্লাহ তার শাসন আমলে মদীনাতে পুনরায় ফিরিয়ে আনিল ? এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে কিভাবে বহাল করিল ? কিভাবে মুসলিম জাহানের সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী এবং পরবর্তীতে মুসলিম জাহানের খলীফা হয় ? আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কতৃক বিতাড়িত একজন জঘন্য প্রকৃতির খবিশ ব্যক্তিকে যিনি বা যারা ফিরিয়ে আনে তারাইবা কেমনতর মর্যাদা সম্পন্ন কথিত “সাহাবী” ও “খলীফা” ছিল ? মূলত এরা সকলেই ছিল বেঈমান-গাদ্দার-মুনাফিক । কেননা “আলীউন ওয়ালীউল্লাহ” অস্বীকারকারী এবং প্রত্যাখ্যানকারী খবিশ লানতুল্লাহর পরিচয় শুধু একটিই – বেঈমান-গাদ্দার-মুনাফিক । এদের উপরে প্রচন্ড ঘৃনা , ভয়াবহ মর্মান্তিক শাস্তি এবং আল্লাহর কঠিন লানত বর্ষিত হোক । ঈলাহী আমিন । ” —- নিশ্চয়ই মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বাপেক্ষা সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে এবং তুমি সেখানে কাউকেই তাদের সহায়ক পাইবে না —- ” । সুরা – নিসা / ১৪৫ । পুরো বিষয়টি একটু ভেবে দেখবেন কি ! সদা মঙ্গলময় থাকুন , সর্বদা এই
১৩ই রজব –
এসেছিলেন তিনি (আঃ) আল্লাহর আরশ থেকে । এসেছিলেন তিনি (আঃ) সরাসরি আল্লাহর আরশ থেকে । তাঁর (আঃ) পবিত্র চরনের স্পর্শ পেয়ে পৃথিবীর সর্বোচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন পবিত্র কাবাগৃহ ধন্য হয়ে গেল । কাবা গৃহ নিজেকে অন্য সকলের থেকে বর্ননাহীন সম্মানীত বোধ করিল । তাঁর (আঃ) পবিত্র চরনধূলির স্পর্শ পাওয়ামাত্র সমগ্র সৃষ্টিজগতের কেবলা পরিবর্তীত হয়ে গেল । পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত তাঁর (আঃ) আগমন গৃহ তথা কাবা গৃহের সম্মুখে সকলেই সেজদা বা মাথা নুইয়ে দেয় । কাবা গৃহ তার প্রকৃত মর্যাদা পেল । সমগ্র সৃষ্টিজগত বিশেষ করে মানবজাতির জন্য এই দিবসটি সত্যিই সৌভাগ্য এবং আনন্দ-খুশীর দিবস । হযরত ইমরান ওরফে আবু তালিব (আঃ) এবং ফাতেমা বিনতে আসাদ (সাঃআঃ) দম্পতির ফুলের বাগানে সন্তান হয়ে মাওলা আলী ইবনে আবু তালিব (আঃ) আজকের দিবসে এই ধরনীতে পদার্পন করেছিলেন । তাঁর (আঃ) শুভ আগমনে সমগ্র সৃষ্টিজগত ধন্য হয়ে গেল । একমাত্র তাঁর (আঃ) শুভ আবিভার্বের জন্যই মহান আল্লাহর অশেষ নেয়ামত বা করুনা সুসম্পন্ন হয় । একমাত্র তাঁর (আঃ) শুভ আবিভার্বের ফলেই গাদীরের ময়দানে ইসলাম অর্থাৎ “আলীউন ওয়ালীউল্লাহ” শতভাগ পরিপূর্নতা পায় । সর্বশক্তিমান আল্লাহ নিজে বলছেন যে — “ – — আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করিলাম , তোমাদের প্রতি “আমার নেয়ামত” সম্পূর্ণ করিলাম এবং “ইসলাম”কে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করিলাম —– ।” সুরা – মাইদাহ / ৩ । ” — সুতরাং তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন অনুগ্রহ অস্বীকার করিবে — ?” সুরা – রাহমান / ১৩ । সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিকটে লক্ষ কোটি শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি । ১৩ই রজব দিবসে আমিরুল মুমেনিন মাওলা আলী (আঃ) এই পৃথিবীতে এসেছিলেন । এসেছিলেন তিনি (আঃ) পবিত্র কাবা গৃহের ঠিক অভ্যন্তরে । ইমাম আলী (আঃ) সম্পর্কিত তথ্য । নাম – হযরত আলী ইবনে আবু তালিব (আঃ) । পিতার নাম – হযরত ইমরান (আঃ) , যিনি আবু তালিব (আঃ) নামে সর্বাধিক পরিচিত । মাতার নাম – ফাতেমাহ বিনতে আসাদ (সাঃআঃ) । আগমন তারিখ – ১৩ই রজব , আমূল ফিলের ত্রিশ বছর পর । আগমন স্থান – পবিত্র ক্বাবা গৃহের ঠিক অভ্যন্তরে । শাহাদাত – ২১শে রমজান , ৪০ হিজরী । প্রকাশ্য অবস্থান – ৬৩ বছর ২ মাস ৭ দিন । বেলায়েত লাভ – ১৮ই জিলহজ্ব , ১০ম হিজরী । ইমামতকাল – ৩০ বছর । শাহাদাতের স্থান – কুফা মসজিদের মেহরাবে । হত্যাকারী – আব্দুর রহমান ইবনে মুলজেম লানতুল্লাহ । বিশ্রাম স্থল – নাজাফে আশরাফ , ইরাক । মাওলা আলীর (আঃ) মায়ের নাম ফাতেমাহ বিনতে আসাদ (সাঃআঃ) । তিনি ছিলেন আসাদ ইবনে হাশেমের কন্যা । আরবের রীতি অনুযায়ী ওনার নাম – ফাতেমাহ বিনতে আসাদ (সাঃআঃ) । ওনার স্বামীর নাম – হযরত ইমরান (আঃ) , আবু তালিব (আঃ) বলে সর্বাধিক পরিচিত । তিনি মহানবীর (সাঃ) প্রতি প্রথম ঈমান আনয়নকারী মহিলা । নবীজীর (সাঃ) নবুয়তের ঘোষনার পূর্বে তিনি হযরত ইবরাহীমের (আঃ) ধর্মের অনুসারী বা শীয়া ছিলেন । তিনি একজন পুতঃপবিত্রা নারী ছিলেন । সেদিন ছিল শুক্রবার । রজব মাসের ১৩ তারিখ , মহানবীর (সাঃ) নবুয়ত ঘোষনার দশ বৎসর পূর্বে এবং হিজরতের তেইশ বছর পূর্বের এমনই একদিনে , হযরত ফাতেমা বিনতে আসাদ (সাঃআঃ) অন্যান্য দিনের মত সাংসারিক কাজকর্মে ব্যস্ত ছিলেন । হঠাৎ করেই তাঁর (সাঃআঃ) নিকটে গায়েব থেকে ঐশী নির্দেশ এল যে , তিনি যেন তখনই পবিত্র কাবা গৃহে চলে যান । ঐশী নির্দেশ মোতাবেক হযরত ফাতেমা বিনতে আসাদ (সাঃআঃ) পবিত্র কাবা গৃহে চলে যান এবং কাবা গৃহের দেয়ালের নিকট বসে পড়েন । তখন পবিত্র কাবা গৃহে প্রবেশের পূর্ব মুহূর্তে মাওলা আলীর (আঃ) জননী (সাঃআঃ) মহান আল্লাহকে উদ্দেশ্য করে প্রার্থনা করলেন , “হে আমার রব ! নিঃসন্দেহে আমি আপনার প্রতি বিশ্বাসী এবং রাসুল (সাঃ) আপনার পক্ষ থেকে যা নিয়ে এসেছেন I আমি বিশ্বাস করি আপনার রাসুলদের (আঃ) মধ্য থেকে সকল নবী-পয়গম্বরদের (আঃ) প্রতি এবং সমস্ত খোদায়ী নাযিলকৃত ঐশী কিতাবের প্রতি । নিশ্চয় আমি আল্লাহর বিশেষ বন্ধু আমার পূর্বপুরুষ হযরত ইব্রাহিমের (আঃ) এর কথার স্বাক্ষ্য দিচ্ছি । নিঃসন্দেহে তিনি (আঃ) আপনার প্রাচীন গৃহ পুনঃনির্মাণ করেছেন । আমি আপনার কাছে এই ঘরের অধিকার এবং যিনি এটি নির্মাণ করেছেন তাঁর নামে প্রার্থনা করছি । আমার অস্তিত্বে যে শিশুটি রয়েছে যে আমার সাথে নিত্যদিন কথা বলে এবং তাঁর (আঃ) কথার মাধ্যমে আমাকে সান্ত্বনা দেয় , আমি তাঁর অধিকারের (হক) মাধ্যমে আপনার নিকটে প্রার্থনা করছি । আমি অবশ্যই নিশ্চিত যে , একমাত্র তিনিই (আঃ) আপনার নিদর্শন এবং আপনার প্রমাণগুলির মধ্যে একটি অন্যতম নিদর্শন । প্রভু হে ! দয়া করে তুমি এই শিশুটির (আঃ) মান-মর্যাদার সম্মানের ওছিলায় শিশুটির (আঃ) আবির্ভাব আমার জন্য সহজ করে দাও ।” ঐ মুহূর্তে পবিত্র কাবা প্রাঙ্গনে কমপক্ষে ষাট গোত্রের লোকজন উপস্থিত ছিল । কেউ তাওয়াফে ব্যস্ত এবং কেউ অন্যান্য কাজে ব্যস্ত ছিল । কাবা প্রাঙ্গনে উপস্থিত সমস্ত লোকজনের নয়ন সম্মুখে পবিত্র কাবা গৃহের দেয়ালে ফাটল সৃষ্টি হল এবং তিনি ঐ ফাটলের পথ দিয়ে কাবা গৃহের অভ্যন্তরে প্রবেশ করা মাত্রই ফাটলটি পুনরায় জোড়া লেগে গেল । তখন ওখানে উপস্থিত অন্যান্যরা বিশেষ করে ষাট গোত্রের প্রধানগন সম্মিলিতভাবে শত চেষ্টা করেও কাবা গৃহের বন্ধ দরজার তালা কিছুতেই খুলতে পারলেন না । সবাই বুঝে গেলেন যে , এটা মহান আল্লাহর বিশেষ হিকমত । এরপর থেকে এক এক করে চারটি দিন অতিবাহিত হয়ে গেল । শত চেষ্টার পরেও পবিত্র কাবা গৃহের বন্ধ দরজার তালা কিছুতেই খুলতে পারলেন না । অবশেষে চারদিন পর আল্লাহর রাসুল (সাঃ) পবিত্র কাবা গৃহের প্রাঙ্গনে উপস্থিত হলেন । রাসুলের (সাঃ) পবিত্র পদযুগলের শব্দ পাওয়ামাত্র কাবা গৃহের দরজার তালা শব্দ করে খুলে গেল । এবং পবিত্র কাবা গৃহের দরজা দিয়ে হযরত ফাতেমা বিনতে আসাদ (সাঃআঃ) এক পবিত্র নবজাতকসহ বের হয়ে আসলেন । ঘরের প্রকৃত মালিক যেভাবে সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসেন ঠিক সেভাবেই বাইতুল্লাহ অর্থাৎ আল্লাহর ঘর থেকে ওয়াজউল্লাহ অর্থাৎ মাওলা আলী (আঃ) বেরিয়ে আসলেন । কাবা গৃহে পদার্পন করার চারদিন গত হওয়ার পরেও মাওলা আলী (আঃ) চোখ খোলেন নাই । রাসুলের (সাঃ) কোলে যাওয়ার পরে চোখ খুলে সর্বপ্রথম রাসুলকে (সাঃ) দেখলেন । পবিত্র কাবা গৃহ থেকে বের হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত – যখন হযরত ফাতেমা বিনতে আসাদ (সাঃআঃ) পবিত্র কাবা গৃহ থেকে চলে যাবার মনস্থ করলেন এবং ওনার (সাঃআঃ) পুত্র (আঃ) কোলে ছিলেন তখন একজন আহ্বানকারী ওনাকে বললেন , “হে ফাতেমা (সাঃআঃ) ! এই শিশুটির নাম দাও “আলী” (উচ্চ) , কারণ আমি “আলী আল-আলা” (সর্বোচ্চ) । আমি তাকে (আঃ) আমার ক্ষমতা , আমার মহানুভবতা এবং আমার ন্যায়বিচার থেকে প্রকাশ করেছি এবং আমি আমার নাম থেকে তাঁর (আঃ) নাম নিয়েছি । আমি তাঁর (আঃ) মধ্যে আমার নৈতিকতা শিক্ষা দিয়েছিলাম এবং আমি তাঁর (আঃ) কাছে আমার সমস্ত বিষয়গুলি হস্তান্তর করেছি । আমি তাঁকে (আঃ) আমার জ্ঞানের গভীরে অটল