মাওলার (আঃ) স্মরনে শুরু করিলাম । মাখলুক বা সৃষ্টিকৃত যে কোন জীবের সৃষ্টিকর্তা আছেন । এবং সৃষ্টিকৃত জীবসমূহ বিভিন্ন উপাদানের উপরে নির্ভরশীল । যেমন মাটি , জল , বায়ু ইত্যাদি উপাদানগুলো ছিল বলেই সমগ্র মানবজাতির আদিপিতা হযরত আদমের (আঃ) সৃষ্টি হয়েছে । অর্থাৎ আদমের (আঃ) অস্তিত্বশীল হওয়ার পূর্বে উপাদানসমূহকে সৃষ্টি করতে হয়েছে । অতএব উপাদান সমূহেরও সৃষ্টিকর্তা রয়েছেন । সৃষ্টিকৃত জীবের সাথে জন্ম মৃত্যু ওতোপ্রতোভাবে জড়িত থাকে । জন্মিলেই মৃত্যু অবধারিত । জন্ম মৃত্যু এদুটি একইসাথে বহমান । যাহা সৃষ্টি তাহা জন্ম এবং যাহা জন্ম তাহাকেই সৃষ্ট বা সৃষ্টি বলে । এবং অনস্বীকার্য যে , যাহা সৃষ্ট হয় তাহার উপাদান সমূহ সৃষ্টবস্তর পূর্বে অস্তিত্বে থাকিতেই হইবে । নইলে সৃষ্টি বা জন্ম – এ দুটোর কোনটাই সম্ভব নয় । কথাগুলি পুনরায় বলছি এজন্য যে , আমাদের মত অবাধ্য এবং সীমালংঘনকারীদের মগজে যেন ভালভাবে গেঁথে যায় । আমাদের আদিপিতা হযরত আদমকে (আঃ) মাটি , জল ইত্যাদি বিভিন্ন উপাদান দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে । অর্থাৎ আদিপিতা হযরত আদমের (আঃ) সৃষ্টির বহুপূর্বেই মাটি , জল ইত্যাদি উপাদান সমূহ প্রকাশ্যভাবে দৃশ্যমান ছিল । যে কোন জিনিস তৈরী বা সৃষ্টি করার পূর্বশর্ত হচ্ছে সৃষ্টি করার উপাদান সমূহ আগে থেকে হাতের নাগালে থাকিতে হইবে । এবারে সৃষ্টির পরে সৃষ্টকৃত বস্ত বা মানব ভ্রুনটাকে যে কোন নিরাপদ আধারে রাখতে হয় । সময়ের সাথে বিভিন্ন ধাপে ধাপে পরিপক্ক হওয়ার পরে সৃষ্টকৃত বস্তটি দুনিয়াতে জন্মগ্রহন করে বা জন্ম নেয় । সংক্ষেপে এটাকে জন্ম প্রক্রিয়া বলে । ” — আমরা কি তোমাদের তুচ্ছ পানি হইতে সৃষ্টি করি নাই ? অতঃপর তা এক সুদৃঢ় স্থানে স্থাপন করেছি । এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত । অতএব আমরা ক্ষমতাশালী ছিলাম এবং আমরা কত উত্তম ক্ষমতাশালী — !” সুরা – মুরসালাত / ২০ , ২১ , ২২ , ২৩ । ” — নিশ্চয়ই আমরা প্রতিটি জিনিস পরিমিতভাবে সৃষ্টি করেছি । আমাদের আদেশ তো চোখের পলকের মত এক ব্যাপার —“। সুরা – কামার / ৪৯ , ৫০ । সুপ্রিয় পাঠকবন্ধুগন ! যেজন্য মাথা গরম হয়ে যায় সেটা সংক্ষেপে নিবেদন করছি । ইদানীং বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে , অলিগলিতে , পথেঘাটে , হাট-বাজারে , সভা-সমিতিতে , পাড়া-মহল্লাতে নবীর (সাঃ) পবিত্র আহলে বাইতগনের (আঃ) সাচ্চা মুহিব , প্রেমিক , আশেকান এবং দাবীদার শীয়াতে সয়লাব । প্রতিদিনই আহলে বাইতের (আঃ) প্রেমিকদের সংখ্যা রকেটগতিতে বাড়ছে । নিঃসন্দেহে অত্যন্ত খুশীর সংবাদ । সাধারন মুসলিম জনতা চেপে রাখা গোপন করা ইতিহাস চট করে জানতে পারছে । যেটা আগে দেখা যেত না । মূল প্রসঙ্গে চলুন , প্লীজ । চৌদ্দ মাসুমিনগনের (আঃ) ধরনীতে আবির্ভাব বা আগমন দিবসকে বহু নামকরা বিখ্যাত জ্ঞানীগুনী কলম সৈনিকগন “জন্মদিন” বা “জন্ম বার্ষিকী” বলে ধুমাইয়া প্রচার করেন । নতমস্তকে ঐ সকল বিজ্ঞজনের প্রতি অত্যন্ত ভীত ও কম্পিত হৃদয় এবং বিনীতভাবে কয়েকটি প্রশ্ন রেখে যাই । আশাকরি অধমকে নিজগুনে ক্ষমা প্রদর্শন পূর্বক জবাবদানে বাধিত করিবেন । হে আমিরুল মুমেনিন (আঃ) ! আপনার নিকটে আগাম ক্ষমা চেয়ে নিয়ে আদববিহীন প্রশ্নগুলি করতে বাধ্য হচ্ছি । দয়া করে ক্ষমা করে দেবেন । কারন অতি বিজ্ঞজনদের এসব সীমাহীন অনাচার অসহ্য লাগে , মাওলা (আঃ) !!! আপনারা যারা – চৌদ্দ মাসুমিনগনের (আঃ) ধরনীতে আবির্ভাব বা আগমন দিবসকে “জন্মদিন” বা “জন্ম বার্ষিকী” বলেন তারা কি বলিতে পারিবেন ? প্রশ্ন – চৌদ্দ মাসুমিনগনকে (আঃ) কি কি উপাদান দ্বারা সৃষ্টি করা হইয়াছে ? প্রশ্ন – কবে নাগাদ চৌদ্দ মাসুমিনগনকে (আঃ) সৃষ্টি করা হইয়াছে ? প্রশ্ন – চৌদ্দ মাসুমিনগনকে (আঃ) সৃষ্টি করার সময় আপনারা কি স্বাক্ষী ছিলেন ? প্রশ্ন – আদিপিতা আদম (আঃ) থেকে শুরু আমাদের জন্ম প্রক্রিয়ার মতই কি চৌদ্দ মাসুমিনগনের (আঃ) সৃষ্টি প্রক্রিয়া একইভাবে বলে মনে করেন ? প্রশ্ন – চৌদ্দ মাসুমিনগনকে (আঃ) আমাদের মতই মানুষ বলে মনে করেন ? প্রশ্ন – পবিত্র কোরআন এবং পবিত্র ইমামগনের (আঃ) হাদিস সমূহে চৌদ্দ মাসুমিনগনের (আঃ) সম্বন্ধে আপনার মনগড়া জন্ম সংক্রান্ত ফর্মুলার বিষয় কিছু বলা আছে কি ? এই কথাগুলি অস্বীকার করা কি সম্ভব ? চৌদ্দ মাসুমিনগন (আঃ) হলেন আল্লাহর হুজ্জাত । চৌদ্দ মাসুমিনগন (আঃ) হলেন আল্লাহর দলীল । চৌদ্দ মাসুমিনগন (আঃ) হলেন আল্লাহর নিদর্শন সমূহ । চৌদ্দ মাসুমিনগন (আঃ) হলেন সিরাতুল্লাহ (আল্লাহর পথ) । চৌদ্দ মাসুমিনগন (আঃ) হলেন আল্লাহর পথ । চৌদ্দ মাসুমিনগন (আঃ) হলেন জান্নাত ও জাহান্নামের মালিক । চৌদ্দ মাসুমিনগন (আঃ) হলেন আল্লাহর পথপ্রদর্শক । চৌদ্দ মাসুমিনগন (আঃ) হলেন আল্লাহর হুকুম বা আমর আল্লাহ ا চৌদ্দ মাসুমিনগন (আঃ) হলেন আল্লাহর নামসমূহ । চৌদ্দ মাসুমিনগন (আঃ) হলেন আল্লাহর ছাঁয়া । মাওলা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর আশ্রয়স্থল ও নিরাপত্তা । মাওলা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর দূর্গ । মাওলা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর করুনা , রহমত । মাওলা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর হুজ্জাত । মাওলা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর দলীল । মাওলা আলী (আঃ) হলেন সিরাতুল্লাহ (আল্লাহর পথ) । মাওলা আলী (আঃ) হলেন কালামুল্লাহ (আল্লাহর কথা) । মাওলা আলী (আঃ) হলেন ইজ্জতুল্লাহ (আল্লাহর ইজ্জত) । মাওলা আলী (আঃ) হলেন জান্নাত ও জাহান্নামের বিতরণকারী । মাওলা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর পথপ্রদর্শক । মাওলা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর হুকুম ا মাওলা আলী (আঃ) হলেন বিচার দিবসের মালিক (মালিক ইউম আল কিয়ামত) । মাওলা আলী (আঃ) হলেন সকল নূরের নূর (নূর আল আনওয়ার) । মাওলা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর হাত (ইয়াদুল্লাহ) । মাওলা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর জিহ্বা (লিসানুল্লাহ) । মাওলা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর কান (ইজ্জনুল্লাহ) । মাওলা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর চোখ (আইনুল্লাহ) । মাওলা আলী (আঃ) আল্লাহর চেহারা (ওয়াজহুল্লাহ) । একমাত্র মাওলা আলীর (আঃ) ওয়ালায়াহ বা বেলায়েত হচ্ছে আল্লাহর ওয়ালায়াহ । যেটা সমগ্র সৃষ্টিজগত বিশেষ করে মানব ও জ্বীন জাতির উপর ওয়াজীব বা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এবং তা এভাবেই থাকবে যতক্ষণ না বিচারের দিন আসে । এবং যারা মাওলা আলীর (আঃ) অনুগত বা বাধ্য নয় আল্লাহ স্বয়ং নিজে তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন I ইমাম হাসান (আঃ) থেকে অষ্টম ইমাম রেজা (আঃ) বলেছেন যে , আল্লাহর রাসুল (সাঃ) নিজে মাওলা আলীকে (আঃ) বলেন , হে আলী (আঃ) ! আপনি (আঃ) হলেন মহান আল্লাহর প্রমাণ এবং আপনি (আঃ) হলেন মহান আল্লাহর দরজা এবং আপনিই (আঃ) মহান আল্লাহর পথ । আর আপনিই (আঃ) হলেন মহৎ সংবাদ এবং আপনিই (আঃ) সর্বশ্রেষ্ঠ উত্তম উদাহরণ । সূত্র – তাফসীরে সুলাইম বিন কায়েস আল হিলালি / তাফসীরে ইমাম হাসান আল আসকারী (আঃ) – ইংরেজী ভার্সন থেকে সংগৃহীত । সবশেষে চৌদ্দ মাসুমিনগনের (আঃ) আগমন দিবসকে যারা “জন্ম” দিবস হিসাবে বর্ননা করে তাদের নিকটে খুব সাধারন স্তরের একটি প্রশ্ন রইল – ১) – জিয়ারতে আশুরা সহ সকল শীয়া সূত্রে চৌদ্দ মাসুমিনগনকে (আঃ) “শরিকাতুল কোরআন” বলা হয় । কোরআন জন্ম নেয় নাই , নাজিল হয়েছে । তাহলে কোরআনের শরীক কেমনে নাজিল
আল্লাহ , রাসুল (সাঃ) এবং স্বাক্ষী সমাচার
মাওলার (আঃ) স্মরনে শুরু করিলাম । ” — যারা অবিশ্বাস করেছে তারা বলে , “আপনি আল্লাহর রাসুল নন” । আপনি বলে দিন , “আমার ও তোমাদের মধ্যে (রেসালতের) স্বাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট এবং সেই ব্যক্তি যার কাছে গ্রন্থের পূর্ন জ্ঞান রয়েছে — ” । সুরা – রাদ / ৪৩ । সুপ্রিয় পাঠক , উপরে উল্লেখিত আয়াতে যেসব বিষয় খুবই সুস্পষ্ট সেগুলো হচ্ছে যে , সর্বশক্তিমান আল্লাহ স্বয়ং নিজে বলছেন যে , অবিশ্বাসী বা কাফের সম্প্রদায় হযরত মুহাম্মাদকে (সাঃ) আল্লাহ কতৃক প্রেরিত একজন রাসুল হিসাবে কিছুতেই মেনে নিচ্ছে না । তখন আল্লাহ স্বয়ং নিজে ঘোষনা দিচ্ছেন যে , নবীজীর (সাঃ) নবুয়ত ও রেসালতের পক্ষে স্বাক্ষ্যদাতা হলেন সর্বসাকুল্যে দুইজন । প্রথমজন হলেন – সর্বশক্তিমান আল্লাহ এবং দ্বিতীয়জন হলেন – আমিরুল মুমেনিন মাওলা আলী ইবনে ইমরান (আঃ) । পবিত্র কোরআনের আয়াতটির এই অংশে দয়া করে মনযোগ দিন এজন্য যে , এখানে খুব পরিস্কারভাবে বলা হচ্ছে যে , ” — এবং ঐ ব্যক্তি যার কাছে কিতাবের (ইলমুল কিতাব) জ্ঞান আছে , সাক্ষী হিসাবে যথেষ্ট —- ” । স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন চলে আসে যে , পবিত্র কোরআনের আয়াতে উল্লেখিত ঐ ব্যক্তিটি কে যার নিকট পবিত্র কোরআন সহ সকল ঐশী কিতাবের সমস্ত জ্ঞান সংরক্ষিত রয়েছে ? এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহ স্বয়ং নিজে ঐ ব্যক্তিকে রাসুলের (সাঃ) রেসালতের পক্ষে একজন স্বাক্ষী হিসাবে ঘোষনা দিচ্ছেন ! আয়াতে উল্লেখিত ঐ ব্যক্তির পরিচয় সম্বন্ধে জানতে চাওয়ার জন্য রাসুলের (সাঃ) প্রশ্ন করা হলে রাসুল (সাঃ) যে জবাব দিলেন —– আবদুল্লাহ বিন সালাম বলেছেন যে , আমি নবীজীকে (সাঃ) প্রশ্ন করলাম যে , এই আয়াতে ঐ ব্যক্তি যার নিকট কিতাবের সমূদয় জ্ঞান রয়েছে , তিনি কে ? নবীজী (সাঃ) উত্তরে বললেন , “ঐ ব্যক্তিটি হচ্ছে আমিরুল মুমেনিন মাওলা আলী ইবনে আবু তালিব (আঃ)”। সূত্র – আল কাশফু ওয়াল বায়ান , খন্ড – ০৪, পৃ-৬০ / আল নাঈম আল মুকিম ,পৃ-৪৮৯ / তাফসীরে কুরতুবি ,খন্ড -০৯ , পৃ- ৩৩৬ / আল এতকান , খন্ড – ০১ , পৃ- ১৩ / আল জামেউল আহকাম উল কোরআন , খন্ড – ০৯ , পৃ- ৩৩৬ / শাওয়াহেদুত তানযিল , খন্ড – ০১ , পৃ- ৩০৭ / এহকাক উল হাক্ক , খন্ড – ০৩ , পৃ- ২৮০ / ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত , পৃ- ১০২ , ১০৩ / জাজবায়ে বেলায়েত , পৃ- ১৫৫ / সালিম বিন কায়েস , পৃ- ২৪ / রাওয়ানে যাভেদ , খন্ড – ০৩ , পৃ- ২১৫ / কেফায়াতুত মোওয়াহহেদ্দিন , খন্ড – ০২ , পৃ- ১৮০ / মাজমাউল বায়ান , খন্ড – ০৬ , পৃ- ৩০১ / মারেফাতে ইমামত ও বেলায়েত ,সংকলনে- নাজির হোসাইন , পৃ- ৩৭ । উপরে উল্লেখিত পবিত্র কোরআনের আয়াতে একটি বিষয় জলের মত পরিস্কার যে , মহান আল্লাহ এবং মহানবীর (সাঃ) নবুয়ত ও রেসালতের সত্যতার ব্যাপারে স্বাক্ষীদাতা হিসাবে মহান আল্লাহ স্বয়ং নিজে আমিরুল মুমেনিন মাওলা আলীকে (আঃ) নিযুক্ত করেছেন । হাকীকাতে মাওলা আলীর (আঃ) কিছুটা ঝলক দেখে নিন । আলী علي শব্দটি পবিত্র কোরআনে ৮ বার এসেছে । এর মূল হল – ع-ل-و যার ৪ টি অর্থ প্রকাশ পায় । ১) – উঁচু বা উন্নত ২) – অগ্রগামী বা অতিক্রম করা ৩) – বিজয়ী ও অভিভূত করা ৪) – বিখ্যাত বা বিশিষ্ট । ভাষাতাত্ত্বিকভাবে علو উন্নত হওয়ার বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে । শুধুমাত্র মহান আল্লাহর অফুরন্ত ভালবাসার প্রেক্ষিতে একজন পুতঃপবিত্র সত্বা علي (উন্নত) হন । ” — আমরা যাকে ইচ্ছা তাকে মর্যাদায় উন্নীত করি —“। সুরা – আনআম / ৮৩ । আলী (علي) শব্দটিতে ৩ টি হরফ আছে – ع-ل-ي এখানে ع ধারণ করে আছে জ্ঞান (علم), ل ধারণ করে আছে জিহ্বা (لسن), ي ধারণ করে আছে বিশ্বাস (يقين)। আসুন এবার বিশ্লেষণ করা যাক মাওলা আলীর (আঃ) হাকীকাত । নামের শুরুতেই ع দিয়ে রাব্বে কায়েনাত বোঝালেন لبس العلم জ্ঞানের পোশাক পরিধান করে আছেন যিনি তিনিই আলী (আঃ)। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের “রেসালত” এর স্বাক্ষী হিসেবে আল্লাহ স্বয়ং নিজেকে এবং মাওলা আলীকে (আঃ) উপস্থাপন করেছেন । “— আমার ও তোমাদের মধ্যে প্রকৃত স্বাক্ষী হচ্ছেন আল্লাহ এবং ঐ ব্যক্তি যার কাছে কিতাবের জ্ঞান আছে —।” সুরা – রাদ / ৪৩ । দ্বিতীয় হরফ ل দ্বারা বুঝানো হয়েছে لسن (জিহ্বা) এই হরফ নির্দেশ করে لسان صدق عليا (সত্যের কন্ঠ)। আল্লাহর ঘোষনা – ” — এবং তাদেরকে আমাদের অনুগ্রহ থেকে দান করেছিলাম । আর তাদেরকে উন্নত করেছি সত্যকন্ঠ দ্বারা —-।” সুরা – মরিয়ম / ৫০ । সুতরাং ل প্রতিনিধিত্ব করছে “সত্য কন্ঠের” যা আল্লাহ বর্ণনা করেছেন لسان صدق বলে । আর ي ধারণ করে يقين (বিশ্বাস) এখানে মাওলা আলীকে (আঃ) বিশ্বাসের নিক্তি বা ঈমানদারগনের মাওলা বা অভিভাবক নিযুক্ত করা হয়েছে । বলা হচ্ছে যে , মাওলা আলী(আঃ) হচ্ছেন عين اليقين বিশ্বাসের ” দিব্য প্রত্যয় ।” গাদীরের ময়দানে লক্ষাধিক হজ্ব ফরৎ হাজীগনের সম্মুখে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) স্বয়ং নিজে মাওলা আলীর (আঃ) হাত উঁচিয়ে ঘোষনা করালেন – “আমি যার মাওলা , আলী (আঃ) তার মাওলা ।” আর এই ঘোষণার পক্ষে রাব্বে কায়েনাত ঘোষণা দিলেন । ” — এবং আমরা তাকে অতি উচ্চস্থানে উন্নীত করেছিলাম —“। সুরা – মরিয়ম / ৫৭ । এবারে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট দেখুন । দৃশ্যপট – হযরত ইমরান ওরফে আবু তালিবের (আঃ) গৃহ । মক্কার সকল মুশরিক ও কাফেরদের সমস্ত গোত্রের সকল বড় বড় নেতৃবর্গ উপস্থিত হয়েছেন । কারন কিছু জরুরী বিষয় জানানোর জন্য মহানবীর (সাঃ) নিমন্ত্রনে সকলেই হযরত ইমরান ওরফে আবু তালিবের (আঃ) গৃহে উপস্থিত হয়েছেন । “ — নিজের আত্মীয়-স্বজনকে আল্লাহর আযাব হতে ভীতি প্রদর্শন কর —।” সূরা – শুআরা / ২১৪ । পবিত্র কোরআনের এই আয়াতটি নাজিলের প্রেক্ষিতে সকলের সাথে আলোচনার এক পর্যায় রাসুল (সাঃ) সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন – ” — আমি আপনাদের জন্য এমন কিছু নিয়ে এসেছি যা মানুষের মধ্যে হতে আর কেউই তার আত্মীয়-স্বজনের জন্য আনে নাই । আমি আপনাদের জন্য ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ নিয়ে এসেছি । আমার প্রভূ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন আপনাদেরকে তাঁর প্রতি আহ্বান জানাই । আপনাদের মধ্যে হতে কে আমার সাহায্যকারী ও সহযোগী (পৃষ্ঠপোষক) হবেন , যাতে সে আপনাদের মাঝে আমার ভাই , ওয়ালী , ওয়াসী ও স্থলাভিষিক্ত হবে ? এ পর্যন্ত বলার পর সমগ্র মজলিসে পিনপতন নীরবতা ছেয়ে গেল । সবাই গভীর চিন্তায় মগ্ন হল । এই সময় আমিরুল মুমেনিন মাওলা আলী (আঃ) উঠে দাঁড়ালেন । মাওলা আলী (আঃ) নীরবতা ভেঙ্গে বললেন , “হে আল্লাহর নবী (সাঃ) ! আমি নিজে স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে , আল্লাহ অদ্বিতীয় , আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই এবং আপনি আল্লাহ কতৃক প্রেরিত একজন রাসুল (সাঃ)। আমি আপনার সাহায্যকারী এবং সহযোগী হব । রাসুল (সাঃ) তাঁকে বসতে বললেন । এভাবে মহানবী
আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) নামকরন কিভাবে হইল ।
প্রিয় পাঠক , খুব সংক্ষেপে নামকরনের ইতিহাস জেনে নেই । ধরনীতে মহানবীর (সাঃ) আগমনের সপ্তম দিবস চলছে । মহানবীর (সাঃ) দাদা হযরত আব্দুল মোত্তালিব (আঃ) নাতির (সাঃ) শুভ আগমনে মহাআনন্দে মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য একটি দুম্বাহ কুরবানী করলেন । সেইসাথে মহানবীর (সাঃ) “নামকরন” বা “আক্বীকা দিবস” উপলক্ষে এক বিশাল জাঁকজমকপূর্ন অনুষ্ঠান ও রাজসিক ভুড়িভোজের অনুষ্ঠান করলেন । মহানবীর (সাঃ) নামকরনের অনুষ্ঠানে আরবের সকল গোত্র বিশেষ করে কুরাইশ গোত্রের সকলেই নিমন্ত্রিত হয়েছিলেন । রাজসিক বিশাল ধুমধামপূর্ন সেই অনুষ্ঠানে দাদা হযরত আব্দুল মোত্তালিব (আঃ) তাঁর অতি প্রিয় এতিম নাতির (সাঃ) নাম রাখলেন – “মুহাম্মাদ” । এতিম এজন্যই বলা হয় যে , মহানবী (সাঃ) পৃথিবীতে আগমনের কয়েক মাস পূর্বে তাঁর সম্মানীয় পিতা হযরত আব্দুল্লাহকে (আঃ) গোপনে শহীদ করা হয় । উপস্থিত অনেক গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ “মুহাম্মাদ” নাম রাখার রহস্য সম্বন্ধে জানতে চাইলেন । কারন গোটা আরব অঞ্চলে এই নামটি অত্যন্ত বিরল একটি নাম ছিল সেসময় । জবাবে দাদা আব্দুল মোত্তালিব (আঃ) বললেন , “আমি চেয়েছিলাম যে , আকাশ ও পৃথিবীতে সে প্রশংসিত হোক” । ইতিহাস থেকে আরও জানা যায় যে , মহানবী (সাঃ) বাল্যকাল ও শৈশবকাল থেকে “মুহাম্মাদ” ও “আহমদ” – এই দুই নামেই পরিচিত ছিলেন । সর্বসাধারনের নিকট তিনি এ দুই নামেই পরিচিত ও প্রসিদ্ব ছিলেন । দাদা হযরত আব্দুল মোত্তালিব (আঃ) তাঁর জন্য “মুহাম্মাদ” এবং তাঁর মা হযরত আমেনা খাতুন (সাঃআঃ) “আহমদ” নামটি মনোনীত করেছিলেন । পবিত্র কোরআনে তাঁকে এ দুটি নামে অভিহিত করা হয়েছে । উল্লেখ্য যে , পবিত্র কোরআনে একস্থানে তাঁকে “মুহাম্মাদ” এবং অন্যস্থানে “আহমদ” নামে অভিহিত করা হয়েছে । ” —- “মুহাম্মাদ” তোমাদের মাঝে কোন পুরুষের পিতা নন । কিন্ত সে আল্লাহর রাসুল এবং নবীদের মধ্যে সর্বশেষ । এবং আল্লাহ সব বিষয় জ্ঞান রাখেন —– ” । সুরা – আহযাব / ৪০ । জনসম্মুখে সর্বপ্রথম হযরত ঈসা (আঃ) এই শুভ সংবাদটি প্রদান করেছিলেন যে — ” —- যখন মরিয়ম তনয় ঈসা বলেছিল , “হে বনী ইসরাইল ! আমি তোমাদের প্রতি আল্লাহর রাসুল এবং তাওরাত থেকে যা কিছু আমার পূর্বে ছিল তার সত্যায়নকারী এবং আমি সেই রাসুলের সুসংবাদদাতা যিনি আমার পরে আগমন করবেন , যাঁর নাম হবে “আহমাদ” —- ।” সুরা – সাফফ / ৬ । ” — এবং আমি সেই রাসুলের সুসংবাদদাতা যিনি আমার পরে আগমন করবেন , যাঁর নাম হবে “আহমাদ” —- ।” সুরা – সাফফ / ৬ । এ সম্পর্কে কবি হাসসান ইবনে সাবিত লিখেছেন যে , “নবীর (সাঃ) সম্মান ও উচ্চ মর্যাদার জন্য স্রষ্টা স্বয়ং তাঁর নিজ নাম থেকে তাঁর (নবীর) নাম নিষ্পন্ন করেছেন । তাই আরশের মহাঅধিপতি মহান আল্লাহ হলেন মাহমুদ (প্রশংসিত) এবং ইনি তাঁর নবী মুহাম্মাদ (প্রশংসিত)”। আর এ দুটি কথা “মাহমুদ” ও “মুহাম্মাদ” একই উৎসমূল (হামদ) থেকে উৎসারিত এবং উক্ত শব্দদ্বয়ের অর্থ একই । নিঃসন্দেহে এই নামকরনের বা এই নাম চয়নের ক্ষেত্রে ঐশী অনুপ্রেরনার ভুমিকা অস্বীকার করা অসম্ভব । সর্বশেষ নবীর (সাঃ) অন্যতম নির্দশন ছিল তাঁর নাম । এই নামের বাস্তব নমুনা অর্থাৎ যাদের নাম মুহাম্মাদ বাস্তবে তাদের সংখ্যা এতটাই কম হবে যে , ব্যক্তি মুহাম্মাদকে শনাক্ত করার ক্ষেত্রে কোন ধরনের সন্দেহ আর বিদ্যমান থাকবে না । বিশেষ করে যখন তাঁর পবিত্র নামের সাথে তাঁর যাবতীয় বৈশিষ্ট্য সংযোজিত হবে । এমতাবস্থায় , পবিত্র তাওরাত ও পবিত্র ইজ্ঞিলে যে মহান ব্যক্তির আবির্ভাব সম্পর্কে ভবিষ্যতবানী করা হয়েছে তাঁকে খুব স্বচ্ছ ও সুস্পষ্টভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হবে । সংক্ষেপে জেনে নিন যে , চৌদ্দ মাসুমিনগনের (আঃ) সকলেই “মুহাম্মাদ” । অর্থাৎ প্রথমজন থেকে সর্বশেষ বাকিয়াতুল্লাহ পর্যন্ত সকলেই এক ও অভিন্ন “মুহাম্মাদ” । নবীর (সাঃ) নামকরনের ইতিহাসের সাথে একটি উপহার নিন । বালাগাল উলা বি – কামালিহী , কাশাফাদ্দুজা বি – জামালিহী , হাসুনাত জামিউ খিসালিহী , সাল্লু আলাইহি ওয়া আলিহী । বাংলা অনুবাদ – যিনি (সাধনায়) পূর্ণতার শেষ প্রান্তে পৌঁছেছেন , যাঁর সৌন্দর্যের আলোকে অন্ধকার দুর হয়েছে , যাঁর আচরণ – ব্যবহার ছিল সৌন্দর্যের আকর , দরুদ তাঁর এবং তাঁর বংশধরগণের উপর । বালাগ = পৌঁছানো । কামালিহী = পূর্ণতা , পরিপূর্ণ । জামালিহী = সৌন্দর্য । খিসালিহী = আচরণ – ব্যবহার , চরিত্র । ইতিহাস থেকে জানা যায় যে , হযরত শেখ সাদী (রহঃ) এই দরুদ শরীফের প্রথম দুই লাইন লেখার পর কি লিখবেন তা তিনি ভাবতে ভাবতে হঠাৎ তন্দ্রাছন্ন ভাব আসলে স্বপ্ন দিদারে তিনি রাসুলের (সাঃ) জিয়ারত পান । দয়াল নবীজী (সাঃ) তখন সাদীকে (রহঃ) বলেন – হে সাদী ! তুমি লিখ – হাসুনাত জামিউ খিসালিহী , সাল্লু আলাইহি ওয়া আলিহী । বাংলা অনুবাদ – যার আচরণ – ব্যবহার ছিল সৌন্দর্যের আকর , দরুদ তাঁর এবং তাঁর বংশধরগণের উপর । এই দরুদ শরীফ রাসুল (সাঃ) স্বয়ং নিজে হযরত শেখ সাদীকে (রহঃ) দিয়ে লিখিয়েছেন । সুবহানাল্লাহ । “ — নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতাগন নবীর উপর দরুদ পড়েন । হে তোমরা যাদের বিশ্বাস আছে , তাঁর উপর দরুদ পড় এবং তাঁর উপর শান্তি কামনা কর যথাযোগ্যভাবে — “ । সুরা – আহযাব / ৫৬ । আল্লাহুমা সাল্লে আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম । সদা মঙ্গলময় থাকুন , সর্বদা এই কামনায় । আজ তবে এইটুকু থাক , বাকী কথা পরে হবে । ধন্যবাদান্তে , সাকিল আহমেদ । ইয়া সাহেবুজ্জামান (আঃ) আদরিকনী আদরিকনী , আল্লাহুমা সাল্লে আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম , আল্লাহুম্মা লান হুম জামিয়ান , লানতুল্লাহ আলা কওমিজ জালেমিন । – চিরভাস্কর মহানবী (সাঃ) – প্রথম খন্ড , মূল – আয়াতুল্লাহ জাফর সুবহানী , বাংলা অনুবাদ – মোহাম্মাদ মুনির হোসেন খান , সম্পাদনা – অধ্যাপক সিরাজুল হক , তত্বাবধানে – শাহাবুদ্দীন দারায়ী , পৃষ্ঠা – ১৪০ – ১৪৩ থেকে সংকলিত ও সংগৃহীত ।
কে বা কাঁরা সেই মুমিনবৃন্দ ?
“— তোমাদের ওয়ালী (অভিভাবক) শুধুমাত্র আল্লাহ , তাঁর রাসুল এবং মুমিনবৃন্দ যারা নামায কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে রুকুরত অবস্থায় —- ” । সুরা – মায়েদা /৫৫ । ” — Your guardian is only Allah , His Apostle (Mohammad) , and The faithful who maintain the prayer and give zakat while bowing down —– “. Surah – Al – Maidah / 55 . সুপ্রিয় পাঠক , উপরের উল্লেখিত আয়াতে মহান আল্লাহ স্বয়ং নিজে কয়েকটি বিষয় খুবই পরিস্কারভাবে বলে দিলেন । ১) – সর্বশক্তিমান আল্লাহ হলেন সমগ্র সৃষ্টিজগতের “ওয়ালী” , “মাওলা” , “প্রতিপালক” , “রব” , “প্রভু” বা “অভিভাবক” । ২) – একইভাবে মহানবী (সাঃ) সমগ্র মানবজাতির জন্য “ওয়ালী” , “মাওলা” , “প্রতিপালক” , “রব” , “প্রভু” বা “অভিভাবক” । ৩) – এবং একইভাবে ঐ সকল মুমিনবৃন্দ সমগ্র মানবজাতির জন্য “ওয়ালী” , “মাওলা” বা “অভিভাবক” , “প্রতিপালক” , “রব” , “প্রভু” যাঁরা নামাজ কায়েম করেন এবং রুকুরত অবস্থায় যাকাত প্রদান করেন । বলাই বাহুল্য যে , পবিত্র কোরআনে বর্নিত রুকুরত অবস্থায় যাকাত প্রদানকারী মুমিনগন সম্পর্কে মহান আল্লাহ স্বয়ং নিজে বলে দিলেন যে , ঐ মুমিনবৃন্দ হলেন আমিরুল মুমেনিন মাওলা আলী ইবনে আবু তালিব (আঃ) এবং তাঁর পবিত্র সন্তানগন (আঃ) । উল্লেখ্য যে , সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদকে (সাঃ) এবং রুকুরত অবস্থায় যাকাত প্রদানকারী মুমিনবৃন্দকে সমগ্র মানবজাতির জন্য “ওয়ালী” , “মাওলা” বা “অভিভাবক” , “প্রতিপালক” , “রব” , “প্রভু” হিসাবে নিযুক্ত কর্তা হলেন সর্বশক্তিমান আল্লাহ । এই ঘোষনাটি মহান আল্লাহ স্বয়ং নিজে দিচ্ছেন । পবিত্র কোরআনের সুস্পষ্ট ঘোষনামতে বিষয়টি তাহলে পরিস্কার যে , সমগ্র সৃষ্টিজগত তথা মানবজাতির জন্য “ওয়ালী” , “মাওলা” , “অভিভাবক” , “প্রতিপালক” , “রব” , “প্রভু” এবং একচ্ছত্র মালিক হলেন সর্বসাকুল্যে তিনসত্বা । প্রথম – মহান আল্লাহ । দ্বিতীয় – রাসুল (সাঃ) । তৃতীয় – ঐ মুমিনবৃন্দ (আঃ) হলেন “ওয়ালী” , “মাওলা” বা “অভিভাবক” , “প্রতিপালক” , “রব” , “প্রভু” যাঁরা রুকুরত অবস্থায় যাকাত প্রদান করেন । এখানে আরও কিছু বিষয় খুবই পরিস্কার যে , ক) – অন্য কেউ নন , আল্লাহ স্বয়ং নিজে বলে দিচ্ছেন যে , মহানবীর (সাঃ) শাহাদাতের পরে সমগ্র উম্মতকে নেতাবিহীন অবস্থায় ছেড়ে যান নাই । খ) – সমগ্র উম্মতের জন্য আল্লাহ কতৃক নিযুক্ত ঐ মুমিনগন (আঃ) হলেন “ওয়ালী” , “মাওলা” বা “অভিভাবক” , “প্রতিপালক” , “রব” , “প্রভু” যাঁরা রুকুরত অবস্থায় যাকাত প্রদানে সক্ষম । বিঃদ্রঃ – খুবই পরিতাপের বিষয় যে , অধিকাংশ বাংলা অনুবাদে আয়াতটিতে এভাবে বলা আছে যে – “— তোমাদের ওয়ালী (অভিভাবক) শুধুমাত্র আল্লাহ্ , তাঁর রাসুল এবং মুমিনবৃন্দ যাহারা বিনত হইয়া নামায কায়েম করে এবং রুকু করে ও যাকাত প্রদান করে —– ” । সুরা – বাকারা / ৫৫ । চ্যালেজ্ঞ সহকারে বলা হচ্ছে যে , ইচ্ছাকৃতভাবে এখানে আরবীর সঠিক বাংলা অনুবাদে জঘন্য বিকৃতিকরন করা হয়েছে । এই বিষয় ভাল অভিজ্ঞ আরবীতে দক্ষ কোন ব্যক্তির স্মরনাপন্ন হওয়া উত্তম । এছাড়া কুতর্কের খাতিরে যদি ধরেও নেওয়া যায় যে , ঐ সকল মুমিনবৃন্দ সমগ্র মানবজাতির জন্য ওয়ালী বা অভিভাবক যাহারা বিনীত হইয়া নামায কায়েম করে এবং রুকু করে ও যাকাত প্রদান করে । তাহলে প্রশ্ন চলে আসে যে , ঐ সকল মুমিনবৃন্দ সকলেই যে সাচ্চা ঈমানদার মুমিন সেটা বুঝার উপায় কি ? কেননা পবিত্র কোরআনে পরিস্কারভাবে বলা আছে যে , মুনাফিক ব্যক্তিরা লোক দেখানো নামাজে দন্ডায়মান হয় এবং মুনাফিকগনও রুকু , সেজদা করে ! প্রশ্ন আরও চলে আসে যে , পৃথিবীর সকল মুমিনগন যদি ওয়ালী , অভিভাবক বা রাজা হয়ে যায় তাহলে উম্মত , শিষ্য বা প্রজা হবে কারা ? আলোচনার মূল প্রসঙ্গে আসা যাক । আসুন দেখে নেয়া যাক যে , নামাযে রুকুরত অবস্থায় কোন মুমিনগন যাকাত প্রদান করলেন ! এ প্রসঙ্গে -নবীজীর (সাঃ) সাহাবী হযরত আবু যার আল গিফারী (আঃ) বলেন , “আমি একদা রাসুলের (সাঃ) সাথে যোহরের নামায আদায় করছিলাম । ইতিমধ্যে একজন ভিখারী মসজিদে প্রবেশ করে ভিক্ষা চাইলেন । দুইবার ভিক্ষুকটি মসজিদে অবস্থানরত সকলের নিকটে সাহায্য চাইলেন । কিন্ত কেউ তাকে কোন সাহায্য করলেন না । তৃতীয়বারে ভিক্ষুকটি অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয় দুইহাত তুলে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানালো , “ইয়া আল্লাহ ! তুমি স্বাক্ষী রইলে , আমি মসজিদে প্রবেশ করে কিছু সাহায্য চাইলাম , কিন্ত কেউ সাহায্য করল না”! তখন মাওলা আলী (আঃ) নামাজে রুকুরত অবস্থায় ছিলেন । তিনি (আঃ) ইশারা করলে ঐ ভিক্ষুকটি মাওলা আলীর (আঃ) হাতের আংটি খুলে নিয়ে যায় । পুরো ঘটনাটি নবীর (সাঃ) চোখের সামনে ঘটে । নবীজি (সাঃ) নামাজ শেষে দুহাত তুলে আল্লাহর কাছে মোনাজাত করলেন , “ইয়া আল্লাহ ! যখন হযরত মুসা (আঃ) তোমাকে বলেছিল , ” — আমার জন্য একজন সাহায্যকারী নিয়োগ দিন আমার পরিবার থেকে , হারুন , আমার ভাইকে , তার মাধ্যমে আমার পিঠকে মজবুত করুন , এবং তাকে আমার কাজকর্মে অংশীদার করুন —” । সুরা ত্বাহা , আয়াত-২৯-৩২ । তখন ওহী নাযিল হয়েছিল । তুমি মুসার (আঃ) ভাই হারুনকে (আঃ) দিয়ে তাঁর বাহুবল শক্তিশালী করেছিলে । হে আমার প্রভু ! নিশ্চয়ই আমি তোমার সর্বশেষ নবী এবং মনোনীত বান্দা । ইয়া আল্লাহ ! তুমি আমার জন্য আমার ভাই আমিরুল মুমেনিন মাওলা আলীকে (আঃ) সাহায্যকারী , ওয়াসী , স্থলাভিষিক্ত এবং উত্তরাধীকার হিসেবে নিয়োগ দাও” । প্রিয় নবীজীর (সাঃ) মোনাজাত সমাপ্ত হয় নাই । এমনি সময় সুরা মায়েদার ৫৫ নং আয়াত নাজিল হয় । এই আয়াতে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে , নবীজীর (সাঃ) মোনাজাতের সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ ওহী প্রেরন করলেন যে , আমি আপনার মোনাজাত কবুল করলাম ও মাওলা আলীকে (আঃ) আপনার স্থলাবর্তী ইমাম , খলীফা বা প্রতিনিধি মনোনীত করলাম । মহানবীর (সাঃ) পর আর কোন নবীর আগমন হবে না । তাই মাওলা আলীকে (আঃ) নবীর (সাঃ) শাহাদাত পরবর্তী সর্বপ্রথম “ওয়ালী” , “মাওলা” , “ইমাম” , “খলীফা” “অভিভাবক” , “প্রতিপালক” , “রব” , “প্রভু” ঘোষনার মাধ্যমে নিযুক্ত দেওয়া হইল । এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নিশ্চিতভাবে এটা বলা যায় যে , নবীজীর (সাঃ) শাহাদাতের পরে আমিরুল মুমেনিন মাওলা আলী (আঃ) সমগ্র মানবজাতির জন্য হেদায়েতকারী খলীফা এবং ইমাম । আয়াতে এই বিষয়টাই স্পষ্ট প্রমানিত হচ্ছে । এছাড়া মহানবী (সাঃ) নিজে বলেছেন – মাওলা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর আশ্রয়স্থল ও নিরাপত্তা । মাওলা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর দূর্গ । মাওলা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর করুনা , রহমত । মাওলা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর হুজ্জাত । মাওলা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর দলীল । মাওলা আলী (আঃ) হলেন সিরাতুল্লাহ (আল্লাহর পথ) । মাওলা আলী (আঃ) হলেন কালামুল্লাহ (আল্লাহর কথা) । মাওলা আলী (আঃ) হলেন ইজ্জতুল্লাহ (আল্লাহর ইজ্জত) । মাওলা আলী (আঃ) হলেন জান্নাত ও জাহান্নামের বিতরণকারী । মাওলা আলী (আঃ) হলেন আল্লাহর পথপ্রদর্শক । মাওলা আলী
রাসুল (সাঃ) , ভক্তি সম্মান এবং আয়নাতে নিজেকে দেখা
মাওলার (আঃ) স্মরনে শুরু করিলাম । ” — যাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর এবং রাসুলকে সাহায্য সমর্থন কর ও তাঁকে গভীরভাবে ভক্তি শ্রদ্বা কর এবং প্রভাতে ও সন্ধায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা কর —- ।” সুরা – ফাতহ / ৯ । প্রিয় পাঠক , আমি মোটেও ধর্মীয় আলেম বা পন্ডিৎ নই । আপনাদের থেকেও অধম ব্যক্তি । আপনারা সকলেই আমার পরম পূজনীয় জ্ঞানীগুনীজন । অভয় যদি দেন – অধমের পক্ষ থেকে ছোট একটি নিবেদন ছিল । দয়া করে লেখাটিতে কিছুটা সময় দিন । উপরে উল্লেখিত আয়াতটির প্রতি আপনার মনযোগ আকর্ষন করছি । আয়াতটির প্রথমাংশে মহানবীকে (সাঃ) সর্বক্ষন সর্বসময় সাহায্য , ভক্তি , শ্রদ্বা ও সম্মান প্রদর্শন করার জন্য আদেশ দেয়া হয়েছে । এবং আয়াতটির শেষাংশে নামায আদায়ের আদেশ দেয়া হয়েছে । খেয়াল করুন – প্রথমে আদেশ দেওয়া হয়েছে যে , মহানবীকে (সাঃ) সর্ববস্থায় , সর্বক্ষেত্রে , বিনাঃশর্তে , বিনাতর্কে , বিনাপ্রশ্নে , বিনাসঃন্দেহে অন্তর থেকে গভীর বিশ্বাস , পূর্ন অনুসরন এবং আনুগত্য সহকারে ভক্তি-শ্রদ্বা ও সম্মান করতে হবে । এরপরে আদেশ দেয়া হয়েছে যে , নামাজ আদায় কর । নামাজ কিন্ত আপনি আপনার মন মর্জিমত সর্বক্ষন সর্বসময় আদায় করতে পারবেন না । কিন্ত নবীজীকে (সাঃ) সর্বক্ষন সর্বসময়ের জন্য গভীরভাবে সম্মান , ভালবাসা , সম্মান ভক্তি শ্রদ্বা এবং অনুসরন আনুগত্য করার জন্য আদেশ দেওয়া হয়েছে । শুধু মুখে কলেমা পড়াটা যথেষ্ট নয় । সর্বপ্রথম রাসুল (সাঃ) এবং তাঁর আহলে বাইতগনের (আঃ) প্রতি অন্তর থেকে নির্ভেজাল ভক্তি , শ্রদ্বা , সম্মান , অনুসরন এবং পরিপূর্ন আনুগত্য প্রদর্শন ব্যতীত মুমিন বা ঈমানদার হওয়া কোনমতেই সম্ভব নয় । অর্থাৎ আপনার যে কোন ইবাদত আমল কবুলের প্রথম এবং প্রধানতম শর্ত হচ্ছে – লোক দেখানো নয় , অন্তর থেকে “আলীউন ওয়ালীউল্লাহ” ধারন করা । এবারে , আয়াতটিকে আমরা যদি তিনভাগে ভাগ করি । প্রথমভাগে আল্লাহ বলছেন যে – “যাতে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর” । আমরা অবশ্যই সকলেই আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের (সাঃ) প্রতি বিশ্বাস করি । এতে কোন সমস্যা নাই । আয়াতটির দ্বিতীয় অংশে আল্লাহ বলছেন যে – “রাসুলকে সাহায্য সমর্থন কর ও তাঁকে গভীরভাবে ভক্তি শ্রদ্বা কর” । বুকে হাত দিয়ে ঠান্ডা মাথায় বলুন তো , রাসুলের (সাঃ) যারা সহকর্মী বা কথিত নামধারী “সাহাবা” ছিল তারা সকলেই কি মহানবীকে (সাঃ) সর্বক্ষন সর্বক্ষেত্রে সাহায্য সমর্থন করেছিল ? রাসুলের (সাঃ) যারা সহকর্মী বা কথিত “সাহাবা” ছিল তারা সকলেই কি মহানবীকে (সাঃ) সর্বক্ষন সর্বক্ষেত্রে গভীরভাবে ভক্তি শ্রদ্বা করেছিল ? বিশ্বাস করুন অথবা নাই করুন – সহজ সত্য জবাব হচ্ছে যে , রাসুলের (সাঃ) বেশীরভাগ কুখ্যাত বিশাল বিশাল নামকরা তথকথিত সাহাবাবৃন্দ রাসুলকে (সাঃ) সাহায্য করা তো দূরের কথা – উল্টে রাসুল (সাঃ) কতৃক ঘোষিত মূল আদেশ অর্থাৎ “আলীউন ওয়ালীউল্লাহ” অস্বীকার এবং প্রত্যাখ্যান করেছে । সবকিছু জানাবোঝার পরেও আমিরুল মুমেনিন মাওলা আলীর (আঃ) ন্যায্য অধিকার হরন করেছে । এসব কুলাঙ্গারের দল যখন “আলীউন ওয়ালীউল্লাহ” কে অস্বীকার এবং প্রত্যাখ্যান করেছে তখন রাসুলকে (সাঃ) পরিত্যাগ করাটা খুবই স্বাভাবিক । এসব কুলাঙ্গারের দল নবীজীকে (সাঃ) চরম বিপদের মধ্যে সম্পূর্ন একা ফেলে রেখে যুদ্বক্ষেত্র থেকে পালিয়ে গেছে । এমনকি মহানবী (সাঃ) তাদেরকে পিছন থেকে উচ্চঃস্বরে আহবান করা সত্বেও তারা সদলবলে পালিয়ে গেছে । ” —- (সে সময়কে স্মরন করে লজ্জিত হও) যখন তোমরা (পাহাড়ের উপর) আরোহন করেই যাচ্ছিলে এবং মুখ ফিরিয়ে কাউকে দেখছিলে না । অথচ রাসুল পিছন থেকে তোমাদের বারংবার আহবান করছিলেন । ফলে তিনি তোমাদেরকে এক শোকের পরিবর্তে আরেক শোক দিলেন যাতে যা তোমাদের হাতছাড়া হয়েছে এবং যা (বিপদ) তোমাদের উপর আপতিত হয়েছে তার জন্য তোমরা দুঃখিত না হও । আর তোমরা যা কর সে বিষয় আল্লাহ সম্যক অবহিত —– “। সুরা – আলে ইমরান / ১৫৩ । ইতিহাসে এটাও আছে যে , মহানবীকে (সাঃ) সাহায্য করা তো দূরের কথা , উল্টো তাঁকে হত্যা করার জন্য বড় বড় পাথরখন্ড নিয়ে পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে ছিল । আরেকজন কুখ্যাত মুনাফিক সহকর্মী মেজখবিশ ওমর লানতুল্লাহ হুদাইবার সন্ধি চুক্তির সময় রাসুল (সাঃ) আদৌ “আল্লাহ কতৃক প্রেরিত রাসুল কিনা” , সে বিষয় সন্দিহান ছিল ! এবারে আসুন , নবীজীকে (সাঃ) গভীরভাবে ভক্তি শ্রদ্বা করার বিষয় । রাসুলের (সাঃ) কতিপয় কথিত কুখ্যাত সাহাবারুপী মুনাফিকগন আদবের সীমালংঘন করে রাসুলের (সাঃ) সম্মুখে উঁচু কন্ঠস্বরে ঝগড়া করেছে । বেয়াদবি এমনই সীমা অতিক্রম করেছিল যে , আসমান থেকে ধমকসহ আয়াত নাজিল হয়েছিল । ” — হে মুমিনগন (বিশ্বাসী) ! নবীর কন্ঠস্বরের উপরে তোমাদের কন্ঠস্বরগুলো উঁচু করিও না এবং যেভাবে তোমরা একে অপরের সাথে উচ্চস্বরে কথা বল সেভাবে তার সম্মুখে উচ্চস্বরে কথা বলিও না । কারন এতে তোমাদের সকল কর্ম নষ্ট হয়ে যাবে । অথচ তোমরা তা অনুভবও করবে না —— ” । সুরা – হুজরাত / ২ । রাসুলের (সাঃ) বেশীরভাগ কথিত কুখ্যাত বিশাল বিশাল নামকরা কথিত সাহাবারুপী মুনাফিকগন রাসুলকে (সাঃ) ভক্তি শ্রদ্বা করা তো দূরের কথা উল্টে পরিস্কার আদেশ সত্বেও খাতা-কলম না দিয়ে নবীকে (সাঃ) পাগল-উম্মাদ বলেছে ।অথচ তাদের সম্মুখে পবিত্র কোরআনে এই আয়াতগুলি বিদ্যমান ছিল ! “ —- গ্রহন কর যা রাসুল তোমাদের দেয় এবং পরিত্যাগ কর যা সে তোমাদেরকে নিষেধ কর এবং আল্লাহ সম্পর্কে সতর্ক হও । নিশ্চয়ই আল্লাহ উপযুক্ত শাস্তি দানে অত্যন্ত কঠোর — ।“ সুরা – হাশর / ০৭ । ” —- তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তোমার নিকটে যা প্রত্যাদেশ করা হয় তার অনুসরন কর । নিশ্চয়ই তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্বন্ধে সম্পূর্ন অবগত —“। সুরা – আহযাব / ২ । সীমালংঘন ও ধৃষ্টতা এমনই পর্যায় পৌঁছেছিল যে , ইহজীবনের দুইদিনের ক্ষমতার দম্ভে এইসব বেঈমান কুলাঙ্গারগুলো এমনই বেপরোয়া হয়ে গিয়েছিল যে , নিষেধ সত্বেও জোরপূর্বক বিষ মিশ্রিত ঔষধ সেবন করিয়ে মহানবীকে (সাঃ) হত্যা করেছিল । জঘন্য মহাপাপে দুইজন নবীপত্মী সরাসরি অংশ নিয়েছিল । ভক্তি-শ্রদ্বা-সম্মান আর আদবের সীমালংঘন এমনভাবে করেছিল যে , মহানবীর (সাঃ) গোসল , কাফন , জানাজা , কাফনে অংশগ্রহন না করে সকিফাতে গিয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের (সাঃ) অনুমোনহীন অবৈধ খলীফা বানিয়ে ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছে । অর্থাৎ আমিরুল মুমেনিন মাওলা আলীর (আঃ) ন্যায্য অধিকার হরন করেছে । ভক্তি শ্রদ্বার এই পর্যায় পবিত্র গৃহে অগ্নিসংযোগ করে নবীকন্যাকে (সাঃআঃ) হত্যা করতে বিন্দুমাত্র লজ্জিত হয় নাই ! ভক্তি শ্রদ্বার এই জাতীয় নমুনা প্রর্দশিত হয়েছে রাসুলের (সাঃ) বেশীরভাগ কুখ্যাত নামকরা কথিত সাহাবারুপী মুনাফিকগন কতৃক । মাওলার (আঃ) নিকটে ক্ষমা চেয়ে বলছি যে , রাসুল (সাঃ) সম্পর্কে এসব কথা লেখাও মহাপাপ । শুধুমাত্র মুনাফিকদের আসল চরিত্র প্রকাশ করার জন্য জঘন্য কথাগুলি লিখতে বাধ্য হচ্ছি । নবীজীকে (সাঃ) ভক্তি শ্রদ্বা করার নমুনা শুনুন , প্লীজ । ১) – মহানবী (সাঃ) কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে প্রসাব করতেন ! (নাউযুবিল্লাহ) ।
রাসুলের (সাঃ) শাহাদাত এবং মিম্বর প্রসঙ্গ ।
মাওলার (আঃ) স্মরনে শুরু করিলাম । বড়ই আশ্চর্য হইতে হয় । শুরুতেই বলে নিচ্ছি যে , পুরো লেখাটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অনুভূতি এবং ভাবনা-চিন্তার প্রতিফলন । দয়া করে লেখাটি পড়ে কেহই অযথা উত্তেজিত হয়ে নিজের রক্তচাপ বৃদ্বি করিবেন না । ভাল না লাগলে নিজের রুচীমত ধুমাইয়া আমাকে গালি-গালাজ করে এখনই ব্লক মেরে দিন । পাগল-উম্মাদ বলে আমার গুষ্ঠি উদ্বার করুন । সমস্যা নাই । বাক-স্বাধীনতার যুগে মনের দুটি কথা তো বলতেই পারি । আমাদের সকলকে এই স্বাধীনতাটুকু মহান আল্লাহও দিয়েছেন । এ কেমন আচরন ? হিসাব মেলে না ! একজন সুস্থ বিবেকসম্পন্ন মানুষের পক্ষে এরকম করা কিভাবে সম্ভব হয় ? কেনইবা এরকম করা হয় ! রবিউল আউয়াল – বিশ্বময় এই মাসটি সত্যিই মহা আনন্দ-খুশীর মাস । কারন এই মাসটিতে ধরনীতে চরনধূলি রেখেছিলেন সমগ্র সৃষ্টিকুল বিশেষ করে মানবজাতির ত্রানকর্তা এবং রহমতস্বরুপ সম্মানীত পিতা হযরত আব্দুল্লাহ (আঃ) এবং মা জননী আমেনার (সাঃআঃ) পুত্র হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) । সৃষ্টিজগত বিশেষ করে ছোট্ট এই পৃথিবী আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছিল নবী মুহাম্মাদের (সাঃ) আবির্ভাবের দরুন । পুরো জগত সংসারের জন্য রহমতের অফুরন্ত ভান্ডার এবং পুতঃপবিত্র সত্বা মুহাম্মাদের (সাঃ) প্রতি স্বয়ং আল্লাহর পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট ঘোষনা দেওয়া হচ্ছে যে , ” -আমরা কেবল আপনাকে বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরুপ প্রেরন করেছি — ।” সুরা – আম্বিয়া / ১০৭ । এক্ষেত্রে শুধু ঘোষনা দিয়েই আল্লাহ ক্ষ্যান্ত হন নাই । তিনি নিজেও রাসুলের (সাঃ) প্রতি দরুদ এবং শান্তি প্রেরন করেন । “ — নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতাগন নবীর উপর দরুদ পড়েন । হে তোমরা যাদের বিশ্বাস আছে , তাঁর উপর দরুদ পড় এবং তাঁর উপর শান্তি কামনা কর যথাযোগ্যভাবে — “ । সুরা – আহযাব / ৫৬ । রহমত এবং বরকতের অফরন্ত সুপেয় ঝর্নাধারার বিশেষ নেয়ামত প্রদানের কৃতজ্ঞতাস্বরুপ সমগ্র মানবজাতিকে আনন্দ-খুশী প্রকাশ করার জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন । ” — হে মানবজাতি ! অবশ্যই মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট এসেছেন নসিহতকারী , অন্তরের পরিশুদ্ধতাদানকারী , হিদায়েত দানকারী ও ঈমানদারদের জন্য রহমত দানকারী । আপনি বলে দিন , তারা যে মহান আল্লাহর পক্ষ হতে “ফযল ও রহমত” পেয়েছে সেজন্য তারা যেন আনন্দখুশী প্রকাশ করে । নিশ্চয় তাদের এ আনন্দখুশী প্রকাশ করাটা তাদের সমস্ত সঞ্চয়ের থেকে উত্তম —- ।” সুরা – ইউনুস / ৫৭-৫৮ । না বলে পারছি না যে , এরকম রহমতের মাসে যারা আনন্দিত হয় না তাদের জন্মে নিশ্চয়ই ঈবলীশের সরাসরি অংশগ্রহন আছে – এটা শতভাগ নিশ্চিত । ” — তিনি (আল্লাহ) বললেন , যাও তাদের মধ্যে যারা তোমার অনুসরন করবে , নিশ্চয়ই জাহান্নাম হল তোমাদের জন্য এক পূর্ণ শাস্তি । যাও এবং তাদের মধ্য থেকে যাকে পার তোমার ধ্বনি দ্বারা প্ররোচিত কর এবং নিজের অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনীসহ তাদের ওপরে আক্রমন কর এবং তাদের ধন-সম্পদে এবং সন্তান-সন্ততিতে অংশী হয়ে যাও এবং তাদের প্রতিশ্রুতি দাও । আর শয়তান তাদের যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা প্রতারনা ব্যতীত কিছুই নয় —- “। সুরা – বনী ইসরাইল / ৬৩ , ৬৪ । এবারে মূল প্রসঙ্গে চলুন , প্লীজ । যে ব্যাপারটি আমাকে খুবই অবাক ও প্রচন্ড ব্যথিত করে দেয় সেটা হচ্ছে যে , এরকম মহান একজন পুতঃপবিত্র সত্বা রবিউল আউয়াল মাসে ধরনীতে পদার্পন করলেন এবং আমরা যথাসাধ্য ওনার আগমন উপলক্ষে দিনটিকে স্মরনীয় রাখার জন্য বিভিন্ন আনন্দ অনুষ্ঠান এবং কার্যক্রম পালন করে থাকি । জন্মদিনের কেক কাটি এবং বিভিন্ন মিষ্টি , কাচ্চি-বরিয়ানী সহ পায়েস হালুয়া বেশ মজা করে ভক্ষন করি । দুনিয়ার জাতি-ধর্ম-বর্ন নির্বিশেষে সকলের পালন করা উচিত । বিশেষ করে মুসলিম উম্মাহর কয়েকগুন বেশী করা উচিত । সবই ঠিক আছে । তবে যে ব্যাপারটি বিস্মিত করে সেটা হল যে , সুমহান সত্বার দুনিয়াতে আগমন উপলক্ষে বিশ্বময় আমরা প্রচন্ড আনন্দ উৎসব করি । কিন্ত মানুষটির চলে যাওয়া বা প্রস্থান নিয়ে আমরা বরফের মত শীতল থাকি কেন ? মহান মানুষটি কিভাবে চলে গেলেন ? অর্থাৎ মানুষটির প্রস্থান পর্বটি কেমন হয়েছিল ? স্বাভাবিক প্রস্থান হয়েছিল নাকি শাহাদাতবরন করেছিলেন ? এরকম একজন মহান ব্যক্তিত্বের জানাজা-দাফন পর্ব কেমন হয়েছিল ? কত লক্ষ ভক্তবৃন্দ জানাজা-দাফনে অংশ নিয়েছিলেন ? শাহাদাত পরবর্তী কার্যক্রমে “আশারা-মোবাশশারা” খ্যাত জলীল কদর তথাকথিত সাহাবারুপী কুলাঙ্গার মুনাফিকবৃন্দের অংশগ্রহন ছিল কিনা ? যদি না থাকে তাহলে কেনইবা ওরা অনুপস্থিত রইল ? কেননা তখন রাসুলের (সাঃ) জানাজা-দাফন পর্বে অংশগ্রহন করাই ছিল সবথেকে বড় এবং পূন্যের কর্ম । ইত্যাকার বিষয়াদি সম্পর্কে দুনিয়ার সকল আহলে বাইত ভক্ত মুহিবগন এবং বেশীরভাগ পীর সাহেবগন মুখে কুলুপ এটে থাকেন কেন ? প্রচন্ড বিস্মিত হতে হয় যখন দেখি যে , বার ইমামীয়া শীয়াদের সম্মানীত আলেমগন একইভাবে নীরব থাকেন । ২৮শে সফর রাসুলের (সাঃ) শাহাদাত দিবস উপলক্ষে আয়োজিত মজলিশ থেকেও রাসুলের (সাঃ) শাহাদাত সম্পর্কিত এবং শাহাদাত পরবর্তী কোন ঘটনাই বলা হয় না । কেন এই রহস্যজনক নীরবতা ? ইতিহাস জানা নিশ্চয়ই অপরাধ নয় । রাসুলের (সাঃ) শাহাদাতের করুন ইতিহাস নিয়ে কিছুই বলা যাইবে না – দুনিয়ার কোন মুজতাহিদ , মার্জাগনের এরকম কোন নিষেধাজ্ঞা আছে কি ? এরকম কোন ফতোয়া আছে কি ? একজন মানুষের জন্মদিন উপলক্ষে বিশাল আনন্দ উৎসব করবেন এবং পেটপুরে মিষ্টি-মিঠাই খাবেন । পাশাপাশি মানুষটির চলে যাওয়া নিয়ে মুখে কুলুপ এটে থাকবেন । এটা কোন ধরনের আচরন ? নিজেদেরকে বিশাল বড় মাপের আহলে বাইত বা মুহিব্বানে আহলে বাইত (আঃ) ভক্ত বলে দাবী করেন । তাহলে মিম্বর থেকে সাধারন জনতাকে কেন অন্ধকারে রেখে দেন ? ঐ সকল পীর সাহেব , দাবীদার আল্লামা , দাবীদার হুজ্জাতুল ইসলাম , সৈয়দ , রিজভী , নাকাভি ইত্যাদি পদবীধারী আলেম-ওলামাগনের নিকট বিনীতভাবে জিজ্ঞাস্য যে , রাসুলের (সাঃ) মিম্বরের হক কি সঠিকভাবে আদায় করছেন ? কেয়ামতের ময়দানে রাসুলকে (সাঃ) কি জবাব দেবেন ? কেননা এই মিম্বর আছে বলেই আপনারা বিশাল বিশাল পদ পদবীর অধিকারী হয়ে আছেন । এই মিম্বর আছে বলেই ভালমতই আয়-রোজগার হচ্ছে । যার নুন খান তাঁর (সাঃ) দুঃখের ঘটনাগুলো বলতে এত কুন্ঠিত হন কেন ? আল্লাহর রাসুল (সাঃ) থেকেও কি সমাজপতিদের ভয় করেন ? আর কতদিন দরবারী পীরসাহেব বা দরবারী আল্লামা , দরবারী হুজ্জাতুল ইসলাম পদবীধারী কথিত আলেম হয়ে থাকবেন ? এবারে আল্লাহর রাসুলকে (সাঃ) কিছুটা ভয় করুন । কি জবাব দেবেন তাঁকে ? প্রতিটা মজলিশ এবং প্রতিটা মিম্বর থেকে রাসুলের (সাঃ) নাতির (আঃ) হত্যাকারী ইয়াজিদ লানতুল্লাহর নাম প্রকাশ্য বলা হচ্ছে বলেই ইয়াজিদের উপরে সকলেই ঘৃনা এবং লানত দেয় । একইভাবে রাসুল (সাঃ) , ফাতেমা (সাঃআঃ) এবং ইমামগনের (আঃ) খুনীদের নাম-পরিচয় যদি প্রকাশ্যে সমস্ত মিম্বর থেকে বলা হইত তাহলে সাধারন জনতা ঐ খুনী লানতুল্লাহদের উপর প্রচন্ড ঘৃনা এবং লানত দিত ! আফসোস ! গত ১৫০০ বছর যাবৎ রাসুল (সাঃ) এবং আহলে বাইতগনের (আঃ) খুনীচক্রের সাথে আপোষ করা হচ্ছে । খুনীদের নামধাম , পরিচয় মিম্বর থেকে বলা হয় না
রাসুল (সাঃ) এবং আত্মহত্যা প্রসঙ্গ
মাওলার (আঃ) স্মরনে শুরু করিলাম । লেখার শুরুতেই মাওলার (আঃ) নিকটে নতমস্তকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি । কারন আল্লাহর রাসুল (সাঃ) সম্পর্কে মহানিকৃষ্ট টাটকা একটি মিথ্যা বর্ননা সম্বন্ধে লিখতে বাধ্য হচ্ছি । বিষয়বস্ত এতটাই জঘন্য যে , এসব কথা কল্পনা করাও মহাপাপ । কারন বিষয়টি সরাসরি আল্লাহর সাথে সম্পর্কযুক্ত । মহান আল্লাহর ঠিক পরেই যাঁর (সাঃ) অবস্থান অর্থাৎ চৌদ্দ মাসুমিনগনের (আঃ) মুকুট তথা রাসুল (সাঃ) হলেন আল্লাহর আশ্রয়স্থল ও নিরাপত্তা , আল্লাহর দূর্গ , আল্লাহর করুনা , রহমত , আল্লাহর হুজ্জাত , আল্লাহর দলীল , আল্লাহর নিদর্শন সমূহ , আল্লাহর পথ) , আল্লাহর ছাঁয়া , আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ , আল্লাহর আত্মা , পুরো সৃষ্টিজগতের মালিক , জান্নাত ও জাহান্নামের মালিক ,আল্লাহর পথপ্রদর্শক , আল্লাহর হুকুম বা আমর আল্লাহ । কথা দাদা জলের মত পরিস্কার যে , রাসুল (সাঃ) তথা চৌদ্দ মাসুমিনগনকে (আঃ) উদ্দেশ্য কিছু বলা এবং আল্লাহকে উদ্দেশ্য করা কিছু বলার মধ্যে বিন্দুমাত্র পার্থক্য নাই । ” —- এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে অথবা তাঁর নিদর্শনাবলীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে , তার থেকে বড় জালিম (অবিচারক) আর কে ? আর জালিমরা কখনও সফল হয় না —-“। সুরা – আনআম / ২১ । ” —- যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে তার অপেক্ষা বড় জালিম (অবিচারক) আর কে হতে পারে ? তাদেরকে তাদের প্রভূর সামনে উপস্থিত করা হইবে এবং স্বাক্ষীরা বলবে , “এরাই এদের প্রতিপালকের প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছিল” । জেনে রাখ , জালিমদের উপরে আল্লাহর লানত (অভিসম্পাত) রয়েছে —“। সুরা – হুদ / ১৮ । ” —- আর যারা আমাদের নির্দশনাবলী সম্পর্কে তর্ক-বিতর্ক করে তারা জেনে রাখুক যে , তাদের কোন মুক্তি নাই —-“। সুরা – শুরা / ৩৫ । চৌদ্দ মাসুমিনগন (আঃ) হলেন আল্লাহর প্রকাশ এবং হুজ্জাত বা প্রমান । মুখে যা আসে তা বলা থেকে বিরত হন । সাধু সাবধান ! লেখাটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যে , ঐ সকল কুলাঙ্গার লানতুল্লাহদের প্রকৃত চরিত্র সকলের সামনে তুলে ধরা যাতে করে সাধারন মুসলিম জনতা যেন বিভ্রান্ত না হয় । মূল প্রসঙ্গে চলুন । আল্লাহর রাসুলকে (সাঃ) আত্মহত্যা করিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা ! পবিত্র কোরআন সহ সকল ঐশী কিতাব এবং পৃথিবীর অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থে খুব সুস্পষ্টভাবে বলা আছে যে , আত্মহত্যা হচ্ছে জঘন্য মহাপাপ । এমনকি মানুষের আদালতেও আত্মহত্যাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না । দুনিয়ার সমস্ত ধর্মে এবং জগতের সকল আদালতে আত্মহত্যাকে বৈধতা দেওয়া হয় নাই । একমাত্র ভীরু কাপুরুষ ব্যক্তি আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় । সৃষ্টিকর্তার প্রতি শতভাগ আস্থাহীনতা এবং অবিশ্বাসের সর্বশেষ গন্তব্য হচ্ছে – আত্মহত্যা । বলাই বাহুল্য যে , কাফের-মুশরিকদের সর্বশেষ গন্তব্য – নরক বা জাহান্নাম । কথাটা অত্যন্ত পরিস্কার যে , আত্মহত্যা সর্বাবস্থায় নিষিদ্ব বা হারাম । কারন নিজেকে নিজে ধ্বংস করার মানেই হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার প্রতি শতভাগ আস্থাহীনতা এবং পুরোপুরি অবিশ্বাস করে ফেলা । পবিত্র কোরআনে এ সম্পর্কে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়েছে । ” — তোমরা নিজ হাতে নিজেদের ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করিও না — ।” সুরা – বাকারা / ১৯৫ । ” —– এবং তোমরা নিজেদের হত্যা করিও না —- ।” সুরা – নিসা / ২৯ । সুপ্রিয় পাঠক , সুমহান পুতঃপবিত্র সত্বা হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) সম্বন্ধে মহান আল্লাহ স্বয়ং নিজে গ্যারান্টি দিয়ে বললেন যে , নবীজী (সাঃ) উম্মাদ , পাগল , পথভ্রষ্ট ব্যক্তি নন । তিনি যা কিছুই করেন এবং যা কিছুই বলেন সবই মহান আল্লাহর সরাসরি নির্দেশ মোতাবেক । ” — আপনি আপনার প্রতিপালকের অনুগ্রহে উম্মাদ নন — ।” সুরা – কালাম / ২ । ” — তোমাদের সাথী না পথভ্রষ্ট হয়েছে , আর না বিভ্রান্ত হয়েছে এবং সে মনগড়া (প্রবৃত্তির বশে) কোন কথা বলে না , এতো কেবল প্রত্যাদেশ (ওহী) যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয় — ।” সুরা – নাজম / ২ , ৩ , ৪ । এমনকি মহান আল্লাহ আমাদেরকেও সতর্ক করে দিয়েছেন এইমর্মে যে , ভুলেও আমরা যেন রাসুল (সাঃ) সম্বন্ধে এই জাতীয় উদ্ভট অবাস্তব চিন্তা-ভাবনা না করি । ” — তারা কি চিন্তা করে দেখে নাই যে , তাদের সহচারীর (রাসুল) মধ্যে কোন উম্মাদনা নেই , সে তো স্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র —— ” । সুরা – আরাফ / ১৮৪ । সর্বোপরি মহান আল্লাহ নবীজী ((সাঃ) সম্বন্ধে এই ঘোষনা দিলেন । ” – এবং নিঃসন্দেহে আপনি (রাসুল) অতীব মহান চরিত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত –।” সুরা – কালাম / ৪ । এতকিছু গ্যারান্টি দেওয়ার পরে মহান আল্লাহ সমগ্র মানবজাতির জন্য রাসুলকে (সাঃ) একমাত্র অনুসরনীয় আদর্শ বলে ঘোষনা দিলেন । ” — নিঃসন্দেহে তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসুল হলেন (অনুসরনীয়) উত্তম আদর্শ রয়েছে তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি আকাংখা পোষন করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরন করে — ।” সুরা – আহযাব / ২১ । প্রিয় পাঠক , সর্বশক্তিমান আল্লাহ কতৃক গ্যারান্টিযুক্ত মহান রাসুলের (সাঃ) উপরে তথাকথিত ইমাম মোহাম্মাদ ইসমাইল বুখারী লানতুল্লাহ আত্মহত্যার অপবাদ দিলেন ! সহীহ সিত্তাহ হাদিস গ্রন্থসমূহের মধ্যে অন্যতম গ্রন্থ সহীহ আল বুখারী শরীফে বুখারী লানতুল্লাহ লিখেছে । “আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) কাছে কিছু সময়ের জন্য ওহী আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল । এজন্য রাসুলের (সাঃ) মন ভীষন খারাপ হয়ে যায় । এর ফলশ্রুতিতে রাসুল (সাঃ) পাহাড়ের উপর থেকে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন । তখন জীবরাইল আমীন (আঃ) এসে রাসুলকে (সাঃ) সান্তনা দেন —- ।” সূত্র – সহীহ বুখারী , খন্ড – ৯ পৃষ্ঠা – ২৯ , হাদীস নং – ৬৯৮২ , কিতাবুত্তাবীর অধ্যায় । বিষয়টি নিয়ে কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি । মানসিকভাবে সবথেকে দুর্বল , প্রচন্ড হতাশাগ্রস্থ , পাগল-উম্মাদ ব্যক্তিরাই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় । সারা দুনিয়ার মানুষ এদেরকে ভীরু-কাপুরুষ বলে । এমনকি হাদিসে এটাও বলা হয় যে , আত্মহত্যা করা ব্যক্তির আত্মা কেয়ামত পর্যন্ত আকাশ ও পৃথিবীর মাঝ বরাবর ঝুলন্ত অবস্থায় থেকে কঠিন আযাব বা শাস্তি ভোগ করে । কারন লোকটি সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও আস্থা সবই হারিয়ে ফেলেছিল । অর্থাৎ সে আল্লাহর অস্তিত্বে অবিশ্বাস করেছিল । এটা তো সুস্পষ্ট কুফরের লক্ষন । নিজেকে নিজেই ধ্বংস করে ফেলা বা আত্মহত্যা করা – এটি মারাত্মক সীমালংঘন এবং একটি জঘন্য পাপকর্ম । এই অপকর্মের শাস্তি হচ্ছে সরাসরি জাহান্নাম । এটিই হচ্ছে মহান আল্লাহর পরিস্কার আইন । ” —– এবং যে কেউ সীমালংঘন এবং অবিচারের ভিত্তিতে এরুপ (আত্মহত্যা) করিবে , তাহলে আমরা অতিসত্বর তাকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করিব । আর তা আল্লাহর পক্ষে অতি সহজ — ।” সুরা – নিসা / ৩০ । হায়রে পোড়া কপাল ! শেষ পর্যন্ত মহানবীকে (সাঃ) কাফের সাব্যস্ত করে আত্মহত্যা করানোর জন্য পাহাড়ের চূড়াতে আরোহন করিয়ে দেওয়া হইল ! (নাউযুবিল্লাহ) হায়রে পোড়া কপাল ! শেষ পর্যন্ত মহানবীকে (সাঃ) সীমালংঘনকারী এবং কাফের সাব্যস্ত করে জাহান্নামী
আল্লাহর রাসুলকে (সাঃ) “আবুল কাশিম” বলা হয় কেন ?
জবাব – যে কোন ধর্মীয় ওয়াজের শুরুতে বেশীরভাগ বক্তাগন আল্লাহর রাসুলকে (সাঃ) “আবুল কাশিম” বলে সম্বোধন করে থাকেন । যিনি বলছেন এবং অধিকাংশ শ্রোতাগন এটাই মনে করেন যে , রাসুল (সাঃ) “কাশিম” নামের পুত্র সন্তানের জনক ছিলেন । সেজন্য রাসুলকে (সাঃ) “কাশিমের পিতা” অর্থাৎ “আবুল কাশিম” বলে সম্বোধন করা হয় । আসুন বিষয়টি জেনে নেই । মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক আল তালিকানি (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে , তিনি আহমেদ ইবনে মুহাম্মদ ইবনে সাঈদ আল কুফিকে উদৃত করেছেন এবং তিনি আলী ইবনে আল হাসান ইবনে আল আলী ইবনে আল ফাঁদধাল থেকে এবং তিনি তার পিতার কর্তৃত্বে বর্ণনা করেছেন , আমি ইমাম আবুল হাসান আল রেজাকে (আঃ) জিজ্ঞাস করেছিলাম , নবীর (সাঃ) ডাকনাম “আবুল কাশিম” কেন ছিল ? আমাদের অষ্টম ইমাম রেজা (আঃ) বললেন , কারণ নবীর (সাঃ) “কাশিম” নামে এক পুত্র ছিল । এ কারণেই তাঁর (সাঃ) ডাক নাম ছিল “আবুল কাশিম” I আমি ইমামকে (আঃ) জিজ্ঞেস করলাম , “হে আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) পুত্র ! আপনি (আঃ) কি আমাকে আরও পরিষ্কার ব্যাখ্যার যোগ্য মনে করেন ? ইমাম আল রেজা (আঃ) বললেন , “হ্যাঁ , নিশ্চয়ই ! তুমি কি জানো না যে , আল্লাহর নবী (সাঃ) বলেছেন , “আলী (আঃ) এবং আমি (সাঃ) এই জাতির পিতা । তুমি কি জানো না যে , আল্লাহর নবী (সাঃ) সকল জাতির পিতা এবং আলী (আঃ) এই জাতির একজন সদস্য ? আমি বললাম , হ্যাঁ জানি I ইমাম (আঃ) বললেন , তুমি কি জানো না যে , মাওলা আলীই (আঃ) সেই “আবুল কাশিম” যিনি (আঃ) জান্নাত ও জাহান্নামকে ভাগ করেছেন ?” আমি উত্তর দিলাম , “হ্যাঁ।” ইমাম রেজা (আঃ) তখন বললেন , কাজেই আল্লাহর রাসুলকে (সাঃ) “আবুল কাশিম” বলা হয় কেননা তিনি (সাঃ) জান্নাত ও জাহান্নামকে বিভক্তকারীর পিতা । আমি জিজ্ঞেস করলাম , মাওলা (আঃ) ! এর অর্থ কি ? রাসুলের (সাঃ) সমগ্র মানবজাতির জন্য তাঁর (সাঃ) উদারতা সন্তানদের জন্য পিতার মতো । নবীর (সাঃ) জাতির সর্বশ্রেষ্ঠতম সদস্য হলেন আমিরুল মুমেনিন মাওলা আলী (আঃ) এবং তাঁর (সাঃ) পরে তাদের জন্য মাওলা আলীর (আঃ) উদারতা মহানবীর (সাঃ) অনুগ্রহের মতো । যেহেতু তিনি (আঃ) হলেন নবীর (সাঃ) বিশ্বস্ত , উত্তরসূরী এবং নবীর (সাঃ) পরে ঐশী অবিভাবক (নেতা) । তাই রাসুল (সাঃ) বলেছেন , আলী (আঃ) এবং আমি (সাঃ) এই জাতির দুই পিতা (অবিভাবক) I এ প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) মিম্বারে আরোহণ করে বললেন , “যে ব্যক্তি তার পিছনে ঋণ বা স্ত্রী রেখে যায় , আমি অবশ্যই তার ঋণ শোধ করিব এবং তার স্ত্রীর জীবনযাত্রার ব্যয় বহন করিব । যে ব্যক্তি তার পিছনে কিছু সম্পত্তি রেখে যায় , সে সম্পত্তি তার উত্তরাধিকারীদের হবে ।” এ কারণেই রাসুল (সাঃ) তাদের পিতা , মাতা এমনকি নিজেদের থেকেও শ্রেষ্ঠ ছিলেন । আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) পরে আমিরুল মুমিনিন মাওলা আলীর (আঃ) ক্ষেত্রেও এই একই কথা সমভাবে প্রযোজ্য । “ — তোমাদের অভিভাবক শুধু আল্লাহ , তাঁর রাসুল এবং সেই বিশ্বাসীগন যারা নামাজ বজায় রাখে এবং যাকাত আদায় করে রুকুরত অবস্থায় — “ । সুরা – মাইদা / ৫৫ । ” — এবং যে কেউ আল্লাহ , তাঁর রাসুল এবং (সেই) বিশ্বাসীদের নিজ অভিভাবক হিসাবে গ্রহন করবে (সে আল্লাহর দলের অন্তর্ভুক্ত) , নিশ্চয়ই আল্লাহর দলই বিজয়ী —- “। সুরা – মায়েদাহ / ৫৬ । সূত্র – আহলে বাইতের (আঃ) তাফসীর ইংরেজী ভার্সন থেকে সংগৃহীত ও সংকলিত । ইয়া মাওলা (আঃ) সালাম । সদা ভাল থাকুন । আজ তবে এইটুকু থাক , বাকী কথা পরে হবে । ধন্যবাদান্তে , সাকিল আহমেদ । ইয়া সাহেবুজ্জামান (আঃ) আদরিকনী আদরিকনী , আল্লাহুমা সাল্লে আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারাজাহুম , আল্লাহুম্মা লান হুম জামিয়ান , লানতুল্লাহ আলা কওমিজ জালেমিন ।
রাসুল (সাঃ) প্রচন্ড ভয় পাইলেন !
বিষয়টা মাথায় খেলছে না । কেউ কি সাহায্য করবেন , প্লীজ ! মাওলার (আঃ) স্মরনে শুরু করিলাম । দৃশ্যপট – ০১ । মহান আল্লাহর দরবার । মহান আল্লাহ স্বয়ং নিজে হযরত আদমকে (আঃ) কিছু নাম শিক্ষা দিলেন এবং হযরত আদমকে (আঃ) আদেশ দিলেন যে , উক্ত নামগুলো যেন সকল ফেরেশতাদেরকে শিক্ষা দেন । মহান প্রতিপালকের আদেশ মোতাবেক হযরত আদম (আঃ) তখন সকল ফেরেশতাগনকে (আঃ) শিক্ষা দিলেন । সুরা বাকারাতে উল্লেখিত ৩১ নং আয়াত দ্বারা বিষয়টি তাহলে পরিস্কার যে , হযরত আদমের (আঃ) সর্বপ্রথম শিক্ষাগুরু হচ্ছেন বিশ্ব প্রতিপালক । ” —- এবং তিনি আদমকে সমুদয় নাম শিক্ষা দিলেন । অতঃপর সেগুলো ফেরেশতাগনের সম্মুখে উপস্থাপন করে বললেন , “যদি তোমরা সত্যবাদী হও তবে আমাকে এ সমুদয় নাম বলে দাও — ।” সুরা – বাকারা / ৩১ । ” —- তিনি বললেন , “হে আদম ! তুমি তাদেরকে (ফেরেশতাগনকে) সেগুলোর নাম সম্পর্কে জানিয়ে দাও” । যখন সে তাদেরকে সেগুলোর নাম সম্পর্কে জানিয়ে দিল , তখন তিনি বললেন , “আমি কি তোমাদের বলি নাই যে , আমি আকাশমন্ডলী ও ভূমন্ডলের গোপন রহস্য সম্বন্ধে অবহিত এবং যা তোমরা প্রকাশ কর আর যা গোপন করতে , আমি তা জানি —- ” । সুরা – বাকারা / ৩৩ । বিষয়টা তাহলে পরিস্কার যে , হযরত আদম (আঃ) হলেন সকল ফেরেশতাগনের (আঃ) ওস্তাদ এবং সকল ফেরেশতাগন (আঃ) হযরত আদমের (আঃ) সাগরেদ । দৃশ্যপট – ০২ । পৃথিবীতে আগমনের পরে প্রায় পাঁচশত বছর প্রচন্ড অনুশোচনা অনুতাপ এবং ক্রন্দনের পর মহান আল্লাহ পবিত্র কিছু নাম সমূহের স্মরনের প্রেক্ষিতে আদিপিতা হযরত আদমের (আঃ) দোয়া কবুল করে নিলেন । ” — অতঃপর আদম নিজ প্রতিপালকের নিকট হইতে (ক্ষমা প্রার্থনার জন্য) কিছু কথা প্রাপ্ত হইল । এবং তিনি তার তওবা কবুল করে নিলেন —– ।” সুরা – বাকারা / ৩৭ । পবিত্র কোরআনে বর্নিত ঘটনা সমূহের প্রেক্ষিতে শীয়া-সুন্নিসহ মুসলমানদের সকলেই একমত যে , উক্ত পবিত্র নাম সমূহ হচ্ছে পুতঃপবিত্র চৌদ্দ মাসুমিনগন (আঃ) । এবং পাক-পাজ্ঞাতন তথা চৌদ্দ মাসুমিনগনের (আঃ) প্রধানতম সর্দার হলেন হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) । দৃশ্যপট – ০৩ । নবীকন্যা জগত জননী ফাতেমা যাহরার (সাঃআঃ) পবিত্র গৃহ ঝাড়ু দিয়ে পরিস্কার করা , নবীকন্যার (সাঃআঃ) দুই শিশুপুত্র হাসান (আঃ) ও হোসেনের (আঃ) দোলনা দোলানো , আটা পিষার চাকতি পিষা , জান্নাত থেকে দুই সন্তানের (আঃ) জন্য ঈদের জামা আনা ইত্যাদি ঘর-গেরস্থের অনেক কাজ এই সমস্ত ফেরেশতাগন (আঃ) হরহামেশা করতেন । বলাই বাহুল্য যে , খাতুনে জান্নাতের (সাঃআঃ) ঘরের কাজকর্ম করে দিয়ে এই সকল ফেরেশতারা (আঃ) ধন্য হয়ে যেতেন । এবং ফেরেশতাদের (আঃ) সকল কাজই ইবাদততুল্য । কারন ফেরেশতাগন (আঃ) প্রতি মুহূর্তে প্রতিপালকের যে কোন আদেশ-নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে থাকেন । সুপ্রিয় পাঠক , এবারে মূল কথায় আসি । শীয়া-সুন্নি সকলেই একবাক্যে এই কথাগুলি স্বীকার করেন যে , মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) প্রকাশ্যে না আসলে জগত সংসারে আল্লাহ নিজেও অপ্রকাশিত থেকে যেতেন । এই দুনিয়া সহ সমগ্র সৃষ্টিজগত সমূহের কিছুই সৃষ্টি হইত না । সকল কিছুর সৃষ্টির মূলে হচ্ছেন নবীজী (সাঃ) তথা চৌদ্দ মাসুমিনগন (আঃ) । সর্বপ্রথম স্বমহিমায় উদ্ভাসিত হলেন মহানবীর (সাঃ) পবিত্র নূর মোবারক তথা চৌদ্দ মাসুমিনগন (আঃ) । মানবজাতির আদিপিতা হযরত আদমকে (আঃ) তখনও সৃষ্টি করা হয় নাই । আদম (আঃ) যখন কাদাজলে অবস্থান করছেন তারও বহু হাজার বছর পূর্বে হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) তথা চৌদ্দ মাসুমিনগন (আঃ) স্বমহিমায় অবস্থান করছেন । হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) হলেন অন্যান্য সকল নবী-রাসুলের মহাসর্দার । আমাদের আদিপিতা হযরত আদম (আঃ) তখন মাটি এবং জলের মিশ্রনে ছিলেন । রাসুলকে (সাঃ) জিজ্ঞাসা করা হইল , আপনি কখন নবুয়ত লাভ করেছেন ? রাসুল (সাঃ) বলেন , যখন আদম মাটি ও পানির মাঝে ছিলেন । অর্থাৎ যখন আদমের অস্তিত্ব ছিল না । সূত্র – তাফসীরে নুরুল কোরআন , খন্ড – ৩ , পৃষ্ঠা – ৩০৫ / নুরে নবী , মাওলানা আমিনুল ইসলাম , খন্ড – ১, পৃষ্ঠা -৫ / সহীহ তিরমিযি , (ইসলামিক সেন্টার) , খন্ড – ৬ , হাদীস নং – ৩৫৪৮ । এবারে মূল লেখাটির শুরুতেই মাওলার (আঃ) নিকটে নতমস্তকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি । কারন আল্লাহর রাসুল (সাঃ) সম্পর্কে মহানিকৃষ্ট টাটকা একটি মিথ্যা বর্ননা সম্বন্ধে লিখতে বাধ্য হচ্ছি । বিষয়বস্ত এতটাই জঘন্য যে , এসব কথা কল্পনা করাও মহাপাপ । কারন বিষয়টি সরাসরি আল্লাহর সাথে সম্পর্কযুক্ত । মহান আল্লাহর ঠিক পরেই যাঁর (সাঃ) অবস্থান অর্থাৎ চৌদ্দ মাসুমিনগনের (আঃ) মুকুট তথা রাসুল (সাঃ) হলেন আল্লাহর আশ্রয়স্থল ও নিরাপত্তা , আল্লাহর দূর্গ , আল্লাহর করুনা , রহমত , আল্লাহর হুজ্জাত , আল্লাহর দলীল , আল্লাহর নিদর্শন সমূহ , আল্লাহর পথ) , আল্লাহর ছাঁয়া , আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ , আল্লাহর আত্মা , পুরো সৃষ্টিজগতের মালিক , জান্নাত ও জাহান্নামের মালিক ,আল্লাহর পথপ্রদর্শক , আল্লাহর হুকুম বা আমর আল্লাহ । কথা দাদা জলের মত পরিস্কার যে , রাসুল (সাঃ) তথা চৌদ্দ মাসুমিনগনকে (আঃ) উদ্দেশ্য কিছু বলা এবং আল্লাহকে উদ্দেশ্য করা কিছু বলার মধ্যে বিন্দুমাত্র পার্থক্য নাই । ” —- এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে অথবা তাঁর নিদর্শনাবলীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে , তার থেকে বড় জালিম (অবিচারক) আর কে ? আর জালিমরা কখনও সফল হয় না —-“। সুরা – আনআম / ২১ । ” —- যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে তার অপেক্ষা বড় জালিম (অবিচারক) আর কে হতে পারে ? তাদেরকে তাদের প্রভূর সামনে উপস্থিত করা হইবে এবং স্বাক্ষীরা বলবে , “এরাই এদের প্রতিপালকের প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছিল” । জেনে রাখ , জালিমদের উপরে আল্লাহর লানত (অভিসম্পাত) রয়েছে —“। সুরা – হুদ / ১৮ । ” —- আর যারা আমাদের নির্দশনাবলী সম্পর্কে তর্ক-বিতর্ক করে তারা জেনে রাখুক যে , তাদের কোন মুক্তি নাই —-“। সুরা – শুরা / ৩৫ । চৌদ্দ মাসুমিনগন (আঃ) হলেন আল্লাহর প্রকাশ এবং হুজ্জাত বা প্রমান । মুখে যা আসে তা বলা থেকে বিরত হন । সাধু সাবধান ! লেখাটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যে , ঐ সকল কুলাঙ্গার লানতুল্লাহদের প্রকৃত চরিত্র সকলের সামনে তুলে ধরা যাতে করে সাধারন মুসলিম জনতা যেন বিভ্রান্ত না হয় । সুপ্রিয় পাঠক , এবারে আসুন , বাজারে বহুল প্রচারিত তথাকথিত জাল ভূয়া টাটকা মিথ্যা হাদিসের নমুনা দেখে নিন । ” — হেরা পর্বতের গুহায় হযরত জীবরাইল (আঃ) যখন সর্বপ্রথম পবিত্র কোরআনের আয়াত নিয়ে অবর্তীন হলেন তখন মুহাম্মাদ (সাঃ) এতটাই ভয় পেয়েছিলেন যে , তিনি কাঁপতে কাঁপতে কোনমতে দৌড়ে নিজগৃহে এসে বিবি খাদিজাকে (সাঃআঃ) বললেন , আমি ভীষন ভয় পেয়েছি , আমাকে এক্ষুনি চাদর দিয়ে আবৃত কর — ইত্যাদি ইত্যাদি । অর্থাৎ হাদিসটিতে একটা বিষয় পরিস্কার করে বলা হচ্ছে যে , বার্তাবাহক ফেরেশতা হযরত জীবরাইলকে (আঃ) দেখে মহানবী (সাঃ) এতটাই
অতি সম্মানীত বংশ এবং ইহুদী ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গ
ইতিহাস থেকে এক ঝলক । খুবই দুঃখের সাথে বলতেই হয় যে , মুসলিম উম্মাহর অধিকাংশ এই বিষয়টি না জানলেও জগতের অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায় বিশেষ করে ইহুদী এবং খ্রীষ্টান সম্প্রদায় আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) মান-মর্যাদা , শান-শওকতের কথা অনেক আগে থেকেই জানত । এমনকি খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ও আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এবং পুতঃপবিত্র আহলে বাইতগন (আঃ) সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল ছিল । মোবাহেলার ময়দানে খ্রীষ্টান সম্প্রদায় তাদের আকিদা-বিশ্বাসের পরিচয় দিয়েছে । কারন তাওরাত এবং ইজ্ঞিল গ্রন্থে এ জাতীয় তথ্য ছিল । ” —- যখন মরিয়ম তনয় ঈসা বলেছিল , “হে বনী ইসরাইল ! আমি তোমাদের প্রতি আল্লাহর রাসুল এবং তাওরাত থেকে যা কিছু আমার পূর্বে ছিল তার সত্যায়নকারী এবং আমি সেই রাসুলের সুসংবাদদাতা যিনি আমার পরে আগমন করবেন , যাঁর নাম হবে “আহমাদ” —- ।” সুরা – সাফফ / ৬ । তাই তাদের এ চেষ্টাই ছিল যে , কিভাবে রাসুলের (সাঃ) পবিত্র সত্বাকে দুনিয়ার বুক থেকে মিটিয়ে দেয়া যায় । তারা একের পর এক রাসুলের (সাঃ) পূর্বপুরুষদের উপরে নজরদারী করত এবং তাদের একের পর এক হত্যা করেছে বা হত্যার চেষ্টা চালাত । দুঃখজনক যে , ইসলামের ইতিহাসে তাদের মৃত্যুর সঠিক কারণ উল্লেখ করা হয় নাই । বলাই বাহুল্য যে , ইহুদী জাতির হাতে অসংখ্য ও অগনিত নবী-রাসুলগন (আঃ) শহীদ হয়েছেন । ” — নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর নির্দশনসমূহ অস্বীকার করে এবং অন্যায়ভাবে নবীগনকে হত্যা করে এবং তাদেরকেও হত্যা করে যারা সুবিচার করতে নির্দেশ দেয় । তুমি তাদের বেদনাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও —- “। সুরা – আলে ইমরান / ২১ । ১) – হযরত হাশিম (আঃ) । হযরত হাশিম ছিলেন রাসুলের (সাঃ) পূর্বপুরুষ এবং তিনি ছিলেন মক্কাবাসী । কিন্ত তাঁর কবর হচ্ছে ফিলিস্তিনের গাজা নামক স্থানে ! একদা তিনি মক্কা থেকে ব্যবসার জন্য শামের দিকে রওনা হন । পথিমধ্যে তিনি ইয়াসরাবে অবস্থান করেন এবং সেখানে আমরু বিন যায়দ লাবিদ খাযরাজি যিনি ছিলেন এক গোত্রের প্রধান তার বাড়ীতে মেহমান হয়ে আসেন । হাশিম আমরুর কন্যা সালমার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং বিবাহের পর হাশিম তার স্ত্রীকে মক্কায় নিয়ে আসেন । যখন সালমা গর্ভবতী হয় তখন বিবাহের শর্ত অনুযায়ী তাকে তার পরিবারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় । হাশিম তাকে মদীনাতে তার আত্মীয় স্বজনের কাছে তাকে রেখে শামে ব্যবসার কাজে চলে যান এবং যাবার সময় তিনি তার স্ত্রীকে বলেন যে , হয়তো আমি আর এ সফর থেকে ফিরে আসব না । খোদা তোমাকে একটি পুত্র সন্তান দান করবেন । তুমি তাকে সাবধানতার সহিত রক্ষনাবেক্ষণ করবে । হাশিম ব্যবসার করার জন্য গাজাতে চলে যায় এবং ফেরার রাতেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি তাঁর সঙ্গিদের বলেন , তোমরা মক্কায় ফিরে যাও এবং যাওয়ার পথে মদীনাতে যখন পৌছাবে , তখন আমার স্ত্রীকে আমার সালাম পৌছাবে এবং তাকে বলবে আমার আগত সন্তানের জন্য আমি খুবই চিন্তিত । তারপর তিনি কাগজ ও কলম চান এবং অসিয়তনামা লিখেন । যার বিষয়বস্তু ছিল তার সন্তানের রক্ষণাবেক্ষন সম্পর্কে । সূত্র – বিহারুল আনওয়ার , খন্ড ১৫ , ৫১ , ৫৩ । হযরত মূসা (আঃ) তাঁর উম্মতকে রাসুলের (সাঃ) আগমণের খবর দিয়েছিলেন । তখন থেকে ইহুদীরা রাসুলের (সাঃ) পূর্বপুরুষ এবং বংশ সম্পর্কে অবগত ছিল । কেননা তারা চেহারা শনাক্তকরণে বিশেষজ্ঞ ছিল যা তাদের পূর্বপুরুষেরা হযরত মূসা (আঃ) থেকে শিখেছিল । সুতরাং হাশিম তাদের তাদের কাছে একটি পরিচিত চেহারা ছিল এবং তারা জানত যে , হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) তার বংশ থেকেই আসবে । কিন্ত তারা হাশিমকে হত্যা করতে দেরী করে ফেলে কেননা তাঁর মৃত্যুর আগেই তার সন্তান তার স্ত্রীর গর্ভে লালিত পালিত হচ্ছিল । ২) – আব্দুল মোত্তালেব (আঃ) । হাশিমের সন্তান মোত্তালেব মদীনাতে জন্মগ্রহণ করেন । তার নামকরণ করা হয় শাইবা । হাশিমের মা তার বাবার দেয়া অসিয়ত অনুযায়ী তার রক্ষণাবেক্ষন করতে থাকেন এবং তিনি পরে আর বিবাহ করেন নাই । একদা বণী আব্দে মানাফের একজন লোক ইয়াসরাবে ব্যবসার কাজে যাওয়ার সময় দেখে যে , এক বাচ্চা খেলছে আর বলছে সে হচ্ছে হাশিমের সন্তান । সে উক্ত কথাটি মোত্তালিবকে অবগত করে । সূত্র – বিহারুল আনওয়ার , খন্ড ১৪ , ১২২ । তখন মোত্তালিব শাইবাকে গোপনে মক্কাতে নিয়ে যায় । সূত্র – বিহারুল আনওয়ার , খন্ড ১৫ , ১৫৮ । অন্য বর্ণনামতে মোত্তালিব তার মায়ের সাথে আলোচনার মাধ্যমে উক্ত কাজটি করে । সূত্র – আল জাযারি , খন্ড ২ , ৬ । যখন মোত্তালিব ও শাইবা আবার যখন ফিরে আসে তখন ইহুদীরা তাদেরকে চিনে ফেলে এবং তাদের উপরে হামলা করে । তখন তারা অলৌকিকভাবে শত্রুদের আক্রমন থেকে বেঁচে যায় । সূত্র – বিহারুল আনওয়ার , খন্ড ১৫ , ৬০ । যখন মোত্তালিব তাকে মক্কাতে নিয়ে আসে তখন জনগণ তাকে দেখে মনে করে যে , সে হচ্ছে মোত্তালিবের গোলাম এবং তারা তাকে আব্দুল মোত্তালিব (মোত্তালিবের গোলাম) বলে ডাকে এবং শেষ পর্যন্ত তিনি আব্দুল মোত্তালিব নামেই ইতিহাসে পরিচিত হন । সূত্র – বিহারুল আনওয়ার , খন্ড ১৫ , ১২৩ । পবিত্র এবং সম্মানীত পিতা – হযরত আব্দুল্লাহ (আঃ) । ইহুদীরা অনেকবার চেষ্টা করার পরেও আব্দুল মোত্তালিবকে (আঃ) হত্যা করতে পারল না । মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে হযরত আব্দুল্লাহ (আঃ) জন্মগ্রহণ করেন । হযরত আব্দুল্লাহ (আঃ) মদীনাতে জন্মগ্রহণ করেন । কিন্ত তার কবর আছে অন্য স্থানে । অতীতের মত ইহুদীরা অনেকবার হযরত আব্দুল্লাহকে (আঃ) হত্যার চেষ্টা করেছে । কিন্ত তারা প্রত্যেকবার বিফল হয়েছিল । সূত্র – বিহারুল আনওয়ার , খন্ড ১৫ , ১১০ , ৯০ । একদা ওহাব বিন আব্দে মানাফ মক্কার একজন ব্যবসায়ীর সাথে হযরত আব্দুল্লাহকে (আঃ) দেখে । তখন তাঁর বয়স ছিল ২৫ বছর । সে দেখে যে ইহুদীরা চাচ্ছিল তাকে ঘিরে ফেলে হত্যা করবে । ওহাব ভয় পেয়ে বণী হাশিমদের মাঝে যায় এবং সাহায্যে করার জন্য চীৎকার করে বলতে থাকে আব্দুল্লাহকে (আঃ) শত্রুরা মেরে ফেলল , তোমরা তাকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এস । কিন্ত হযরত আব্দুল্লাহ (আঃ) সাথে থাকা লাঠির মোজেযায় বেঁচে যায় এবং ওহাব তার সেই লাঠির মোজেযার স্বাক্ষী ছিল । সে হযরত আব্দুল্লাহর (আঃ) চেহারায় নবুওয়াতের নূরের প্রভাবকে অবলোকন করে । সে তখন হযরত আব্দুল্লাহর (আঃ) সাথে তার কন্যা আমেনার (সাঃআঃ) বিবাহের প্রস্তাব দিলে তাদের বিবাহ সংঘটিত হয় । ইতিহাসে বর্ণিত হয়েছে যে ,ইহুদীরা একজন ইহুদী নারী ধর্ম যাজককে ঠিক করে এই উদ্দেশ্যে যেন আব্দুল্লাহর (আঃ) সাথে বিবাহ দিতে পারে । এই বিবাহের ফলে রাসুল (সাঃ) যেন ঐ নারীর গর্ভ থেকে দুনিয়াতে আগমন করে । পরিকল্পনা মোতাবেক উক্ত নারীটি প্রত্যেকদিন আব্দুল্লাহর (আঃ) কাছে আসত এবং তাকে বিবাহের প্রস্তাব দিত । কিন্ত আব্দুল্লাহর (আঃ) সাথে আমেনার (সাঃআঃ) বিবাহ হয়ে গেলে উক্ত মহিলার বিবাহের পরিকল্পনা ভেস্তে গেল । একদিন হযরত আব্দুল্লাহ (আঃ) ঐ মহিলাকে জিজ্ঞাসা করে ,